ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ

নিরঞ্জন রায়

প্রকাশিত: ২১:১৭, ২২ মার্চ ২০২৩

এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ

এলডিসি (লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রি) সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশ এখন যে অবস্থায় আছে এবং আগামীতেও যেখানে থাকবে, তাতে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারলে অবাধ বাণিজ্যের সুবিধা নিয়েও বাংলাদেশ যেমন রপ্তানি বহুগুণ বৃদ্ধি করতে পারবে, তেমনি বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রার নিজস্ব তহবিলও গড়ে তুলতে পারবে। প্রচলিত রপ্তানি পণ্যের পাশাপাশি অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানির আওতায় এনে রপ্তানি আয় বহুগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব

সম্প্রতি কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত এলডিসি (লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রি) সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ দিয়েছেন। সফরসঙ্গী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ এক প্রতিনিধি দলও সেই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী যে সেখানে শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন তেমন নয়, তিনি রীতিমতো সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন এবং বিশ্বের রাজনীতি ও অর্থনীতির অনেক বিষয়ে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন, যা বিশ্ব গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এবারের এলডিসি সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ছিল মূলত বিদায়ী উপস্থিতি।

কারণ, এলডিসির সদস্য হিসেবে এটাই বাংলাদেশের শেষ অংশগ্রহণ। বাংলাদেশ আগামী ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতার চলে যাবে। আগামীতে যখন আবার এলডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে তখন বাংলাদেশ আর এলডিসির সদস্য থাকবে না। ফলে সদস্য হিসেবে সেই সম্মেলনে আর উপস্থিত থাকার প্রয়োজন হবে না। তবে, অন্য কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে উপস্থিত হতেই পারে। এসব কারণেই এবারের কাতারে অনুষ্ঠিত এলডিসি সম্মেলন ছিল বাংলাদেশের বিদায় নেওয়ার পালা। বিদায় সাধারণত বেদনাদায়ক হলেও কোনো কোনো বিদায় আনন্দের।

এলডিসি সম্মেলনে বাংলাদেশের শেষ অংশগ্রহণ ছিল সেরকম একটি আনন্দঘন বিদায়।
এলডিসি উত্তরণের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ- সবসময়ই ভালো খবরের সঙ্গে থাকে কিছু নতুন চ্যালেঞ্জ এবং প্রতিবন্ধকতা। সে কারণেই বাংলাদেশও উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাবার সঙ্গে সঙ্গে কিছু নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। তবে সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে খুব বেশি বিচলিত হবার কারণ নেই। যেটি প্রয়োজন তা হচ্ছে সময় থাকতেই সেসব চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা। যাতে কোনো চ্যালেঞ্জকেই আর চ্যালেঞ্জ মনে না হয়।

আমরা শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা বাতিল বা অল্পসুদে ঋণ পাবার চ্যালেঞ্জকে সবচেয়ে বড় করে দেখছি। কিন্তু বিশ্বে অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এমন ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে যে, শুল্কমুক্ত বাণিজ্যে এবং স্বল্পসুদের ঋণ পাবার সুযোগ এমনিতেই অনেক সংকুচিত হয়ে গেছে। বরং বাংলাদেশ এখন যে অবস্থায় আছে এবং আগামীতেও যেখানে থাকবে, তাতে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারলে অবাধ বাণিজ্যের সুবিধা নিয়েও বাংলাদেশ যেমন রপ্তানি বহুগুণ বৃদ্ধি করতে পারবে, তেমনি বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রার নিজস্ব তহবিলও গড়ে তুলতে পারবে।

