
মার্কিন রাজনীতিতে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এবার আদালতের সঙ্গে তাঁর সংঘাত এবং নিয়ম-কানুন অমান্য করার অভিযোগ ঘিরে চাপের মুখে পড়েছেন রিপাবলিকান সিনেট প্রার্থীরা। ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে দলটির জন্য।একটি জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের আচরণে অসন্তুষ্ট সাধারণ ভোটাররা বিষয়টিকে কেবল রাজনৈতিক সংকট নয়, বরং দেশের আইনি ব্যবস্থার জন্যও হুমকি হিসেবে দেখছেন।
ভোটারদের ভরসা কমছে ট্রাম্পের প্রতি
প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য হিল-এর কাছে পৌঁছানো জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, সিনেট নির্বাচনের প্রধান রাজ্যগুলোতে ৫৩ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পের আদালত পরিচালনার ধরন নিয়ে অসন্তুষ্ট। আশঙ্কার কথা হচ্ছে, শুধু ডেমোক্র্যাট নন ট্রাম্প সমর্থক নন এমন রিপাবলিকানরাও এই বিরক্তির তালিকায় রয়েছেন।
জরিপ অনুযায়ী, ৭২ শতাংশ ভোটার মনে করেন ট্রাম্প আদালতের আদেশ যেভাবে অমান্য করেছেন, তাতে চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে। এমনকি প্রায় অর্ধেক ভোটার বলছেন, এই আচরণ তাদের চরমভাবে উদ্বিগ্ন করেছে।
আইনের চোখে সবাই সমান?
ডিম্যান্ড জাস্টিস-এর অন্তর্বর্তী নির্বাহী পরিচালক ম্যাগি জো বুচানান বলেন, “ট্রাম্প যখন আদালতের রায়কে পরামর্শ হিসেবে দেখেন, তখন সাধারণ মানুষ বুঝে নেয় আমরা যারা সাধারণ নাগরিক, তাদের জন্য বিচার ব্যবস্থা কতটা অনিরাপদ হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “এই পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে কেউ যেন ন্যায়বিচার পাবে না, তা নিয়ে মানুষের আশঙ্কা তৈরি হওয়াটা খুব স্বাভাবিক।”
আদালতের আদেশ উপেক্ষার একাধিক ঘটনা
ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ অমান্য করার অভিযোগ নতুন নয়। বছরের শুরুতে ওয়াশিংটনের একজন ফেডারেল বিচারক অভিযোগ করেন, ট্রাম্প সরকার আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভেনেজুয়েলার কিছু ব্যক্তিকে এল সালভাদরে পাঠিয়ে দেয়।
এছাড়া, ‘গালফ অফ মেক্সিকো’-এর নাম বদলে ‘গালফ অফ আমেরিকা’ রাখার বিষয়ে ট্রাম্পের নির্দেশ মানতে অস্বীকৃতি জানানোয় এপি সংবাদ সংস্থার এক সাংবাদিক ও আলোকচিত্রীকে ওভাল অফিসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি যদিও আদালত সে বিষয়ে ভিন্ন নির্দেশ দিয়েছিল।
ভবিষ্যতের বিচারপতিরা কতটা স্বাধীন হবেন?
জরিপ বলছে, ৭০ শতাংশ ভোটার মনে করেন ট্রাম্পপন্থী কংগ্রেস সদস্যরা ভবিষ্যতে এমন বিচারপতি নির্বাচন করতে চাইবেন, যারা ট্রাম্পের ইচ্ছামতো কাজ করবেন, আইনের স্বাধীনতা বজায় রাখবেন না। ৪৩ শতাংশ ভোটার এই বিষয়টিকে ‘চরম উদ্বেগজনক’ বলে মনে করছেন।
২০২৬ নির্বাচনের রাজনীতিতে এর প্রভাব কী?
জরিপটি পরিচালিত হয়েছে কলোরাডো, জর্জিয়া, মেইন, মিশিগান, মিনেসোটা, নর্থ ক্যারোলাইনা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নিউ মেক্সিকো, ওহাইও এবং টেক্সাসে। এতে অংশ নেন ১ হাজার সম্ভাব্য ভোটার। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন ডেমোক্র্যাট, রিপাবলিকান ও স্বতন্ত্র ভোটাররা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ফলাফল সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে নর্থ ক্যারোলাইনার সিনেটর থম টিলিস ও মেইনের সুসান কলিন্সকে। এই দুই রিপাবলিকান প্রার্থীর আসন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। বিপরীতে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে জর্জিয়ার সেনেটর জন অসফকে নিয়েও উদ্বেগ আছে।
আইনের প্রতি সম্মান না দেখালে তা কেবল একজন রাজনীতিবিদের নয়, গোটা ব্যবস্থার ওপর আস্থা কমে যায় এ কথাই যেন স্পষ্ট হয়ে উঠছে এই জরিপে। ভোটারদের চোখে এখন আর কেবল দল নয়, বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতাও হয়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ২০২৬ সালের নির্বাচনের মাঠে তাই ট্রাম্পের আদালত-সংঘাত হতে পারে রিপাবলিকানদের জন্য বড় এক ধাক্কা।
সূত্র:https://tinyurl.com/4xpna7bu
আফরোজা