
ছবি: সংগৃহীত।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে হামলার সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তান দূরপাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে কাজ করছে—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন। ফরেন অ্যাফেয়ার্স ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই সম্ভাবনার উল্লেখ থাকায় বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে মার্কিন প্রশাসন।
বিশ্ব রাজনীতির প্রতিটি বড় সংঘাতে যেভাবে যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়ছে—রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, তাইওয়ান ইস্যু কিংবা ইসরায়েলের আগ্রাসন—তা দেখে অনেক দেশই নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। পাকিস্তানও এর ব্যতিক্রম নয়। অতীতে দেশটি কেবল ভারতকে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হিসেবে ধরে কৌশল নির্ধারণ করলেও এবার যুক্তরাষ্ট্রকেও পরোক্ষভাবে প্রতিরোধ সক্ষমতার পরিসরে রাখছে বলে ধারণা মার্কিন গোয়েন্দাদের।
ওয়াশিংটনের মূলভূখণ্ডই টার্গেটে?
মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, পাকিস্তান এমন একটি আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (ICBM) কর্মসূচিতে এগোচ্ছে, যা ১১,২০০ কিলোমিটার দূরের ওয়াশিংটন ডিসিতেও আঘাত হানতে সক্ষম হবে। এই প্রযুক্তি অর্জিত হলে পাকিস্তান কেবল আঞ্চলিক পরাশক্তি নয়, বরং একটি পূর্ণমাত্রার পারমাণবিক প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।
যদিও পাকিস্তান সরকার বরাবরই বলে আসছে, তাদের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি কেবল ভারতের হুমকি প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু মার্কিন বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান উন্নয়নের গতি ও প্রযুক্তি দেখে স্পষ্ট যে, এই ব্যাখ্যার বাইরেও Islamabad-এর বৃহৎ কৌশলগত লক্ষ্য রয়েছে।
চারটি মূল বার্তা
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে পাকিস্তানের এই উদ্যোগ চারটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে:
১. প্রতিরোধমূলক সক্ষমতা বৃদ্ধি: যুক্তরাষ্ট্র যেন ভবিষ্যতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে না পারে, সে জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
২. দক্ষিণ এশিয়ায় ভারসাম্য রক্ষা: ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র যাতে একতরফাভাবে ভারতের পক্ষে না দাঁড়ায়, সে জন্য চাপ সৃষ্টি।
৩. নতুন প্রতিপক্ষের আবির্ভাব: উত্তর কোরিয়া ও ইরানের পর এবার পাকিস্তানও যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক হুমকির তালিকায় যুক্ত হচ্ছে।
৪. চীন-রাশিয়া ঘনিষ্ঠতা: পাকিস্তানের এই পদক্ষেপ পশ্চিমা জোটের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং চীন-রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত ঐক্য জোরদারের ইঙ্গিত বহন করে।
পাকিস্তানের পরমাণু সক্ষমতা
১৯৯৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে পাকিস্তান। বর্তমানে দেশটির হাতে রয়েছে প্রায় ১৬৫টি পারমাণবিক ওয়ারহেড। এসবের মধ্যে রয়েছে কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র, যা তাৎক্ষণিক যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য তৈরি। উল্লেখ্য, পাকিস্তান এখনও পরমাণু বিস্ফোরণ নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে (CTBT) স্বাক্ষর করেনি।
মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গি
ওয়াশিংটনের দৃষ্টিতে, যেকোনো রাষ্ট্র যদি এমন অস্ত্র তৈরি করে যা যুক্তরাষ্ট্রের মূলভূখণ্ডে হানা দিতে পারে, তবে সেই রাষ্ট্র বন্ধুর তালিকায় থাকতে পারে না। পেন্টাগনের মতে, “আপনি যদি এমন কোনো অস্ত্র তৈরি করেন যা আমাদের ঘরে ঢুকতে পারে, তাহলে আপনি আর বন্ধু নন, আপনি প্রতিপক্ষ।”
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক কৌশল একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখে—রাশিয়ার অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নীতির দুর্বলতা, চীনের দ্রুত অস্ত্রভাণ্ডার বৃদ্ধি, উত্তর কোরিয়া ও ইরানের পরমাণু কার্যক্রম—তার ওপর নতুন করে পাকিস্তানও যুক্ত হওয়ায় উদ্বেগ আরও বাড়ছে।
নুসরাত