বর্ষাকালে বৃষ্টি হবে এটা স্বাভাবিক। রাজধানী ঢাকার জলাশয়গুলো ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণের কারণে বৃষ্টির সময় সড়কে জলাবদ্ধতা সাধারণ চিত্র হয়ে উঠেছে। একদিকে বৃষ্টিধারা অন্যদিকে জলাবদ্ধতায় যোগাযোগ সঙ্কট-এর ভেতরে আবার যদি উন্নয়ন কাজের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলে তবে জনদুর্ভোগ কোন্ চরম অবস্থায় গিয়ে ঠেকে, তা ভাল জানেন ভুক্তভোগী ঢাকাবাসী। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নীতিমালা অনুযায়ী বর্ষা মৌসুমে রাজধানীর সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি নিষিদ্ধ। কিন্তু এখন রাজধানীর কিছু এলাকায় চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। ড্রেনেজ লাইনের পাইপ পরিবর্তন করার মতো কিছু কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি শুষ্ক মৌসুমে করাই সঙ্গত। অথচ অসময়ে বর্ষায় চলছে এই কর্মযজ্ঞ। এর আগে দেখেছি আন্তঃসংস্থা অর্থাৎ ডিসিসি, ঢাকা ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) মিলিতভাবে সভায় বসে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এবার তা হয়নি।
বাংলাদেশের অর্থবছর শুরু হয় জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে। শেষ হয় ৩০ জুন। নতুন অর্থবরাদ্দ পেয়ে সংস্থাগুলো নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু করার সময় থাকে ভরা বর্ষা মৌসুম। তেমনি আবার নানা সঙ্কটে বিদায়ী অর্থবছরের কাজ শেষ করতে না পারায় অসমাপ্ত কাজ শেষ করায়ও তাড়াহুড়ো লক্ষ্য করা যায় বর্ষার শুরুতে। অথচ এই বর্ষার সময়ে সব ধরনের নির্মাণ ও অবকাঠামোগত কাজ করা মানেই একদিকে লোকসান, অন্যদিকে ভোগান্তি। একটি গোটা অর্থবছর থেকে তো বর্ষা ঋতুকে বিদায় করা যাবে না। তাই বর্ষাকালকে সমন্বয় করেই উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে হবে। বাদবাকি মাসগুলো অর্থাৎ বিশেষ সাবধানতার খাতিরে তিন মাস বাদ দিয়ে বছরে মোট নয় মাস এ ধরনের কাজ পুরোদমে চালিয়ে নেয়াটাই সমীচীন। এজন্য অর্থবছর জুন থেকে এগিয়ে আনলে সুবিধেই হবে। দেশভেদে বাজেট পেশের সময় ভিন্ন। চীন, ব্রাজিল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, স্পেনে অর্থবছর শুরু হয় ১ জানুয়ারি আর শেষ হয় ৩০ ডিসেম্বর। ভারত, ইংল্যান্ড, হংকং, কানাডা এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় অর্থবছর শুরু হয় ১ এপ্রিল, শেষ হয় ৩১ মার্চ। যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডে অর্থবছর শুরু হয় ১ অক্টোবর, শেষ হয় ৩০ সেপ্টেম্বর। অবশ্য বাংলাদেশের মতো ১ জুলাই অর্থবছর শুরু করে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড।
বাংলাদেশের রয়েছে নিজস্ব বাংলা সন ও পঞ্জিকা। বাংলা নববর্ষ শুরু হয় ১ বৈশাখ তথা ১৪ এপ্রিল থেকে। কাজে গতি আনা ও বর্ষা মৌসুমে খোঁড়াখুঁড়ি এবং অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ এড়ানোর জন্য জুনের পরিবর্তে অর্থবছর দুয়েক মাস এগিয়ে আনার বিষয়টি যুক্তিযুক্ত বলেই মনে হয়। সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে বলা যেতে পারে আমাদের অর্থবছর আমাদেরই বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে শুরু হতে পারে। সেক্ষেত্রে চৈত্র মাসে জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করে বছরের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তির দিন বাজেট পাস করিয়ে নেয়া যেতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম নেয়া আমাদের এই দেশটির সবচেয়ে বড় সর্বজনীন উৎসব হয়ে উঠেছে বাংলা নববর্ষ উৎসব। পহেলা বৈশাখে দেশবাসী আনন্দের সঙ্গে আগ্রহ উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। এই বিশেষ দিন থেকে অর্থবছর শুরু হলে সেটা একদিকে যেমন কর্মসক্রিয়তায় সহায়ক হবে, তেমনি অসময়ে কর্ম সম্পাদনের তাগিদে অর্থ অপচয় রোধ করা যাবে। এতে নিশ্চিতভাবে মানুষের দুর্ভোগ কমবে। আমরাও পরম গৌরবের সঙ্গে বলতে পারব, আমাদের অর্থবছর আমাদের নববর্ষের সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং তা বিশ্বে বিশেষভাবে দৃষ্টান্তমূলক।
শীর্ষ সংবাদ: