ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

দলীয়করণ ঠেকাতে পিএসসি গঠন প্রক্রিয়া সংস্কার হচ্ছে

জনকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ২২ জুন ২০২৫

দলীয়করণ ঠেকাতে পিএসসি গঠন প্রক্রিয়া সংস্কার হচ্ছে

.

প্রশাসনে দলীয়করণ ঠেকাতে বেশকিছু উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। সবার আগে সংস্কার করা হবে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগদাতা সংস্থা পাবলিক সার্ভিস কমিশনে (পিএসসি)। এখন থেকে দলীয় সিদ্ধান্তের পরিবর্তে পিএসসি গঠিত হবে একটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে, দলনিপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে। ফলে সরকারি দলের অযোগ্য কর্মীদের চাকরিতে পুনর্বাসন করার পথ বন্ধ হবে।
পাশাপাশি পরিবর্তন আসবে বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাসেও। সরকারি কর্মকর্তাদের মনোভাবের পরিবর্তন আনতে তাদের মাথা থেকে ‘ক্যাডার’ শব্দটি মুছে দেওয়া হবে। নিয়োগ দেওয়া হবে বিশেষ ‘সার্ভিস’-এ জনগণের সার্ভেন্ট হিসেবে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে উঠে আসা এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট অংশ। বিসিএস পরীক্ষার বর্তমান সিলেবাসকে স্কুলের সিলেবাস মন্তব্য করেন কমিশন।
জানা যায়, ৫ আগস্টের নজিরবিহীন অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসন সংস্কারের উদ্দেশ্যে যেসব কমিশন গঠন করে তার একটি ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন’। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত ১১ সদস্যের এ কমিশন চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ‘সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন’ নামে ২০৯ পাতার যে প্রতিবেদন জমা দেন সেখানে উঠে এসেছে এসব সুপারিশ।
সমন্বিত ক্যাডার সার্ভিসের সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যে ক্যাডার সার্ভিসের ধারণা রয়েছে তার সংষ্কার প্রয়োজন। ‘ক্যাডার’ পরিভাষাটির মধ্য দিয়ে নানাবিধ বৈষম্য ও অভিযোগের উপলক্ষ তৈরি হচ্ছে। সমাজে একটা বিশেষ সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি হচ্ছে। নাগরিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের প্রয়োজনে যে বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সার্ভিস থাকা দরকার ক্যাডার নামকরণে তা প্রতিফলিত হয় না। সুতরাং সার্ভিসগুলোর নামকরণও তার স্বব্যাখ্যাত হওয়া উচিত। যেমন বাংলাদেশ পররাষ্ট্র সার্ভিস, বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস, বাংলাদেশ প্রশাসনিক সার্ভিস, বাংলাদেশ শিক্ষা সার্ভিস, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস ইত্যাদি। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং ডিজিটাল গভর্ন্যান্সের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবিলায় নতুন পরিষেবা হিসেবে আইসিটি এবং সাইবার নিরপত্তা পরিষেবা চালু করা উচিত। দক্ষ ও কার্যকর জনসেবা প্রদানের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের আধুনিক প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সিভিল সার্ভিসকে উন্নত করা প্রয়োজন। কারিগরী পদগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া উচিত; কারণ বর্তমান ব্যবস্থায় প্রশাসন ক্যাডারের অনুকুলে বেশি সুযোগ-সুবিধা তুলনামূলকভাবে বেশি রয়েছে বলে অন্যান্য সার্ভিস থেকে অভিযোগ করা হয়। এই ধারনার পরিপ্রেক্ষিতে ডাক্তার এবং ইঞ্জিনিয়ারদের মতো পেশাদারদের প্রশাসন ক্যাডারে যোগদানে আকৃষ্ট করে। ফলশ্রুতিতে উল্লেখযোগ্যভাবে সরকারি সম্পদ ও দক্ষতার অপচয় ঘটে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশন পুনর্গঠন সংক্রান্ত সুপারিশে কমিশন বলেন, সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সরকারদলীয় লোকদের দিয়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন এবং সরকার দলীয় অযোগ্য যুব ও ছাত্রদের চাকরিতে যোগদানের সুযোগ রহিত করতে হবে। এজন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠনের জন্য একজন বিচারপতির নেতৃত্বে নির্দলীয় ও গ্রহণযোগ্য লোকদের নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এভাবে গঠিত সার্চ কমিটি স্বাধীনভাবে বিবেচনা করে জ্ঞানী, অভিজ্ঞ এবং নিরপেক্ষ লোকদের নিয়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন করবেন। পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান করতে হবে।
