ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

জৌলুশ কমছে চাঁদপুর সদর উপজেলায় কোষা ও ডিঙ্গি নৌকার

শ্যামল সরকার, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, চাঁদপুর

প্রকাশিত: ১৮:৪৭, ২০ জুন ২০২৫

জৌলুশ কমছে চাঁদপুর সদর উপজেলায় কোষা ও ডিঙ্গি নৌকার

চাঁদপুরের সদর  উপজেলায় কালের বিবর্তনে কোটি টাকা আয়ের এ খাতটির জৌলুশ কমছে অনেকটাই  ।ঐতিহ্যবাহী এ পেশা থেকে তেমন আয় না পাওয়ায় নিজেদের ক্রমান্বয়ে গুটিয়ে নিচ্ছেন কোষা ও ডিঙ্গি নৌকার কারিগররা।

চাঁদপুর সদর উপজেলার ২১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ও ৯ টি গ্রাম নিয়ে গঠিত  ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন।এই ইউনিয়নের পুরোটাই নদী ভাঙ্গন এলাকা, তাই এই এলাকার জনগণের একমাত্র চলাচলের উৎস হচ্ছে নৌকা।ঐ ইউনিয়নের  একটি গ্রামের নাম বেড়াচাকি। এক সময় এ গ্রামে প্রবেশ করলেই প্রত্যেক বাড়ি থেকে ঠক ঠক শব্দ ভেসে আসতো। কাঠে হাতুড়ি দিয়ে পেরেক মেরে নৌকা তৈরির শব্দ শোনা যেত পুরো গ্রামজুড়ে। আজকাল সেই শব্দ আর কানে আসেনা। সেই শব্দ খুঁজে পেতে হলে পুরো গ্রাম ঘুরে যেতে হবে দুই-তিনটে পরিবারের কাছে। এক সময় বর্ষার শুরুতে চাঁদপুরের সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুরে  নৌকা কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করত। কালের বির্বতনে হারিয়ে যেতে বসেছে নৌকা। বাপ-দাদাদের ঐতিহ্য এ পেশাকে ধরে রেখেছে কয়েকটি পরিবার এখনো নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন তারা। এদিকে নৌকা কারিগরদের পেশা এখন হারিয়ে যওয়ার পথে।

২০ জুন শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার  ইব্রাহিমপুর, হরিনা ও রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের, গ্রামগুলিতে এখনো তৈরি হয় নৌকা। কিন্তু কালের বির্বতনে এবার হারিয়ে যেতে বসেছে এ শিল্পটি। নৌকা তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি ও আর্থিক অনটনের ফলে এ শিল্পের কারিগররা এখন পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে নৌকা শিল্প।খোজ নিয়ে জানাযায় বর্তমানে ইব্রাহিমপুরের বেড়াচাকি গ্রামের ৬ টি পরিবারের ১৩ জন এ পেশায় নিয়জিত রয়েছেন । শত অভাব-অনটনের মধ্যেও তারা ঐতিহ্যবাহী পেশাটি এখনও আকঁড়ে ধরে আছে। বাকী কারিগররা এখন এই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজ করছেন।

একই গ্রামের বাসিন্দা কালি প্রশাদ সরকার, রিপন চন্দ্র ও সুমন জানান, এক সময় বিয়ে-শাদিতে এক গ্রামের বরযাত্রী অন্য গ্রামে সারি সারি নৌকা সাজিয়ে নিয়ে যেত। গ্রামগুলোর প্রত্যেক ঘরেই ২-৩টি করে নৌকা ছিল। স্কুল-কলেজ, হাটবাজার, মাল আনা-নেওয়ার কাজে এসব নৌকা ব্যবহার করা হত। গত কয়েক বছর ধরে এ দৃশ্য আর দেখা যায় না। এলাকায় রাস্তাঘাট নির্মাণ হয়েছে। তাই নৌকার ব্যবহার কিছুটা কমছে। তাছাড়া আর্থিক দুরাবস্থা এবং নৌকা তৈরির উপকরণের মূল্য দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় কারিগররা তাদের প্রাচীন এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছে।

নৌকা কারিগর চন্দন কুমার ও বিপুল  জানান, আমারা আমাদের বাবার কাছ থেকে নৌকা তৈরি করতে শিখেছি। ৩০ বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে জড়িত আছি। জানিনা আর কয়দিন থাকব। যেভাবে কাঠ-যন্ত্রপাতির দাম বাড়ছে তাতে নৌকা তৈরি করে লাভ হচ্ছে না। এ গ্রামে ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের নৌকা তৈরি হয়। ৮ হাত, ৯ হাত, ১০ হাত আকারের নৌকা তৈরি হয়। বিলুপ্ত হতে যাওয়া এ পেশাটি রক্ষার দাবি তাদের। তবে এ পেশার অবস্থা এখন খুবই নাজুক। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য নৌকা শিল্পটিকে বাঁচানো দরকার। সরকার চাইলে হয়ত আমরা টিকে থাকব। এ পেশাটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারের উচিত আমাদের ঋন দিয়ে সহযোগিতা করা।

চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাখাওয়াত জামিল সৈকত বলেন, জীববৈচিত্র্য সঠিক পর্যায়ে ও পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে অবৈধভাবে খাল ও নদীপাড় দখলকারীদের উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কোষা ও ডিঙ্গি  নৌকা কারিগরদের যেকোনো ধরনের সরকারি সাহায্য সহযোগিতার প্রয়োজন হলে অবশ্যই তাদের সহযোগিতা করা হবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন  বলেন, আমাদের দেশের ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে নৌকাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, তাছাড়া এই বর্ষাকালে নৌকাই একমাত্র চলাচলের বাহক।  নৌকা তৈরি এটি একটি শিল্প, আর দেশের ঐতিহ্য নৌকা তাই এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আমারা নৌকা তৈরির কারিগর, বা এ ধরনের কাজে সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই সহযোগিতা করবো।

Jahan

×