
.
বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদে ২০২৩ সালের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ প্রদান করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। যা ছিল দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শেষ ভাষণ। রাষ্ট্রের অভিভাবকসুলভ দিকনির্দেশনামূলক আন্তরিক ভাষণে মূল্যবান মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন তিনি। রাষ্ট্রপতি আশাবাদ জানিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতি এগিয়ে যাবে সোনার বাংলার পথে। প্রায় ৩০ মিনিটের ভাষণে রাষ্ট্রপতি বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন, সফলতা ও অগ্রগতিগুলো তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রপতির ভাষণ অখন্ড মনোযোগের সঙ্গে পাঠ করলে দেশবাসীর সামনে অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, দেশের অগ্রযাত্রার প্রতিটি বিষয় এবং সমাজের বাস্তব তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং বিন্দুতে সিন্ধু ধারণের মতো ভাষণে সন্নিবেশিত করেছেন। সরকার তার ওপর পূর্ণ আস্থাশীল ছিল বলেই টানা দুটি মেয়াদে তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অভিভাবক যেমন পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের প্রতি মমতার দৃষ্টি দিয়ে তার জীবনধারাকে সহজ ও সমৃদ্ধ করেন, জাতির অভিভাবক হিসেবে দেশবাসী তার কাছ থেকে অনুরূপ যত্নশীল আচরণ লাভ করেছেন।
করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধপরবর্তী বৈশ্বিক সংকটের কথা তুলে ধরেছেন রাষ্ট্রপতি। তাঁর ভাষায়, জাতীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ আমরা অতিবাহিত করছি। ২০২২ সাল আমাদের জন্য ছিল চ্যালেঞ্জের বছর। সমগ্র বিশ্বই পার করছে এক কঠিন সময়। করোনা অতিমারি আমরা সফলভাবে মোকাবিলা করে অর্থনীতির গতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হলেও রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ আমাদের এই অগ্রযাত্রাকে শ্লথ করেছে। তারপরও ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর হবে জানিয়ে রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে বলেন, বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২’ উৎক্ষেপণের বিষয়টি রয়েছে চূড়ান্ত পর্যায়ে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে মাস্টার প্ল্যান, আইন, নীতিমালা ও স্ট্র্যাটেজি প্রণয়নসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সবার ঊর্ধ্বে জনগণ। এর মাধ্যমে তিনি দেশপ্রেম ও দেশের মানুষের প্রতি অঙ্গীকারবোধের বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছেন। দেশকে প্রকৃত অর্থে ভালোবাসলে ক্ষুদ্রতা সংকীর্ণতা চাপা পড়ে যায়। দেশপ্রেমই গড়ে দিতে পারে জাতীয় ঐক্য। আর এই ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হলে একদিন স্বপ্নের সেই সোনার বাংলা বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে অবশ্যই।
রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে বিশ্বনেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যার সুদূরপ্রসারী-সুচিন্তিত পরামর্শ ও পদক্ষেপ বহির্বিশ্বে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে বলে জানায়। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য প্রদান, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির প্রজ্ঞাময় বক্তব্য জাতিকে একদিকে যেমন নিজেদের উন্নত অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করবে, তেমনি ভবিষ্যতে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিরলসভাবে আত্মনিবেদনের প্ররণা যোগাবে।