ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ

ইফতার পার্টি না করে মানুষের পাশে দাঁড়ান

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:০২, ১৪ মার্চ ২০২৪

ইফতার পার্টি না করে মানুষের পাশে দাঁড়ান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

রমজান মাসে ইফতার পার্টি না করে সেই অর্থ দিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে আট বিভাগে কৃষিপণ্যের জন্য আধুনিক সংরক্ষণাগার করারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এই অনুরোধ জানান।

এ ছাড়া বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি কমিয়ে ‘সড়ক পরিবহন (সংশোধন) আইন, ২০২৪’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ ছাড়া মন্ত্রিসভায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (সংশোধন) আইন ২০২৪ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন এবং খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট (সংশোধন) আইন ২০২৪, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট (সংশোধন) আইন ২০২৪ এবং বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট (সংশোধন) আইন ২০২৪ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ মন্ত্রিসভা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী ইফতার পার্টি না করার জন্য ইতোমধ্যে একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, যারা আগ্রহী বা যাদের সাধ্য আছে, তারা যেন সাধ্য অনুযায়ী সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ায়। ইফতার পার্টির যে টাকা, সেটি নিয়ে যেন মানুষের পাশে দাঁড়ায়। 
বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে দেশের আটটি বিভাগে কৃষি পণ্য সংরক্ষণাগার  তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী একটি আবেদন জানিয়েছেন।  সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী দুটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। এর একটি হলো- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমবায় নিয়ে একটি স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্নের আলোকে যাতে করে কৃষিভিত্তিক সমবায় গড়ে তোলা যায় সে জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় এবং পল্লী উন্নয়ন বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
আরেকটি হলো, প্রধানমন্ত্রী আট বিভাগে পর্যায়ক্রমে কৃষি পণ্য সংরক্ষণাগার তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। অসময়ে বিভিন্ন কৃষি পণ্যের দাম বেড়ে যায় বা সংরক্ষণের সুযোগ কম থাকে। সে জন্য তিনি আধুনিক সংরক্ষণাগার তৈরি করতে বলেছেন। সেখানে ভিন্ন ভিন্ন চেম্বার থাকবে। যে পণ্যের জন্য যে তাপমাত্রা, তা বজায় রেখে যাতে পণ্যগুলো সংরক্ষণ করে বাজারের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যায়, সে বিষয়ে তিনি সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন।   
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এগুলো মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত হিসেবে গৃহীত হয়েছে। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে ফলোআপ করা হবে। রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে কে কী করছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে।  
তিনি বলেন, তিন মন্ত্রণালয় কী করেছে তা জানিয়েছে। যেমন, মৎস্য মন্ত্রণালয় থেকে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাছ ও মাংস বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। সারাদেশে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম সম্পর্কে তাকে জানানো হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো  হয়েছে, বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানি ঢাকা শহরে এবং ঢাকার বাইরে অন্যান্য জায়গায় মিলগেটের রেটে পণ্য বিক্রি করবে।  
বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি কমিয়ে ‘সড়ক পরিবহন (সংশোধন) আইন, ২০২৪’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, খসড়া সংশোধিত আইনে বিভিন্ন ধারায় শাস্তি কমানো হয়েছে। ১২টি ধারায় বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি কমানো হয়েছে। এর বেশিরভাগই আর্থিক জরিমানার পরিমাণ কমানো হয়েছে। আগে তিনটি ধারায় অপরাধ অজামিনযোগ্য রাখা হলেও সেখানে এখন একটি ধারা অজামিনযোগ্য রাখা হয়েছে। 
বিদ্যমান আইনের ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন, টার্মিনালে ফি, মিটার ছাড়া চালানো, ট্রাফিক সিগন্যাল না মানা, ওভার লোড, পরিবেশ দূষণ, পার্কিং ছাড়া গাড়ি থামানো, সাধারণ নির্দেশনা না মানাসহ ১২টি ধারায় আর্থিক জরিমানা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। কারিগরি নির্দেশ না মানলে এতদিন তিন বছর জেল দেওয়ার বিধান ছিল।

