ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

প্রধানমন্ত্রীর হাত-পা বেঁধে দেয়া উচিত হবে না: সালাহউদ্দিন আহমেদ

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ২২ জুন ২০২৫

প্রধানমন্ত্রীর হাত-পা বেঁধে দেয়া উচিত হবে না: সালাহউদ্দিন আহমেদ

প্রধানমন্ত্রীর সাংবিধানিক ক্ষমতা সীমিত করার বিষয়ে সরাসরি মতপ্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর হাত-পা বেঁধে দেয়া ঠিক হবে না।সর্বক্ষেত্রে আমরা এক্সিকিউটিভের হাত-পা বেঁধে দিতে চাই, তাহলে এক্সিকিউটিভ তার দায়িত্ব পালন করবে কীভাবে?”

রোববার, ২২ জুন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের পঞ্চম দিনের সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন নিয়েও তিনি আপত্তি জানান। তার ভাষায়, “আমরা সংবিধানের মূলনীতি প্রশ্নে পঞ্চম সংশোধনীতে যেভাবে গৃহীত হয়েছে, সেই জায়গায়ই আছি। সেখানে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম আছে, মহান আল্লাহর ওপর আস্থা এবং বিশ্বাস আছে কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা নেই।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা সেই প্রস্তাবনার বিষয় এখানে আনিনি। তারপরও এটা প্রস্তাবনারই অংশ বললাম। রাষ্ট্রীয় পরিচালনার মূলনীতির মধ্যেই এই বিষয়গুলো এসেছে। পঞ্চম সংশোধনীতে গৃহীত যে প্রস্তাবগুলো ছিল, আমরা সেগুলোর সাথেই একমত।”

তিনি বলেন, “পঞ্চদশ সংশোধনের পূর্বাবস্থা এবং সেখানে যে চারটি শব্দ সংযোজনের কথা এসেছে, তা নিয়েও আলোচনা চলছে। কেউ বলছেন, ‘গণতন্ত্র’ শব্দটি একাধিকবার উল্লেখ থাকলেও আমাদের তাতে আপত্তি নেই। গণতন্ত্র থাকুক দুইবার, তিনবার-আমাদের ভিন্নমত নেই। এসব বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”

সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, “আমরা আমাদের প্রস্তাবগুলো স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করেছি। তবে ঐক্যমতে পৌঁছানো না গেলে ঐক্যমত কমিশনের পক্ষ থেকে ‘ঐক্যমত হয়েছে’ বলা যাবে না।”

তিনি বলেন, “সারাদিন আলোচনা করে কোনো ফলাফল না পেলে সেটি হতাশাজনক হবে। এখনো আমরা আশা করছি, অন্তত কিছু ‘মিনিমাম ইস্যু’তে জাতীয় ঐক্যমত তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে রাজনীতিবিদদের ওপর জনগণের আস্থা বাড়বে।”

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের সীমা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যদি জাতীয় ঐক্যমতে সিদ্ধান্ত হয়, যে প্রধানমন্ত্রী জীবদ্দশায় ১০ বছরের বেশি মেয়াদে দায়িত্বে থাকতে পারবেন না, তবে এই প্রস্তাব দলীয়ভাবে আলোচনা করে আমাদের অবস্থান জানাতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই এক্সিকিউটিভ ব্রাঞ্চ এবং লেজিসলেচার ভারসাম্যের মধ্যে আসুক। জুডিশিয়ারি, লেজিসলেচার ও এক্সিকিউটিভের ভারসাম্যপূর্ণ রাষ্ট্র কাঠামো গড়তে হবে। এর জন্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রয়োজন। সেই নির্বাচন হতে হবে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, প্রকৃত স্বাধীন বিচারব্যবস্থা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, “আর যদি এক্সিকিউটিভকে, মানে প্রধানমন্ত্রীকে আমরা এখানেই সীমিত করে দিই, তাহলে ভবিষ্যতে আর কোনো সাংবিধানিক একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠিত হবে না? সংসদের মধ্য দিয়ে কোন স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা হওয়ার আর কোনো সুযোগ থাকবে না?

তবে প্রশ্ন হলো,তখন যদি সর্বক্ষেত্রে আমরা এক্সিকিউটিভের হাত-পা বেঁধে দিতে চাই, তাহলে এক্সিকিউটিভ তার দায়িত্ব পালন করবে কীভাবে?”

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা এক জায়গায় আসি যাতে এখানে সাংবিধানিকভাবে কোন স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠিত না হয় এবং সীমাহীন মেয়াদের জন্য কেউ যেন প্রধানমন্ত্রী না হয়। সেই জায়গায় আসি আমরা,সেই প্রস্তাব তো আমাদের আছেই।”

আফরোজা

×