ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

গৃহহীনমুক্ত উপজেলা

প্রকাশিত: ২১:৫৫, ২৩ মার্চ ২০২৩

গৃহহীনমুক্ত উপজেলা

সম্পাদকীয়

মুজিববর্ষের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে গত তিন বছরে বর্তমান সরকার সারাদেশে ভূমিহীন-গৃহহীন ১৩ লাখ ছিন্নমূল মানুষকে বিনামূল্যে নিজস্ব ঠিকানাসহ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছে, যা বাংলাদেশেই নয় বরং বিশ্বেও এক  অনন্যসাধারণ নজির হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের চতুর্থ পর্যায়ে গত বুধবার জমির মালিকানাসহ আরও ৩৯ হাজার ৩৬৫টি গৃহহীন পরিবারকে ঘর হস্তান্তর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে দেশের ৯টি জেলার ২১১টি উপজেলা সম্পূর্ণরূপে ভূমিহীন-গৃহহীন করা সম্ভব হলো। এটি বিশ্বকে তাক লাগানোর মতো একটি বিস্ময়কর ঘটনা অবশ্যই।

বিনামূল্যে নামজারিসহ দুই শতক জমিতে পরিকল্পিত বাসগৃহ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। এর পাশাপাশি ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কার্যক্রমের আওতায় পুনর্বাসিত হয়েছে আরও দুই লাখ ১৬ হাজার ৭০৪টি পরিবার। পরিবারপ্রতি পাঁচজন হিসেবে এই কার্যক্রমে এ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ জন। বাকি ২১ হাজার ৪০টি পরিবার চিহ্নিত করে তাদের পর্যায়ক্রমে পুনর্বাসনের মাধ্যমে দেশে কোনো মানুষ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে নাÑঅঙ্গীকার বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে গৃহশুমারি করে সরকার অবগত হয় ১৬ লাখ ৬৩ হাজার মানুষ তখন ছিলেন ভূমিহীন-গৃহহীন অথবা যাদের জমি আছে ঘর নেই। সেই তালিকা অনুযায়ী সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করে ঘর দেওয়া হচ্ছে পর্যায়ক্রমে। 
‘মুজিব শতবর্ষে বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’Ñ এটি বর্তমান সরকারপ্রধান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অন্যতম একটি লালিত স্বপ্ন, যেটি তিনি শতবর্ষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। ২ শতক জমির ওপর পরিকল্পিতভাবে নির্মিত দুটি ঘর, রান্না ঘর, টয়লেট। এর পাশাপাশি রয়েছে বিনোদন কেন্দ্র, পুকুর, বৃক্ষরাজিশোভিত বনায়ন, বিদ্যুৎ, পাকা সড়ক, মসজিদ ইত্যাদি।

প্রধানমন্ত্রীর এই অনন্য উপহার পর্যায়ক্রমে তুলে দেওয়া হচ্ছে সারাদেশে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহৎ আশ্রয়ণ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করেছেন বেদে সম্প্রদায়সহ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের। মুজিববর্ষে প্রতি ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার রয়েছে। 
ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বর্তমান সরকারের অন্যতম একটি অঙ্গীকার। সেটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নে সরকার বিভিন্নমুখী শিল্প ও কৃষিভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এরই ফলে গত কয়েক বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে ২০ শতাংশের নিচে। অবশ্য করোনা মহামারীর ধাক্কায় কর্মহীন থাকায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কিছু বেড়েছে। শহরের সব সুযোগ-সুবিধা যেমন- বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, জ্বালানি-শিক্ষা-স্বাস্থ্য-খাদ্য নিরাপত্তা  ইত্যাদি গ্রামে পৌঁছে দেওয়া গেলে শহরমুখী বিশেষ করে রাজধানীমুখী মানুষের স্রোত কমে যাবে নিশ্চিতভাবে।

সরকারের একটি বাড়ি একটি খামার সার্থক ও স্বনির্ভর একটি প্রকল্প। চলছে সড়ক ও নৌযোগাযোগ নেটওয়ার্কের উন্নয়নও। এবার সরকার জোর দিতে চাচ্ছে বহুমুখী গ্রাম সমবায় সমিতি গড়ে তোলার ওপর। সবার জন্য বাসগৃহ নিশ্চিত হলে জনস্বাস্থ্য হবে সুরক্ষিত ও নিরাপদ। কমবে দারিদ্র্য, দরিদ্র মানুষের সংখ্যা। সহজে সম্প্রসারিত করা সম্ভব হবে সামাজিক সেবাসমূহ।

×