ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

নিজের অস্ত্রই বুমেরাং ইসরায়েলের, কথা শুনছে না আয়রন ডোম!

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ২০ জুন ২০২৫; আপডেট: ১০:৪৬, ২০ জুন ২০২৫

নিজের অস্ত্রই বুমেরাং ইসরায়েলের, কথা শুনছে না আয়রন ডোম!

ছ‌বি: সংগৃহীত

পাল্টাপাল্টি হামলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ইরান-ইসরায়েল। এক চুলও ছাড় দিচ্ছে না কেউ। তবে বরাবরের মতো ইসরায়েল দাবি করছে, তাদের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। গত ছয় দিনে ইরান ছোড়া প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে বলেও দাবি তাদের। কিন্তু বাস্তবচিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের বহুল প্রশংসিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ এখন কার্যত ভেঙে পড়ার পথে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের করুণ দৃশ্য। যদিও ইসরায়েল তা স্বীকার করছে না।

ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে মার্কিন ও ইসরায়েলি গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে জানানো হয়েছে, আয়রন ডোম টিকিয়ে রাখতে এখন ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সামরিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। রসদ ও ব্যয় সংকটে পড়ে ইসরায়েল এখন বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছে কোন ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাবে আর কোনটা পার হতে দেবে। প্রতিরক্ষা কাঠামো প্রায় ভেঙে পড়েছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, প্রতিদিন রাতের বেলায় আয়রন ডোম চালু রাখতে খরচ হচ্ছে প্রায় ২৮৫ মিলিয়ন ডলার। ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষজ্ঞ টাল ইনবার বলেছেন, ইরানের হাইপারসোনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে আয়রন ডোম কার্যত অকার্যকর।

তিনি মনে করিয়ে দেন, ২০১৪ সালে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে গোলাবারুদের ঘাটতির কারণে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে যেতে বাধ্য হয়েছিল। এবারও তেমন পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

সম্প্রতি একের পর এক ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে ইসরায়েলের কৌশলগত স্থাপনাগুলোর ওপর। শুক্রবার এক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে সেন্ট্রাল কমান্ডের কাছে। রোববার আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র হাইফার একটি বড় তেল শোধনাগারে বিস্ফোরণ ঘটায়। এছাড়া মঙ্গলবার ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সদর দপ্তরের আশেপাশে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। ধারণা করা হচ্ছে, একটি হামলা সরাসরি সামরিক গোয়েন্দা ভবনের ভেতরেও বিস্ফোরণ ঘটায়।

এসব তথ্য ইসরায়েলি গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে না। কারণ দেশটিতে সেন্সর আইন কঠোরভাবে বলবৎ রয়েছে। প্লাস ৯৭২ ম্যাগাজিন জানিয়েছে, ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের সেন্সর বিভাগ ১,৬৩৫টি রিপোর্ট পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে এবং আরও ৬,২৬৫টি প্রতিবেদনে সংশোধন বা সেন্সরের হস্তক্ষেপ ঘটেছে। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন অন্তত ২১টি রিপোর্ট সেন্সরের কবলে পড়ছে।

এই গোপনীয়তার পর্দা সরাতে হ্যাকাররাও নেমে পড়েছে। সাইবার গোয়েন্দা সংস্থা হ্যাকম্যানক জানিয়েছে, চলমান সংঘাতে ইসরায়েল এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সাইবার হামলার শিকার হওয়া দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। পাল্টা সাইবার যুদ্ধেও ইরান সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে।

সব মিলিয়ে বিশ্বের অন্যতম আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত আয়রন ডোম এখন নিজের অস্ত্রেই কোণঠাসা। আর ইসরায়েল— নিজের অস্ত্রেই যেন বুমেরাংয়ের মতো আঘাত খাচ্ছে।

ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/9uC6odYsZLI?si=CfQIQcpjH8NUxHal

এম.কে.

×