
ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান ইরান-ইসরায়েল সামরিক সংঘাত সপ্তম দিনেও থামেনি। প্রতিদিনই পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটছে। তবে ১৯ জুন ইসরায়েল প্রথমবারের মতো এক বিস্ফোরক দাবি তোলে, ইরান নাকি এই যুদ্ধে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে, যা যুদ্ধের ভয়াবহতাকে নতুন এক মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) জানায়, ইরান সম্প্রতি এক ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে, যেটি আকাশে নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে বিস্ফোরিত হয়ে একাধিক ছোট বোমায় রূপান্তরিত হয়। এই ক্ষেপণাস্ত্র ‘ক্লাস্টার মিউনিশন’ নামে পরিচিত। আইডিএফ দাবি করে, আয়রনডোম ইরানি মিসাইল শনাক্ত করে একটি প্রতিহত করলেও বাকিগুলো বিভক্ত হয়ে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।
ক্লাস্টার বোমা এমন এক ধরনের গোলাবারুদ, যা বিস্ফোরণের পর বহু ছোট বোমা (submunitions) ছড়িয়ে দেয়। এগুলোর অনেকগুলো তাৎক্ষণিকভাবে বিস্ফোরিত হয় না এবং পরে সাধারণ মানুষের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে। একে অনেকসময় স্থলমাইনের মতো ভয়াবহ বলা হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘ফ্র্যাগমেন্টিং ওয়ারহেড’ ব্যবহারের কথা স্বীকার করলেও একে সরাসরি ক্লাস্টার বোমা হিসেবে চিহ্নিত করেননি। তবুও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সতর্ক করেছে, যে স্থানগুলোতে ইরানি মিসাইল আঘাত করেছে, সেখানে অবিস্ফোরিত বোমা থাকতে পারে এবং তা ছোঁয়া মাত্র বিস্ফোরিত হতে পারে।ক্লাস্টার মিউনিশন ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। সেই চুক্তিতে ১১১টি দেশ সই করলেও যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারত, ইরান ও ইসরায়েল এই চুক্তির বাইরে রয়েছে। ফলে এই অস্ত্র ব্যবহারে কোনো আন্তর্জাতিক বাধা নেই—তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এটিকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের মতোই গুরুতর অপরাধ হিসেবে দেখে।
নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র আকাশে প্রায় চার মাইল উচ্চতায় ফেটে যায় এবং পাঁচ মাইল এলাকাজুড়ে কমপক্ষে ২০টি ছোট বোমা ছড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে একটি ইসরায়েলের আজর শহরের একটি বাড়িতে আঘাত হানে। কেউ নিহত না হলেও ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষক ফাবিয়ান হেন্স জানান, ইরানের কিয়াম বা খোররাম শহর থেকে উৎক্ষেপিত বড় ক্ষেপণাস্ত্রগুলো এমন ক্লাস্টার সাবমিউনিশন বহন করতে সক্ষম। বিশেষ করে খোররাম শহর মিসাইল একসঙ্গে প্রায় ৮০টি সাবমিউনিশন নিয়ে যেতে পারে।
ছামিয়া