মনোনয়ন দৌড়ঝাঁপে বিএনপির ৮ জামায়াতের এক নেতা

রাজশাহী (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) সংসদীয় ৫ আসনে মনোনয়ন পেতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন বিএনপির ৮ জন প্রার্থী। ফলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। মাঠে তৎপর জামায়াতের নেতাকর্মী-সমর্থকরাও। সক্রিয় হচ্ছে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরাও।
আগামী ত্রয়োদশ নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক আলহাজ আব্দুস সাত্তার, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও পুঠিয়া উপজেলার আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদা হাবিবা থেমে নেই বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক ইসফা খায়রুল হক শিমুল,
বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ম-ল, পুঠিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি এবং এই আসনের বিএনপির প্রয়াত সংসদ সদস্য নাদিম মোস্তফার ছেলে জুলফার নাঈম মোস্তফা, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা ও রাজশাহী জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি রোকোনুজ্জাম আলম। এদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত একক প্রার্থী নুরুজ্জামান লিটন ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এবং রাজশাহী জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আবুল হোসেন।
রাজনৈতিক দলের নেতারা কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সক্রিয়তা বাড়িয়েছেন। এতে পুঠিয়া ও দুর্গাপুরে নির্বাচনী ইমেজ  তৈরি হয়েছে। এতে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজেদের শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তাদের দলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ শুরু করেছেন। তাদের দল সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে।
মনোনয়ন প্রত্যাশী আলহাজ আব্দুস সাত্তার বলেন, ছাত্রজীবন ‘থেকেই মহান স্বাধীনতার ঘোষক, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। শহীদ জিয়ার ১৯ দফা, বিশেষ করে খাল খনন কর্মসূচি, রাস্তা-ঘাট ও অবকাঠামো নির্মাণ কর্মসূচি, কৃষি উন্নয়ন কর্মসূচি, জনশক্তি রপ্তানিসহ নানা কর্মসূচি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।  তারেক রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমি দুর্গাপুরে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে দলকে শক্তিশালী করেছি। ৩১ দফা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে বুকলেট ও লিফলেট বিতরণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে চলেছি। এলাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে রাস্তাঘাট সংস্কার , টিউবওয়েলও সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে খাবার পানির ব্যবস্থা করা, অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসায় সহযোগিতা, কন্যা দায় গ্রস্থ পিতাকে সহায়তা, শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, অসচ্ছল পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি ফি, বেতন ও বই কেনায় সহযোগিতা করা, মাদ্রাসার এতিম ছাত্রদের জামাকাপড় প্রদান, মসজিদ ও মাদ্রাসার নির্মাণে ও উন্নয়নে সহায়তা প্রদান ইত্যাদি জনকল্যাণমূলক কাজগুলো করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী  বিরোধী আন্দোলনে ও  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে নেতাকর্মীদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছি। আমার প্রাণের সংগঠন বিএনপি আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিলে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হব বলে  আমি আশাবাদী।’
আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ইসফা খায়রুল হক শিমুল বলেন, আমি বিএনপি পরিবারের  সন্তান। আমার বাপ, দাদা বিএনপির সঙ্গে জড়িত এবং আমার ছোট ভাই এন্তাজুল হক বাবু, বর্তমানে পুঠিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব। তিনি বলেন,  আমি  দলের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। দলের নেতা-কর্মীদের  পাশে থেকে সাহস দিয়েছি, আওয়ামী লীগের অত্যাচার আর নির্যাতনে তারা যেন পথ না হারাই সেজন্য বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলাম । আওয়ামী লীগের অত্যাচার, হামলা-মামলায় চাকরি হারানো বিএনপি নেতা-কর্মীদের চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
মাহমুদা হাবিবা বলেন, আগামীর বাংলাদেশ নতুনভাবে তৈরির জন্য নতুন নেতৃত্বকে সামনে আনার কোনো বিকল্প নেই। ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা গুণগত পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তন এসেছে মানুষের রাজনৈতিক চিন্তাধারায়। বিএনপি আগামী নির্বাচনে যে নেতাদের মনোনীত করবে, তাদের অবশ্যই এই পরিবর্তিত সময় ও ভাবনাকে ধারণ করার সক্ষমতা থাকতে হবে। যোগ্যতা থাকতে হবে বিএনপির নীতি ও আদর্শকে তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার।
আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, দীর্ঘ তিন যুগ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দুঃসময়ে পাশে থেকেছি। আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের দুঃশাসনকালে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। চারবার গ্রেপ্তার হয়েছি। জেল খেটেছি। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মাঠে থেকে শিক্ষার্থীদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছি। বিএনপিকে তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করেছি। নেতাকর্মীদের দলীয় কর্মসূচিতে চাঙ্গা রাখতে নিরলসভাবে কাজ করছি। আশা করছি, এসব বিষয় মূল্যায়ন করে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।
তিনি আরও বলেন, নতুন সময়ের প্রত্যাশা পূরণে রাজশাহী-৫ আসনে আমি নিঃসন্দেহে আমার দলের জন্য সেরা পছন্দ হব বলে আস্থা রাখি। আমি বিশ্বাস করি, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দলের জন্য আমার সুদীর্ঘ নিরলস পরিশ্রমের মূল্যায়ন করবে।
জামায়াতে প্রার্থী নুরুজ্জামান লিটন বলেন, পুঠিয়া-দুর্গাপুরে আমার উন্নয়ন পরিকল্পনা আমি, সর্বস্তরে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত ইনসাফপূর্ণ সমাজ কায়েম করা হবে।  যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকারত্ব দূর করা হবে। নন এমপিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত করা হবে। হোজা অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, নির্বাচনের সিদ্ধান্ত এখনো নিইনি । কখন নির্বাচন হবে কিংবা জাতীয় পার্টি নির্বাচনের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবে সেটির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। নির্বাচনের সুযোগ থাকলে এবং দলের নেতাকর্মীরা চাইলে নির্বাচন করব।
এদিকে এ আসনে আলোচনায় আছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এবং রাজশাহী জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আবুল হোসেন। ১৯৮৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি এ আসনে জাতীয় পার্টির টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
রাজশাহী-৫ আসনে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক বিশেষ সম্পাদক ও জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি প্রয়াত অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা দলীয় মনোনয়নে বিজয়ী হন।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ম-লকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়েছে।