প্রচলিত রপ্তানি পণ্যের পাশাপাশি অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানির আওতায় এনে রপ্তানি আয় বহুগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব। তেমনি প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে ডলার-বন্ড বিক্রি করে বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রার নিজস্ব তহবিল খুব সহজেই সংগ্রহ করা যায়। আগের একাধিক লেখায় হিসাব করে দেখিয়েছিলাম যে, বাংলাদেশ চাইলে প্রবাসীদের মাঝে ডলার-বন্ড বিক্রি করে প্রায় ১২৫ বিলিয়ন ডলার তিন থেকে পাঁচ বছর সময়ের মধ্যে সংগ্রহ করতে পারে। এই বৈদেশিক মুদ্রার ফান্ড হবে বাংলাদেশের নিজস্ব তহবিল এবং এর পরিমাণ ক্রমেই বাড়তে থাকবে। এটি কিভাবে সম্ভব তা বিস্তারিত তুলে ধরে একাধিক কলাম ইতোপূর্বে লিখেছি বিধায় এখানে পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন নেই।

রপ্তানি বহুমুখীকরণ- আমাদের দেশের রপ্তানি মূলত হাতেগোনা কয়েকটি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে তৈরি পোশাক অন্যতম। একটি দেশের রপ্তানি হাতেগোনা কয়েকটি পণ্যের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল থাকা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। এতে রপ্তানি আয় তথা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষ করে উন্নত বিশ্বে অপ্রচলিত পণ্যের বিশাল বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমাদের দেশ খুব সহজেই পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি করতে পারে।

আমেরিকা-কানাডাসহ উন্নতবিশ্বের দেশগুলোতে এখন অনলাইন কেনাকাটার রমরমা অবস্থার কারণে কাগজের ব্যাগ এবং কার্টন বক্সের ব্যাপক চাহিদা আছে যার অধিকাংশ মেটানো হয় তাইওয়ান এবং ভিয়েতনাম থেকে। আমদানিকারকরা সবসময় এসব পণ্যের সরবরাহে বিঘœ ঘটার ঝুঁকির মধ্যে থাকে দু-একটি দেশের ওপর নির্ভর করার কারণে। একইভাবে পশ্চিমা বিশ্ব পরিবেশের জন্য হুমকি হওয়ায় প্লাস্টিক ব্যাগ উঠিয়ে দিতে শুরু করলেও এর বিকল্প পরিবেশবান্ধব কোনো ব্যাগ সেভাবে বাজারে আসেনি।

অথচ পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যাগ হতে পারে এর ভালো বিকল্প, যা বাংলাদেশের একচেটিয়া বাজার হতে পারে। একইভাবে কিছু সবজি, ফলমূল, গুঁড়া মসলা এবং বেকারি পণ্যের বিশাল বাজার আমেরিকা-কানাডাসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সৃষ্টি হয়েছে। একথা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, শুধু আমাদের বা আমাদের প্রতিবেশী দেশের নাগরিকরাই এসব পণ্যের ভোক্তা। মূলত আফ্রিকা, ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান অঞ্চল এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা নাগরিকরাই এসব পণ্যের প্রধান গ্রাহক, যা বর্তমানে একটি বিশাল বাজার।

আমাদের দেশে উৎপাদিত এসব পণ্য এখানকার বাজারের পণ্যের চেয়ে অনেক উন্নতমানের। ফলে বাংলাদেশ এসব পণ্যের মার্কেট খুব ভালোভাবেই ধরতে পারে। ফলে দেশের রপ্তানি আয় বহুগুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে। তবে এক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য এবং সরবরাহ ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি ভিন্ন প্রসঙ্গ বিধায় অন্য পরিসরে আলোচনার ইচ্ছা রইল।     
বাণিজ্যের ধরনে পরিবর্তনÑ একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পণ্যের মূল্য এবং ন্যূনতম মান হচ্ছে প্রধান চালিকা শক্তি। যতদিন বাংলাদেশ অল্পমূল্যে এবং ন্যূনতম মানসম্পন্ন পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করতে পারবে, ততদিনই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশী পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকবে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক লেনদেনের ধরনে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে উন্নত বিশ্বের আমদানিকারকরা এখন আর এলসি দিয়ে পণ্য আমদানি করে না।