বাংলাদেশের সংবিধানে একাধিক পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠনের বিধান রয়েছে উল্লেখ করে সুপারিশে বলা হয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে দু’টো পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন করা হয়েছিল। একটি ক্যাডার সার্ভিসের জন্য এবং অপরটি নন-ক্যাডার সার্ভিসের জন্য। পরবর্তীতে দু’টোকে একীভূত করা হয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রজাতন্ত্রের কর্মে জনবল নিয়োগের জন্য এখন একাধিক পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। কারণ শিক্ষা সার্ভিস ও স্বাস্থ্য সার্ভিসের বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতি অন্যান্য সার্ভিস থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের। তাদের পরীক্ষা ও প্রশ্নের ধরনও আলাদা। তাই পৃথক পৃথক সার্ভিস কমিশন গঠন করা অধিকতর যুক্তিসঙ্গত।
মেধাভিত্তিক নিয়োগ ও বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাস প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিযোগিতামূলক বিসিএস পরীক্ষাকে মনে করা হয় মেধাভিত্তিক সিভিল সার্ভিস গড়ার প্রধান হাতিয়ার। সেমতে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের দেশের অন্যতম মেধাবী সন্তান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে অনেকেই মনে করেন যে, বর্তমানে বিসিএস-এর মূল লিখিত পরীক্ষায় যে সিলেবাস রয়েছে তা দিয়ে কোনোভাবেই প্রার্থীদের প্রকৃত মেধা যাচাই করা সম্ভব নয়। উদাহরণস্বরূপ, সাধারণ ক্যাডারদের জন্য বর্তমানে বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসটিতে অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহ হলো (১) সাধারণ বাংলা দুই পেপার ২০০ নম্বর, (২) সাধরণ ইংরেজি দুই পেপার ২০০ নম্বর, (৩) বাংলাদেশ বিষয়াবলি (Affairs) দুই পেপার ২০০ নম্বর, (৪) আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী এক পেপার ১০০ নম্বর, (৫) গাণিতিক যুক্তি এবং মানসিক সামর্থ্য এক পেপার ১০০ নম্বর এবং (৬) সাধারণ বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি এক পেপার ১০০ নম্বর।
বিসিএস পরীক্ষার বর্তমান সিলেবাসকে স্কুলের সিলেবাস মন্তব্য করে এতে বলা হয়, বর্তমানে বিসিএস-এর লিখিত পরীক্ষায় ৬টি বিষয়ে ৯টি পেপারের অধীনে মোট ৯০০ নম্বরের পরীক্ষা নেয়া হয়। এ সবগুলো বিষয় বা পেপারই আবশ্যিক (Compulsory)। এর বাইরে সাধারণ ক্যাডারের জন্য বর্তমান বিসিএস সিলেবাসে কোনো ঐচ্ছিক (Elective) বিষয় নেই। টেকনিকাল ক্যাডারসমূহের জন্যও প্রায় অনুরূপ সিলেবাস রয়েছে, তবে তাদের সিলেবাসে ক্যাডার সংশ্লিষ্ট ও বিষয়ভিত্তিক দু’টো অতিরিক্ত পেপার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং সাধারণ ক্যাডারদের জন্য প্রযোজ্য ‘সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে। সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, বর্তমানের বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাসটি বলতে গেলে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার সিলেবাসের সমতুল্য। তার অর্থ বর্তমান বিসিএস সিলেবাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করা হয় এমন বুদ্ধিবৃত্তিক বিষয়, যেমন- ইংরেজি সাহিত্য, ইতিহাস, অর্থনীতি, সমাজ বিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, লোক প্রশাসন, হিসাব বিজ্ঞান, ফাইন্যান্স, রসায়ণ, পদার্থ বিদ্যা, মেডিকেল সায়েন্স, প্রকৌশলবিদ্যা ইত্যাদি বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সুতরাং মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ের সিলেবাসে পরীক্ষা নিয়ে বিসিএস চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হলে তা দ্বারা কীভাবে মেধাভিত্তিক সিভিল সার্ভিস গঠন করা সম্ভব সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তাছাড়া, বর্তমান বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাসকে ধারণা করা হয়, বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী তথা ডাক্তার, প্রকৌশল ও কৃষি বিজ্ঞান পড়‍ুয়া ছাত্রদের জন্যই বেশি সহায়ক।
উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, ১৯৭৯ সালে সুপিরিয়র পোষ্ট পরীক্ষা এবং ১৯৮২ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাস অনেক সমৃদ্ধ ও বিস্তৃত ছিল। সেই পরীক্ষার সিলেবাসে বর্তমান সিলেবাসের সকল বিষয় তো ছিলই, তার বাইরে বিসিএস পরীক্ষার্থীদেরকে আবশ্যিক বিষয় হিসেবে একটি বাংলা এবং একটি ইংরেজী রচনা লিখতে হতো (প্রতিটি ১০০ নম্বরের)। আবশ্যিক এসব বিষয়ের বাইরে বিসিএস পরীক্ষার্থীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করা হয় এমন আরো তিন বা ততোধিক বিষয়ের অধীন অতিরিক্ত মোট ছয়টি (৬) পেপারে (প্রতিটি ১০০ নম্বরের) বিসিএস পরীক্ষা দিতে হত। অর্থাৎ ১৯৮২ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাসে ১৩টি পেপারে ১৩০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার বিধান ছিল; এর মধ্যে সাতটি (৭) ছিল আবশ্যিক বিষয় এবং ছয়টি (৬) ঐচ্ছিক বিষয়। সে সময় বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাসে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছয়টি (৬) ঐচ্ছিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকায় একজন বিসিএস পরীক্ষার্থীকে তার নিজের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের বাইরে আরও অন্তত তিন থেকে চারটি অতিরিক্ত বিষয়ে পড়াশুনা করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হতো। কারণ কোনো একটি একাডেমিক গ্রুপ হতে সর্বোচ্চ দুটি ঐচ্ছিক পেপার নেয়া যেত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত নিজের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের বাইরে আরও অন্তত দুই/ তিনটি বিষয়ে যথেষ্ঠ জ্ঞান বা পড়াশোনা না থাকলে তখন বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব ছিল না। তা ছাড়া প্রতিটি ৩ ঘন্টার পরীক্ষায় যারা বাংলা ও ইংরেজিতে দু’টো আনসিন (Unseen) বিষয়ে রচনা লিখতে পারেতন, তারাই কেবল বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারতেন। তা ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় মানের বিস্তৃত বিষয়াবলি বিসিএস সিলেবাসে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে যুক্ত করায় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কেবলমাত্র প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীরাই সে সময় বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারতেন। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশীয় অন্য দুটি বড় দেশ পাকিস্তান ও ভারতের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার বর্তমান সিলেবাস পর্যালোচনা করা যেতে পারে। পাকিস্তানের ফেডারেল সিভিল সার্ভিসের মূল লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসে প্রতিটি ১০০ নম্বরের ৬টি আবশ্যিক (Compulsory) বিষয় এবং ৬টি ঐচ্ছিক (Elective) বিষয় রয়েছে। অর্থাৎ মোট ১২০০ নম্বরের ১২টি বিষয় বা পেপারে সে দেশের সিভিল সার্ভিস প্রার্থীদেরকে পরীক্ষায় বসতে হয়। অপরদিকে, ভারতের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার সিলেবাসে ৫টি আবশ্যিক বিষয়ে, দ’ুটি ঐচ্ছিক (Optional) বিষয়ে এবং দু’টি যোগ্যতা অর্জন বিষয়ে(Qualifying Papers) পরীক্ষা দিতে হয়। আবশ্যিক এবং ঐচ্ছিক বিষয়ের প্রতিটি পেপারের নম্বর ২৫০ এবং যোগ্যতা অর্জনের দু’টি বিষয়ের প্রতিটির নম্বর ৩০০। অর্থাৎ ভারতের কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার মূল লিখিত পরীক্ষায় একজন প্রার্থীকে ৯টি বিষয়ে সর্বমোট ২৩৫০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়।
উপরে বর্ণিত তথ্য ও উপাত্ত হতে দেখা যায়, ভারত এবং পাকিস্তানের উভয় ক্ষেত্রে তারা প্রথমত সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার সিলেবাসে ইংরেজি ভাষা এবং ইংরেজি ভাষায় রচনা লেখার বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে এবং দ্বিতীয়ত তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠিত বিষয়সমূহ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার সিলেবাসে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সুতরাং বাংলাদেশে বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাস পর্যালোচনা ও সংষ্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বস্তুতপক্ষে, একজন ব্যক্তির ভাষা জ্ঞান, চিন্তা ও উদ্ভ াবনী শক্তি, বিশ্লেষণী ক্ষমতা, ব্যক্তিত্ব, বিচার বিবেচনাবোধ তথা মেধা ও নেতৃত্বের সব গুনাবলীই যাচাই করা প্রয়োজন।
