ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

গাজায় ইসরাইলি হামলায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯২ ফিলিস্তিনি নিহত

ত্রাণ সংগ্রহ যেন আরেক যুদ্ধ

প্রকাশিত: ২২:০৯, ২০ জুন ২০২৫

ত্রাণ সংগ্রহ যেন আরেক যুদ্ধ

জীবন বাজি রেখে ত্রাণ সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে গাজাবাসী

গাজায় বর্তমানে প্রাণহানির পাশাপাশি চলছে খাদ্য সংকট। খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ফিলিস্তিনিদের যেন আরেকটি যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মাস দুয়েকের ইসরাইলি অবরোধের পর উপত্যকাটির অধিকাংশ ত্রাণ যাচ্ছে মার্কিন ও ইসরাইল সমর্থিত ত্রাণ সংস্থা গাজা হিউম্যানটারিয়ান ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে। ইসরাইলি বাহিনীর কড়া প্রহরায় কয়েকটি স্থানে তারা খাদ্য সরবরাহ করে থাকে। এদিকে গেল ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় আরও ৯২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। শুক্রবার গাজার মধ্যাঞ্চলে মানবিক সহায়তার জন্য অপেক্ষারত ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। ড্রোন, ট্যাঙ্ক ও মেশিনগান হামলায় মুহূর্তেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা। খবর আলজাজিরার।
শুধু গাজা নয়, দমন-পীড়ন চলছে দখলকৃত পশ্চিম তীরেও। ইসরাইলি বাহিনী সেখানে কঠোর লকডাউন জারি করেছে। বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, রাতভর অভিযান এবং গণগ্রেপ্তারের কারণে পশ্চিম তীরের জনজীবনও স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, আন্তর্জাতিক মনোযোগ ইরানের দিকে সরে যাওয়ায় ফিলিস্তিনে দমন-পীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে ইসরাইল। এদিকে গাজায় শিশু অপুষ্টি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ইউনিসেফ বলছে, ২০২৫ সালের শুরু থেকে প্রতিদিন গড়ে ১১২ শিশু অপুষ্টি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মে মাসেই শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজারের বেশি রোগা শিশুর নাম। নিরাপদ পানি, চিকিৎসা ও পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবে এই শিশুরা মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। মে মাসের শেষ থেকে জিএইচএফের ত্রাণ কেন্দ্র থেকে খাবার নিতে গিয়ে কয়েকশ’ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন বলে দাবি করছেন গাজার স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, কেবল গত দুদিনেই (১৮ ও ১৯ জুন) জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থার নিয়ে আসা খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। তবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ইসরাইলি বাহিনী বলছে, গাজার নেতজারিম এলাকায় একদল সন্দেহভাজন লোক তাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। তাদের গতিবিধি ইসরাইলি বাহিনীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বোধ হওয়ার তাদের নিরুৎসাহিত করতে ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। তবে ওই ঘটনায় কোনো হতাহতের বিষয়ে তারা অবগত নয়। 

এদিকে খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারানোর বিষয়ে বক্তব্য জানতে জিএইচএফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল রয়টার্স। ফিরতি মেইলে সংস্থাটি অভিযোগ জানায়, গাজা স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত ভুলভাল তথ্য দিয়ে সবাইকে বিভ্রান্ত করছে। তবে হতাহতের বিষয়ে তারা অবগত কিনা, রয়টার্সের এই প্রশ্নের জবাব জিএইচএফের মেইলে ছিল না। এর মধ্যে জাবালিয়া ও শাতি এলাকায় পৃথক ইসরাইলি হামলায় অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গাজা স্বাস্থ্যকর্মীরা। এসব হামলার বিষয়ে ইসরাইলি বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি। লেখাটি শুরু হয়েছিল নাওয়াঝাকে দিয়ে। সেদিন খালি হাতে ফিরে আসতে বাধ্য হন তিনি। কয়েক কিলোমিটার হাঁটা এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পরিশ্রমে ক্লান্ত নাওয়াঝা শরণার্থী শিবিরে তার তাঁবুর বাইরেই মাটিতে শুয়ে পড়েন। এখানেই রাস্তার ওপর তিনি ও তার বোন শেষ ২০ দিন ধরে অবস্থান করছেন। তারা জানান, ত্রাণকেন্দ্রে সময়মতো গেলেও অনেক সময় তারা ধাক্কাধাক্কিতে খাবার সংগ্রহ করতে পারেন না। সেখানে খাদ্যের জন্য প্রায়ই ধস্তাধস্তি লেগে যায়। জাতিসংঘ একাধিকবার বলেছে, গাজায় প্রয়োজনের তুলনায় খাদ্য সরবরাহ খুবই অপ্রতুল। সেদিন খাদ্য সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় অভুক্ত আরেকটা দিন পার করতে বাধ্য হবে নাওয়াঝা ও তার পরিবার।

প্যানেল

×