ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

১ জুলাই থেকে লক্কড় ঝক্কড় বাস ট্রাক নিষিদ্ধের সার্কুলার

আজাদ সুলায়মান

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ২০ জুন ২০২৫

১ জুলাই থেকে লক্কড় ঝক্কড় বাস   ট্রাক নিষিদ্ধের সার্কুলার

.

বিশ বছরের পুরনো কিংবা লক্কড়- ঝক্কড় মার্কা বাস মিনিবাস ও পঁচিশ বছরের পুরনো ট্রাক না চালানোর কঠোর নির্দেশনা বাস্তবায়ন অনেকটাই কঠিন হবে। উভয়শ্রেণির মালিক শ্রমিকরা এ বিষয়ে তাদের দাবি নিয়ে সরকার ও পরিবহন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেন-দরবার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুক্রবার বেশ কজন মালিক এ তথ্য প্রকাশ করে বলেছেন, সরকার আগামী ১ জুলাই থেকে এ ধরনের গাড়ি নিষিদ্ধ করার যে চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়েছে, সেটা এবারও বাস্তবায়ন কঠিন হবে। কারণ এখনো রাজধানীতে সিটি সার্র্ভিসের অন্তত শতকরা ৩০ ভাগ বাস মিনিবাস বিশ বছরের পুরনো। আর শতকরা ৫০ ভাগ ট্রুাক এখনো পঁচিশ বছরের অধিক পুরনো। আগামী ২ জুলাই থেকে সত্যিই এগুলোকে আর চলতে না দেওয়া হয় তাহলে বড় ধরনের সংকটে পড়বে দেশের মালামাল পরিবহন।
তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডের মালিক তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা এ বিষয়ে দু’একদিনের মধ্যে ঢাকা সড়ক মালিক সমিতি, বাংলাদেশ পরিবহন ফেডারেশন ও শ্রমিক ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠকে বসে আরও কিছু সময় চাইব।
জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, আগামীকাল রবিবার আমাদের একটা বৈঠক হচ্ছে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে। সেখানে এই ইস্যু নিয়েও কথা হবে। আমাদের জানামতে ১  জুলাই থেকে যদি বিশ বছরের বেশি পুরনো বাস মিনিবাস সত্যিই না চলতে দেওয়া হয়- তাহলে খুব একটা বেশি প্রভাব  পড়বে না। কারণ বাস মিনিবাস এত পুরনো খুব একটা নেই। দুএকটা থাকলেও সেগুলো হয়তো রাতে লুকিয়ে চলাচল করতে পারে। কিন্তু ট্রাকের বেলায় একটা সমস্যা হতে পারে। যেমন এখনো পঁচিশ বছরেরর অধিক পুরনো ট্রাক দেশে রয়ে গেছে। রাজধানীতেও সেগুলো চলাচল করে। এখন ১ জুলাই থেকে যদি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে ্একটা সংকট হতে পারে। সেজন্য আমাদের প্রস্তাব ছিল, এসব মালিকদের স্বল্প সুদে বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজে তাদেরকে নতুন ট্রাক কেনার সুযোগ দেওয়া হলে সবার জন্যই সুবিধা হবে। নইলে একটা ভোগান্তি সবাইকে পেয়ে বসবে।  
এ বিষয়ে ট্রাক মালিক মফিজুর রহমান বলেন, রাজধানীসহ দেশব্যাপী ২০ বছরের পুরনো বাস মিনিবাস ও ২৫ বছরের অধিক পুরনো ট্রাক রয়েছে লাখ লাখ। এসব গাড়ির রিপ্লেস না করে , মালিকদের সঙ্গে সমঝোতা বা বিকল্প কিছু একটা না করে ১ জুলাই থেকে কীভাবে নিষিদ্ধ করা হবে। এগুলো কোথায় যাবে? দেশে তো এত গাড়ি ডাম্পিংয়েরও উপযুক্ত জায়গা নেই। সেজন্যই আমরা আরও সময় চাইছি। উল্লেখ্য- বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সরকার একটি সার্কুলার জারি করে। যেখানে বলা হয়-  বিশ বছরের বেশি পুরনো বাস ও মিনিবাস চলাচল পারবে না। অন্যদিকে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান প্রভৃতি মালবাহী মোটরযানের আয়ুষ্কাল হবে ২৫ বছর। যানবাহনের ইকোনমিক লাইফ (অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল) নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সডক পরিবহন ও মহাসডক বিভাগ। সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ এর ধারা ৩৬-এ দেওয়াা ক্ষমতাবলে সরকার বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২০ বছর এবং ট্রাক, কাভার্ডভ্যান প্রভৃতি মালবাহী মোটরযানের ক্ষেত্রে ২৫ বছর ইকোনমিক লাইফ নির্ধারণ করল। এ আদেশ আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়। দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনা, সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পরিবেশ দূষণ কমানো এবং সড়কে শৃঙ্খলা আনতে যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী মোটরযানের আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করে ২০২৩ সালের ১৭ মে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। তখনো বাস ও মিনিবাসের ২০ বছর এবং ট্রাকের আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করা হয় ২৫ বছর। কিন্তু পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের আপত্তির মুখে ওই বছরের ৩ আগস্ট আয়ুষ্কাল নির্ধারণের প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত করা হয়।
এদিকে রাজধানী মহাখালী, গাবতলী, গুলিস্তান সায়েদাবাদ টার্মিনাল সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়. দূরপাল্লার বাসগুলোতে নতুন সার্কুলার কোনো প্রভাব ফেলবে না। যদিও সিটি সার্ভিসে এখনো বেশকিছু বাস মিনিবাস রয়ে গেছে। সার্কুলার যদি ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়, তাহলে নগরে বাস মিনিবাসের সংখ্যা কমে যাবে। সেক্ষেত্রে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়বে।
তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সারিবদ্ধভাবে রাখা ট্রাকগুলোর বেশির ভাগই সরকার ঘোষিত পচিশ বছরের বেশি পুরনো। এসব গাড়ি এখনো রাজধানীতে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন মালিক ও শ্রমিকরা। তাদের যুক্তি হঠাৎ কোনো সরকারি ঘোষণায় এগুলোকে নিষিদ্ধ করা যাবে না। আগে এগুলোর বিকল্প উপায় খুঁজতে হবে, তারপর সার্কুলার বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব পুরনো ট্রাক কিছুতেই রাজধানী থেকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না আর মাত্র দশ দিনে। সেজন্য আরও অন্তত ছয় মাস সময় দিতে হবে।
এ বিষয়ে পরিবহন মালিক সমিতির সূত্র জানিয়েছে-  রাজধানীর ২৯০টির বেশি রুটে চলা করা প্রায় ৬ হাজার বাসের বেশিরভাগই রংচটা। অনেক বাসের মেয়াদ শেষ হলেও বন্ধ হয়নি যাত্রী পরিবহন। এর মধ্যে সহস্রাধিক বাস ২০ বছরের পুরনো।
সেগুলোকে রাজধানীতে চলাচলের জন্য আর অনুমোদন দেওয়া হবে না ১ জুলাই থেকে। তবে ফিটনেস সার্টিফিকেট ও রুট পারমিট ছাড়াই নির্দিষ্ট রুটে যাত্রী বহন করে চলেছে সেগুলো। যাত্রীবাহী এসব বাস যে কেউ দেখলেই বুঝবে এগুলোর ফিটনেস নেই। জেনেশুনেই বাধ্য হয়ে যাত্রীদের এসব বাসে চড়তে হচ্ছে।

প্যানেল

আরো পড়ুন  

×