এই অপরাধের সাজা আগের মতো রাখা হলেও এটিকে অজামিনযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বা ওভারলোড করা গাড়ি চালানোর পর দুর্ঘটনা হলে সেটিকে অজামিনযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য অপরাধ করা হয়েছে। এখন শুধুমাত্র দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে বা গুরুতর আহত হলে তা অজামিনযোগ্য অপরাধ হবে।
২০১৮ সালে এই আইন করা হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর নেতৃত্বে সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল এই আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে আইন সংশোধন করা হচ্ছে। খসড়ায় বলা হয়েছে,  ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তুত সংক্রান্ত অপরাধ করলে এতদিন ২ বছর জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান ছিল, সেটিকে কমিয়ে ২ বছর জেল ও ৩ লাখ টাকা করা হচ্ছে। লাইসেন্স বাতিলের পরেও যানবাহন চালালে বর্তমান আইনে ৩ মাস কারাদন্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। এটিকে বদলে ৩ মাস জেল ও ১৫ হাজার হাজার টাকা করা হচ্ছে।  
লাইসেন্স ছাড়া কন্ডাক্টরের দায়িত্ব পালন করলে এক মাস কারাদ-, ৫ হাজার টাকা জরিমানার সাজা বহাল রাখা হয়েছে। এই ধারায় এখন কন্ডাক্টরের সঙ্গে সুপারভাইজার শব্দটি যোগ করা হয়েছে। ভাড়ার চার্ট না দেখালে বা বেশি ভাড়া নিলে এতদিন ১ মাস জেল বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হতো। দুটো অপরাধ এক সঙ্গে করলে এতদিন এই শাস্তি দেওয়া হতো জানিয়ে তিনি বলেন, এখন চার্ট প্রদর্শন না করলে বা বেশি ভাড়া দাবি করলে এই সাজা দেওয়া হবে।
বিদ্যমান আইনে মিটার টেম্পারিং করলে ৬ মাস জেল, ৫০ হাজার টাকা জরিমাণার বিধান রয়েছে। আর খসড়ায় এই অপরাধের জন্য তিন মাসের কারাদ-, ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধানের পাশাপাশি, সঙ্গে এক পয়েন্ট কাটা বিধান রাখা হয়েছে। সরকার নির্ধারিত হারের থেকে টার্মিনাল চার্জ বেশি নিলে তা চাঁদাবাজি হিসেবে আমলে নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া বিধান যুক্ত করা হয়েছে। 
বর্তমান আইন অনুযায়ী ট্রাফিক সাইন ও সংকেত না মানলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। খসড়া আইনে জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে ২ হাজার টাকা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ওজন বহন করলে ৩ বছর জেল ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা বিধান কমিয়ে ১ বছর জেল, ১ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে। এর সঙ্গে চালকের এক পয়েন্ট কাটা যাবে। পরিবেশ দূষণকারী মোটরযান চালালে ৩ মাস জেল ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান কমিয়ে ১ মাস জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। 
বিদ্যমান আইনে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করালে বর্তমান আইনে ৫ হাজার জরিমানার সঙ্গে চালকের ১ পয়েন্ট কাটার বিধান রয়েছে। এটিকে বদলে শুধু এক হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে। কী অবস্থায়, কীভাবে গাড়ি চালাতে হবে সেই নির্দেশনা অমান্য করলে ৩ মাস জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান বদলে ১ মাস জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে। খসড়ায় মোটরযান মালিককে বীমা করার বিধান বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। বীমা না করলে ৩ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (সংশোধন) আইন ২০২৪ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আইনটি ২০১০ সালে প্রণীত হয়েছিল।  প্রধানমন্ত্রী আমাদের মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ভাষা শিক্ষা এবং যে ভাষাগুলো বিলীন হয়ে যাচ্ছে সেগুলোকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য গবেষণাধর্মী কাজকর্ম করার জন্য বলেছিলেন। সে জন্য একটি ট্রাস্ট করতে বলেছিলেন। সেই ট্রাস্টের মাধ্যমে এই কাজগুলো পরিচালিত হবে। সে জন্য ওই বিষয়টি আইনে সন্নিবেশিত করার জন্য এটা আনা হয়েছে। 
তিনি জানান, যে ট্রাস্টি হবে সে ট্রাস্টের মাধ্যমে বাংলা ভাষাসহ পৃথিবীর অন্যান্য ভাষা আন্দোলন বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা, বাংলা ভাষাসহ পৃথিবীর অন্যান্য ভাষা গবেষণা ও ভাষা শিক্ষা বিস্তার উদ্দেশ্যে বৃত্তি বা ফেলোশিপ প্রদান, প্রশিক্ষণ প্রদান। অনুরূপ কার্যাবলী সম্পাদন করা। দেশ ও বিদেশের বিপন্ন প্রায় লিখন বৃত্তিবিহীন ভাষাসমূহ সংগ্রহ, সংরক্ষণ, উন্নয়ন, গবেষণা কার্যক্রম, বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ কার্যক্রম সম্পাদনে সহায়তা প্রদান। এই কাজগুলো করার জন্য ট্রাস্ট গঠিত হবে এবং এই ট্রাস্টের মাধ্যমে কাজটি হবে।

×