
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার সাম্প্রতিক উত্তেজনা এক নতুন আঞ্চলিক সংঘাতের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই সংঘাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের তৎপরতা। “প্রতিরোধ অক্ষ” নামে পরিচিত ইরানপন্থী জোটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে হুথিরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।
ইসরায়েলের দিকে হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা:
কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েল কর্তৃক ইরানে হামলার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই হুথিরা প্রতিক্রিয়াস্বরূপ একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দাবি করে। ইয়েমেনের রাজধানী সানা থেকে ইসরায়েলের জাফা শহর লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয় বলে জানান হুথি সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারে।
এই হামলা শুধুমাত্র প্রতিশোধের অংশ নয়; বরং একটি কৌশলগত প্রচেষ্টা, যাতে ইসরায়েলকে একযোগে উত্তর ও দক্ষিণ দুই ফ্রন্টে মনোযোগ দিতে বাধ্য করা যায়।
লোহিত সাগরে হুথিদের হুমকি: বিপন্ন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
২০২৩ সালের শেষ ভাগ থেকে হুথিরা লোহিত সাগরে ইসরায়েল-সম্পর্কিত বাণিজ্যিক জাহাজে একের পর এক হামলা চালিয়ে আসছে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি অস্থায়ী সমঝোতা হয়, তথাপি হুথিদের আক্রমণ থেমে থাকেনি।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, যেকোনো সময় হুথিরা লোহিত সাগরে ড্রোন বা সমুদ্র মাইন হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক নৌ রুটকে অচল করে দিতে পারে। এর প্রভাব শুধু একটি দেশের উপরই নয়, গোটা বিশ্বের তেল সরবরাহ এবং পণ্য চলাচল ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।
হুথি-ইরান কৌশলগত সমন্বয়:
হুথিদের এই তৎপরতাকে একক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাজ নয়, বরং আঞ্চলিক কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকি দিচ্ছে, তেমনি হুথিরা লোহিত সাগর হয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চাপ সৃষ্টি করছে।
সৌদি আরব ও আমিরাতের ওপর সম্ভাব্য হুমকি:
ইসরায়েল-ইরান সংঘাত ঘনীভূত হলে হুথিরা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য ঘাঁটি ছাড়াও সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কৌশলগত স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাতে পারে বলে সতর্ক করেছে। অতীতে সৌদি তেল স্থাপনায় হুথিদের আক্রমণের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ কারণে নতুন করে যুদ্ধ শুরুর সম্ভাবনা সৌদি কূটনীতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
ইয়েমেনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও হুথিবিরোধীদের অস্থিরতা:
ইয়েমেনের ভেতরে থাকা হুথিবিরোধী রাজনৈতিক ও সামরিক দলগুলো সুযোগ নিচ্ছে এই আন্তর্জাতিক উত্তেজনার। তবে তাদের প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং সামরিক অদক্ষতা হুথিদের দখলে থাকা অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধারে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি হুথিরা অতিরিক্ত চাপে পড়ে, তাহলে তারা ইয়েমেনের অভ্যন্তরে সৌদি-সমর্থিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর যেমন তেল-গ্যাস ক্ষেত্র, বিমানবন্দর, পানিশোধনাগারে হামলা চালাতে পারে।
যুদ্ধের সম্ভাব্য রূপ ও বৈশ্বিক প্রভাব:
বর্তমান পরিস্থিতিতে স্পষ্ট যে, ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা এখন আর শুধুমাত্র দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। হুথিদের মতো বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তি জড়িয়ে পড়ায় এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের এক বিস্তৃত যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নিতে পারে।
যদি এই উত্তেজনা অব্যাহত থাকে, তবে তা একটি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে, যার ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া পড়বে বৈশ্বিক রাজনীতি, নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে।
রাজু