উল্টো রপ্তানিকারকরা নিজ উদ্যোগে পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করে বিদেশের আমদানিকারকদের গুদামে পৌঁছে দিয়েই ক্ষান্ত হয় না, অনেক ক্ষেত্রে আমদানিকারকের বিক্রয়কেন্দ্রে পর্যন্ত সাজিয়ে দিয়ে আসে। অথচ আমাদের দেশের রপ্তানিকারকরা এখনো বসে থাকে যে, কখন বিদেশের আমদানিকারক কোম্পানি তাদের কাছে এলসি পাঠিয়ে পণ্য প্রেরণের অনুরোধ জানাবে। সেদিন এখন শেষ হওয়ার পথে। আগামীতে যখন বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হবে, তখন এই সুবিধা একেবারেই শেষ হয়ে যাবে। তাই আমাদের ব্যবসায়ীদের এখন থেকেই তাদের রপ্তানি বাণিজ্যে পরিবর্তন আনতে হবে।

নিজ উদ্যোগে নিজেদের পণ্যের মার্কেটিং করতে হবে, সরবরাহ আদেশ সংগ্রহ করতে হবে এবং প্রয়োজনে আমদানিকারকের গুদামে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এই কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করতে হলে প্রয়োজনে উন্নত বিশ্বে তাদের অফিস ও প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা চাইলে খুব সহজেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এরকম বাণিজ্য করতে পারেন। কারণ, তাদের অধিকাংশের নিকট আত্মীয় আমেরিকা-কানাডাসহ উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করে।

তাদের মাধ্যমে সেখানে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে খুব সহজেই বাংলাদেশী পণ্যের বাজারজাত করা সম্ভব। উল্লেখ্য, বাংলাদেশী কোম্পানির চেয়ে আমেরিকা বা কানাডার কোনো কোম্পানি অনেক সহজে এবং অধিকতর লাভে পণ্য সরবরাহের সুযোগ থাকবে। আমাদের প্রতিবেশী দেশের অনেক কোম্পানি এবং এমনকি আমাদের দেশের প্রাণ এভাবেই আমেরিকা, কানাডার মূলধারার বাজারে তাদের পণ্য বাজারজাত করছে।  
প্রবাসীদের কাজে লাগানোÑ ক্রমান্বয়ে প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশীদের দেশে উৎপাদিত পণ্য তাদের দেশে বাজারজাত করার কাজে নিয়োজিত করতে হবে। এটি করতে পারলে, দেশের অপ্রচলিত পণ্যের রপ্তানি বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। যদি সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা এক লাখ প্রবাসী বাংলাদেশীকে অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানির কাজে নিয়োজিত করা যায় এবং প্রত্যেকে যদি গড়ে বছরে ৫ লাখ ডলারের পণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করতে পারে, তাহলে বছরে অপ্রচলিত পণ্যের রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার।

সমগ্র বিশ্বে প্রবাসী বাংলাদেশীর সংখা এক কোটির বেশি এবং তাদের অধিকাংশই অনেক কষ্টকর কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন। এমনকি আমেরিকা- কানাডাসহ উন্নত বিশ্বেও যারা বসবাস করছেন, তাদের অনেকেই সামান্য উপার্জনে কষ্টের কাজই করছেন। অথচ একটু তৎপর হলেই প্রবাসীরা দেশের অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানির কাজে নিয়োজিত হয়ে ভালো উপার্জন করতে পারে এবং সেইসঙ্গে দেশের উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে। সঠিক দিকনির্দেশনা, পরামর্শ এবং অনুপ্রেরণা দিতে পারলে এই কাজে নিয়োজিত হওয়ার মতো প্রবাসী বাংলাদেশীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ থেকে দশ লাখ হবে। এ কাজে বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন ও এম্বাসির ভালো ভূমিকা রাখতে হবে। তারা আগ্রহী এবং যোগ্য প্রবাসীদের এই কাজে নানা পরামর্শ দিয়ে উৎসাহিত করতে পারে।

