
তেল জাতীয় শস্য সূর্যমুখীর আবাদের মধ্য দিয়ে এবছর পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কৃষকরা কৃষি অর্থনীতিতে যোগান দিয়েছে প্রায় ২৯ কোটি টাকা। নিজেরা যেমনি লাভবান হয়েছেন। তেমনি কৃষি অর্থনীতির চাকায় গতি এনেছেন। অনাবাদি পতিত লবণাক্ত এসব জমিতেই বেশি বেশি করে সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন কৃষকরা। অন্তত তিন হাজার কৃষক চাষ করেছেন সূর্যমুখীর। প্রায় ১০ লাখ ৮০ হাজার কেজি ভোজ্য তেলের যোগান দিয়েছেন । ফলনও পেয়েছেন খুব ভালো। অন্তত ১৫ হাজার বিঘা জমিতে এ বছর কলাপাড়ায় সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। কৃষকরা জানান, অত্যন্ত লাভজনক তেল জাতীয় এই শস্যটি এখন চাষাবাদে ঝুকেছেন তারা। এবছর তারা অনেক বেশি জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন। ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। হাইব্রিড জাতের এই তেলজাতীয় শস্যের উৎপাদনের মধ্য দিয়ে কৃষক ব্যাপক লাভবান হয়েছেন।
চাষী রফিকুল ইসলাম জানান, আগে পতিত থাকতো। আমনের পরে আর চাষাবাদ করতেন না। প্রায় এক একর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন। ভালো ফলন পেয়েছেন। যে পরিমান বীজ পেয়েছেন ২৫০০ টাকা মণ ধরে বেচে দিয়েছেন। জানালেন তিনি সূর্যমুখী শুধু লাভজনক নয়। এটি সৌন্দর্যবর্ধন করে। মার্চ-এপ্রিল দুই মাসে এই ফসলটির ফলন হয়। ফুল ধরলে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ঘুরতে আসেন। সূর্যমুখীর ক্ষেতে ফটোশুট করেন। সূর্যমুখীর গাছ থেকে শুরু করে ডালপালা, ফুলের বীজ ছড়ানোর পরে ছোবরা সব জ্বালানিতে প্রয়োজন হয়। লবণসহিষ্ণু এবং খরা সহিষ্ণু এই তেল জাতীয় শস্যটি আবাদে কৃষকরা আগ্রহ পাচ্ছেন। টিয়াখালীর সিক্সলেন সড়কের দুইদিকে সূর্যমুখীতে এবছর পরিপূর্ণ ছিল। বিবর্ণ থাকা মাঠ ছিল হলুদের আস্তরণে ঘেরা। মানুষ বিকেলবেলা ভিড় জমে যেত। একই দৃশ্য ছিল নীলগঞ্জের মাস্টার বাড়ির পরে কুয়াকাটাগামী সড়কের পশ্চিম দিকটায়। পর্যটক দর্শনার্থীরা গাড়ি থামিয়ে সূর্যমুখীর সঙ্গে মিতালি করতেন। উপভোগ্য কিছুটা সময় কাটাতেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আরাফাত হোসেন জানান, এ বছর কলাপাড়ায় প্রায় পাঁচ হাজার একর (২০০০ হেক্টের) জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। হেক্টরে প্রায় আট টন ফলন পেয়েছেন কৃষক। ১৬ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। যা দিয়ে ১০ লাখ ৮০ হাজার কেজি তেল উৎপাদন হয়েছে। অন্তত ২৭ কোটি টাকার তেল উৎপাদন করেছেন কৃষক। দামও ভালো পয়েছেন। সর্বনিম্ন আড়াই হাজার টাকা মণ। তেলও গড়ে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে পেরেছেন। এছাড়া অনেকে নিজেরা তেল রান্নায় ব্যবহার করছেন। এ পরিমাণ সূর্যমূখীর বীজ থেকে তেল ভানাইয়ের পরে অন্তত ১৪ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ কেজি খৈল হয়েছে। যার বাজার মূল্য কমপক্ষে দুই কোটি ১২ লাখ টাকা। এছাড়া ফল কাটার পরে মরা গাছটি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই বিভিন্নভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষক সূর্যমুখীর আবাদ করে। অন্তত তিন হাজার কৃষক এবারে সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন। কৃষককে বীজসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে। আগামি বছর এর চাষ আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা তার।
শুধূ অর্থনীতির যোগান নয়। সূর্যমুখীর ফুল ধরার পর থেকে ওইসব এলাকায় সকল বয়সীর দর্শনার্থীর ভিড় লেগে যায়। সকাল-দুপুর-বিকেল দর্শনার্থীরা সূর্যমূখির খেতে ভিড় করেন। ফটোশুট করেন। কোমলমতি শিশুরা হাসিমুখে ছবি তুলে সূর্যের দিকে মুখ করা সূর্যমুখি ফুলের সাথে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীর ভিড় থাকে বেশি।
রাজু