আন্তঃক্যাডার সমতা আনায়ন প্রসঙ্গে সংস্কার প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি খাতে আসন্ন সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্তঃক্যাডার এবং ক্যাডার, নন-ক্যাডার সমতা আনায়নের জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। জনপ্রশাসনে বিভিন্ন প্রকারের ভিন্নতা হ্রাসের জন্য মেধা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পদোন্নতির নিয়ম চালু করা উচিত। প্রত্যেক সার্ভিসের অধিকতর দক্ষ ও চৌকষ কর্মকর্তারা যাতে নিজস্ব সংস্থার উচ্চতর পদে নিয়োগ ও পদোন্নতি পেতে পারে সেজন্য বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। বিভিন্ন সার্ভিসের মধ্যে যে অসমতা রয়েছে বিশেষ করে যেসব সার্ভিসে ১ থেকে ৪ গ্রেড পর্যন্ত পদ নেই তা সমাধানের জন্য চাহিদার নিরিখে প্রত্যেক সার্ভিসে গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-৪ এর প্রয়োজনীয় সংখ্যক পদ সৃষ্টি করা যেতে পারে।
‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস’ গঠণের সুপারিশ করে এতে বলা হয়, সচিবালয়ের উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত পদগুলোতে নিয়োগ পাওয়ার প্রত্যাশা বিভিন্ন সার্ভিস কর্মকর্তাদের আকাঙ্খা থাকে। যেহেতু সিভিল সার্ভিস কাঠামোটি পিরামিডের মত, সেহেতু শীর্ষ পদে সকলের যাওয়ার সুযোগ রাখা যায় না। সেক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে উচ্চতর পদগুলোতে আরোহনের সুযোগ সৃষ্টি করাই যুক্তিসঙ্গত। বিশে^র বহু দেশেই এ নীতি অনুসরণ করা হয়। অতীতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন (২০০০) এবং বেতন ও চাকরি কমিশন (১৯৭৭) এবং প্রশাসনিক ও পরিষেবা পুনর্গঠন কমিটি (১৯৭২)-এর উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদগুলো নিয়ে একটি পৃথক সিনিয়র সার্র্ভিস গঠন করার সুপারিশ করেছিল। এমতাবস্থায়, এই কমিশন মনে করে যে, মন্ত্রণালয়ের উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত পদগুলো নিয়ে ‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস’ (এসইএস) গঠিত হতে পারে। সকল সার্ভিস থেকে প্রতিযোগিতামুলক পরীক্ষার ভিত্তিতে এসইএস-এ নিয়োগ করা হলে একদিকে মেধার প্রাধান্য নিশ্চিত হবে।
অপরদিকে, আন্তঃসার্ভিস সমতা আনায়ন হবে। বাস্তবতার নিরিখে প্রশাসনিক সার্ভিসের মেধা, দক্ষতা ও মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় বর্তমানে উপসচিব পদের ৭৫% উক্ত সার্ভিসের জন্য সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা রাখা আছে। আন্তঃসার্ভিস অসমতা দূর করার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কমিশন প্রশাসনিক সার্ভিসের ৭৫ শতাংশ কোটা হ্রাস করে ৫০ শতাংশ করার বিষয়টি অধিকতর যৌক্তিক মনে করছে। অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ পদ অন্যান্য সার্ভিস ও পাশর্^ নিয়োগ (ষধঃবৎধষ বহঃৎু)-এর জন্য উন্মুক্ত রাখা কমিশন সমীচীন মনে করে। তবে বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলার রায় ও পর্যবেক্ষণ রয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টির আইনগত দিক পরীক্ষা করে দেখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
উপসচিবের পদটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং সকল বিদ্যমান ক্যাডারের কর্মকর্তাদের এসইএস-এ অন্তর্ভুক্তির যোগ্যতা অর্জনের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) কর্তৃক পরিচালিত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রার্থীদের অংশ গ্রহন করতে হবে। এটি কর্মজীবনের অগ্রগতিতে ন্যায্যতা, যোগ্যতা এবং দক্ষতা নিশ্চিত করবে। কর্মকর্তাগণ একবার এসইএস-এ অন্তর্ভক্ত হলে কর্মকর্তাদের অধিকতর বিশেষায়িত দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। পরবর্তীতে কর্মকর্তাগণ কর্মজীবনে যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব ও মুখ্য সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন।

প্যানেল

×