
ছবিঃ সংগৃহীত
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনাসভায় প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেছেন, “আগামী সপ্তাহেই উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নতুন সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।”
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন তিনি। বলেন, “প্রস্তাবিত নতুন আইনে আগের আইনের নিবর্তনমূলক ৯টি ধারা বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যেগুলোর আওতায় আগের আইনের ৯৫ শতাংশ মামলাই দায়ের হয়েছিল। এই ধারাগুলো বাতিল হলে সেগুলোর অধীনে করা মামলা স্বয়ংক্রিয়ভাবে খারিজ হয়ে যাবে।”
উপ-প্রেস সচিব জানান, “নতুন আইনে গুরুতর সাইবার হ্যাকিং ছাড়া অন্য কোনো অপরাধের জন্য পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতারের বিধান থাকছে না। এটি সাংবাদিকদের হয়রানি হ্রাসে বড় অগ্রগতি হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”
এছাড়া তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এই আইনের অধীনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা ইতোমধ্যেই প্রত্যাহার করা হয়েছে। নতুন আইন কার্যকর হলে দেশে মুক্ত সাংবাদিকতার পরিবেশ সৃষ্টিতে তা সহায়ক হবে।”
বক্তব্যের শুরুতে তিনি আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে এমন একটি আয়োজন করায় আয়োজকেরা বিশেষভাবে ধন্যবাদযোগ্য।” তিনি আরও বলেন, “শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য প্রশ্ন ও সমালোচনার সুযোগ থাকা জরুরি, আর সে সুযোগের নিরাপদ পরিসর নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।”
তিনি জানান, “বর্তমানে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমেও সরকারের সমালোচনা করে বক্তব্য দেওয়া যাচ্ছে, যা নিকট অতীতে কল্পনাও করা যেত না। এমনকি সরকার প্রধানকে আক্রমণ করে যেসব বক্তব্য টকশোতে দেওয়া হয়েছে, তাতেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।”
উপ-প্রেস সচিব আরও বলেন, “মুক্ত সাংবাদিকতার পথে বাধা সৃষ্টি করে এমন অতীতের অনেক চর্চাই এখন বন্ধ করা হয়েছে। রিপোর্টার নির্ধারণ, টকশো আলোচক নির্বাচন বা মিডিয়া হস্তক্ষেপ—এসব অনাকাঙ্ক্ষিত চর্চা সরকার বন্ধ করেছে।”
তিনি সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ইস্যু, সাংবাদিকদের বিদেশ গমনে পূর্বানুমতির বিধান বাতিলসহ সংশোধিত নীতিমালার নানা দিক তুলে ধরেন এবং জানান, "নতুন নীতিমালায় তিন বছরের জন্য কার্ড দেওয়া হবে, স্থায়ী-অস্থায়ী বিভাজন থাকবে না এবং পুলিশ ভেরিফিকেশনের বাধ্যবাধকতাও থাকছে না।"
অবশেষে তিনি বলেন, “মুক্ত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে শুধু আইন ও নীতিমালা সংশোধন যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন সকল পক্ষের সহনশীলতা। সরকার এর একটি অংশ মাত্র। রাজনৈতিক দল, মিডিয়া মালিক এবং সামাজিক ব্যবস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই একটি স্বাধীন ও দায়িত্বশীল গণমাধ্যম ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।”
মারিয়া