ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৮ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ব্যয় সংকোচন

-

প্রকাশিত: ২১:১৬, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২

ব্যয় সংকোচন

সম্পাদকীয়

সর্বতোভাবে কৃচ্ছ্্রসাধনের নীতি হিসাবে সরকার এবার ব্যয় সংকোচনের পথে হাঁটছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য স্বস্তিদায়ক এবং জনসাধারণের জন্য কল্যাণকর হয়ে উঠতে পারে বলে অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের অভিমত। সম্প্রতি জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পরিচালন বাজেট বরাদ্দ থেকে ভূমি অধিগ্রহণ, ভবন নির্মাণ ও স্থাপনার জন্য নতুন ক্রয়াদেশ এবং মূলধন যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ক্রয় পুরোপুরি স্থগিত থাকবে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ রাষ্ট্রমালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাজেট বরাদ্দ থেকে স্থগিত থাকবে ব্যয়- এই তিন খাতে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থের সাশ্রয় হতে পারে, যা ব্যয় করা হবে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য আমদানিসহ জনকল্যাণের নিমিত্তে। অবশ্য সরকার এর আগেও ব্যয় সংকোচনে অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। যেমন- চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দকৃত এক হাজার ৪৮৭টি প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ বি ও সি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে অর্থ বরাদ্দ ও ব্যয় সীমিত অথবা স্থগিত করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ-গ্যাস-জ্বালানির দাম বাড়ানোসহ বিভিন্ন খাতে কমিয়েছে ভর্তুকির পরিমাণ। ফলে, সরকারের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমে আসবে, মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাবে এবং নিত্যপণ্যের দামে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত।
কোভিড-১৯ অতিমারিউত্তর দীর্ঘমেয়াদি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী দেখা দিয়েছে জ্বালানি তেল-গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির সমস্যা।

আশার কথা এই যে, জনবান্ধব সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং জনদুর্ভোগ সম্পর্কে সবিশেষ সচেতন ও দায়িত্ববান। সম্প্রতি তিনি গণভবনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সিনিয়র সচিবদের বলেছেন, জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। এর জন্য নিত্যপণ্যের বাজারে ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। নিত্য পণ্যের দাম বাড়াতে ব্যবসায়ীদের কোনো কারসাজি থাকলে তাও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে কঠোরভাবে। জীবন ধারণের নিমিত্ত নিত্যপণ্যের আমদানিতে দ্রুত এলসি (ঋণপত্র) নিষ্পত্তিসহ ডলার ছাড়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

অন্যদিকে, ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য ৩৪০টি বিলাস পণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কৃচ্ছ্রসাধনে এখন থেকে সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশ সফর করতে পারবেন না। আসন্ন নতুন বছরের জানুয়ারি নাগাদ পরিস্থিতি সহনশীল ও স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। নিত্য ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে। সে অবস্থায় জিনিসপত্রের দাম তাদের জন্য সহনীয় করে তুলতে হবে। এর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক পবিত্র রমজান উপলক্ষে ৮টি নিত্যপণ্য বাকিতে আমদানির সুযোগ করে দিয়েছে ব্যবসায়ীদের। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ২০২৩ সালে একটি বড় দুর্ভিক্ষ হতে পারে বিশ্বে। অর্থনৈতিক মন্দা যখন আরও গভীর হবে, দেখা দিতে পারে খাদ্য সংকট। সে পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে দেশের এক ইঞ্চি জমিও ফেলে রাখা যাবে না। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে দিতে হবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

×