ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

দেশ নিয়ে আমার আর কোনো প্রত্যাশা নেই: শবনম ফারিয়া

প্রকাশিত: ১৮:৪৪, ২০ জুন ২০২৫

দেশ নিয়ে আমার আর কোনো প্রত্যাশা নেই: শবনম ফারিয়া

ছবি: সংগৃহীত

অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া বরাবরই স্পষ্টবাদী হিসেবে পরিচিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের মতামত প্রকাশে তিনি কখনোই পিছপা হন না। কখনো কখনো সমালোচনার মুখে পড়লেও তা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। গত বছরের জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া ছাত্র আন্দোলনের সময়ও তিনি সরাসরি শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলেছিলেন। সেই ঘটনার বহু মাস পর আবারও সেই সময় নিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলেন ফারিয়া। তবে এবার হতাশা আর আক্ষেপই প্রকাশ পেলো তার লেখায়।

 

 

গত ১৮ জুন নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্টে শবনম ফারিয়া লেখেন,
“একটা গল্প আছে, না? এক ঠান্ডা শীতের সকালে একজন ইমাম আর একজন চোর রাস্তায় বের হয়। ইমাম ভাবে, ‘কি ভালো মানুষ! এই ঠান্ডায় ফজরের নামাজ পড়তে বের হয়েছে।’ চোর ভাবে, জেন্টলম্যান! দাঁড়ি আছে, তাও চুরি করে!’ এই গল্প থেকে আমরা কি শিখলাম? আমরা শিখলাম, মানুষ অন্যকে দেখে নিজের মানসিকতা দিয়ে বিচার করে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, সবাই টাকা বা ডলারের জন্য নিজের বিবেক বিক্রি করে না। টাকা সবার কাছে সব কিছু না। কেউ কেউ নিজস্বতা নিয়ে বাঁচে, স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটে, ঝুঁকি নেয়।”

 

 

তিনি আরও লিখেন,“জুন মাসে যখন আন্দোলন চরমে, তখন ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার পরপরই কিছু সেলিব্রিটিকে ডেকে বিটিভি ও মেট্রোরেলে আগুন লাগানোর ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে ভিডিও বানাতে বলা হয়। আমাকেও বলা হয়েছিলো। আমি সরাসরি ‘না’ বলার সাহস পাইনি তখন, তাই সময় চেয়েছিলাম। তারা বলেছিল, ‘ঠিক আছে, ভাবার সময় নিন।’ তখন হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ ছিল, আমি সরাসরি অভিনেতা সিয়ামের কাছে মেসেজ করি, সে কি এমন কোনো ফোন পেয়েছে? সিয়াম জানায়, হ্যাঁ, পেয়েছে এবং সে না করে দিয়েছে। তখন আমারও না বলার সাহস হয়। এই ঘটনা আমি আগে কখনো বলিনি। কারণ আমি চেয়েছি না বলার জন্য কোনো বাহবা পেতে। এটা ছিল শুধুই সঠিক কাজ। আমি রাজনীতিতে নেই, ভবিষ্যতেও থাকার ইচ্ছে নেই। কিন্তু যখন দেখি অনেকে ‘ডলার নিয়েছে’, এমন গল্প বানায়, তখন শুধু হাসিই পায়।”

 

 

পোস্টের আরেক অংশে ফারিয়া লেখেন,
“আমি এমন অনেক মানুষকে চিনি যারা সত্যিই আওয়ামী লীগকে ভালোবাসে, তবুও জুলাইয়ে প্রোফাইল পিকচারে লাল চিহ্ন দিয়েছিলো। হয়তো তখন যেভাবে বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছিল, এখন সেটা ভিন্নভাবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু আপনি যদি তখন মানুষ হয়ে থাকেন, অমানুষ না, তাহলে হত্যা দেখে চুপ থাকতে পারতেন না, আপনার রাজনৈতিক পরিচয় বা মতাদর্শ যাই হোক না কেন।”

সবশেষে শবনম ফারিয়া লিখেছেন,
“এই পোস্টের মাধ্যমে আমি বাংলাদেশে রাজনীতি নিয়ে লেখা বন্ধ করলাম। আমি বুঝে গেছি, আমরা একটি নির্লজ্জ, নির্দ্বিধায় সবকিছু করতে পারা জাতি। আমাদের আর উন্নতি হবে না। যত আন্দোলনই হোক, যত সরকারই আসুক, যত নোবেল বিজয়ীই থাকুক, দুর্নীতি ও চুরি বন্ধ হবে না। শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ-ক্ষমতায় গেলে সবাই সেটা অপব্যবহার করবে। দেশের প্রতি আমার আর কোনো আশা নেই। আর হ্যাঁ, সত্যি যদি ডলার পেতাম, ভালোই লাগতো! কারণ শ্রীলঙ্কা যাওয়ার আগে মাত্র ২০০ ডলার এন্ডোর্স করতে গিয়ে ২৫,৩০০ টাকা লেগেছিলো!”

এই পোস্টের মাধ্যমে শবনম ফারিয়া নিজের হতাশা, দেশপ্রেম এবং ব্যক্তিত্বের স্বতন্ত্রতা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন, যেখানে মিশে আছে একজন সাধারণ নাগরিকের ক্ষোভ, একজন শিল্পীর বিবেক, এবং একজন নারীর আত্মবিশ্বাস।

ছামিয়া

×