এই ধরনের অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানিকে ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে তাদের নিয়মনীতি সহজ করতে হবে। সেকেলে বৈদেশিক বাণিজ্য নীতি এবং ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন দিয়ে এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তাই অতিদ্রুত এই বিধিবিধানের আধুনিকায়ন করে একে ক্ষুদ্র ও আত্মকর্মসংস্থান ভিত্তিক রপ্তানিবান্ধব করতে হবে সবার আগে। উল্লেখ্য, আমাদের প্রতিবেশী দুই বৃহৎ দেশের প্রবাসীরা এভাবে শত শত বিলিয়ন ডলারের অপ্রচলিত পণ্যের রপ্তানি করছে। এখানকার বিক্রয়কেন্দ্রগুলো সেই দুটো দেশের পণ্যে সয়লাব। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সেসব পণ্যের তুলনায় আমাদের দেশের অনেক পণ্যের গুণগতমান যথেষ্ট উন্নত। তাহলে আমাদের দেশের প্রবাসীরা পারবে না কেন?
শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থাÑ একথা অনস্বীকার্য যে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিকে ত্বরান্বিত এবং টেকসই করতে হলে দেশের ব্যাংকিং খাতের মান উন্নতির কোনো বিকল্প নেই। কারণ, ব্যাংকিং খাতকে অর্থনীতির রক্ত সঞ্চালনের ধমনির সঙ্গে তুলনা করা হয়। দুর্বল ব্যাংকিং খাতের জন্য যেমন শক্তিশালী অর্থনীতিও ধাক্কা খেতে পারে, আবার শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থার কারণে ছোট অর্থনীতিও ভালো উন্নতি করতে পারে। এ রকম উদাহরণ অনেক আছে। ইউরোপের একটি বৃহৎ অর্থনীতির দেশ জার্মানিকে তাদের ব্যাংকিং খাতের সমস্যা হওয়ার কারণে ভালো ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে।

আবার ইউরোপের ছোট অর্থনীতির দেশ স্পেন ভালো ব্যাংকিং ব্যবস্থার কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতেরও ব্যাংকিং খাতে কিছু বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং সেখানেও অনেক ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে যে ধীরগতি তার অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলা।

এ কারণেই ভারত সরকার বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বেইল-আউট প্যাকেজ প্রদান করে এবং ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত যারা বিদেশে পালিয়েছিল, তাদের ধরে এনে বিচারের মুখোমুখি করে দেশের ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিকে ধরে রাখতে হলে শক্তিশালী ব্যাংকিং খাত নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে। এই মন্ত্রটি চীন খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে। বর্তমান বিশ্বের চীনের অধিকাংশ ব্যাংক সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থায় আছে, যদিও সেগুলো সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক। 
একথা স্বীকার করতেই হবে যে, এলডিসি উত্তরণের ফলে আমাদের কিছু নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু চ্যালেঞ্জের চেয়ে সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে। কারণ, ধনীরা গরিব মানুষের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে পছন্দ করলেও, স্থায়ী সখ্য গড়ে তোলে তাদের সমকক্ষ বা কাছাকাছি মাপের মানুষের সঙ্গে। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করায় বাংলাদেশের সেই স্থায়ী সখ্য গড়ে তোলার ভালো সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই সুযোগ কাজে লাগানো এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পরিবর্তিত ব্যবস্থার সঙ্গে নিজেদের ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিয়ে দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করতে হবে। যাতে করে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরের ট্র্যানজিশনটা মসৃণ এবং নির্বিঘ্ন হয়।

লেখক : সার্টিফাইড অ্যান্টি-মানিলন্ডারিং স্পেশালিস্ট ও ব্যাংকার, টরন্টো, কানাডা
[email protected]

×