ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

কর কমল চাল-তেল-চিনি ও খেজুরের

প্রকাশিত: ১৪:৪১, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪; আপডেট: ২৩:২৯, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

কর কমল চাল-তেল-চিনি ও খেজুরের

ভোগ্যপণ্য। ফাইল ছবি।

রমজান মাস সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুরের মতো চার পণ্যের আমদানি শুল্ক ও কর কমানো হয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগের ফলে নিত্যপণ্যের দাম কমবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি জানান, শুল্ক কমানোর সুবিধা কার্যকর করতে আগামী সপ্তাহের মধ্যে চিনি ও ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হবে। ব্যবসায়ীদের সরকার নির্ধারিত দামে বাজারে এসব পণ্য বিক্রি করতে হবে। 
এদিকে, বৃহস্পতিবার চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুরের ওপর শুল্ক ও করে ছাড় দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পণ্যগুলোতে শুল্ক ও কর ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সই করা পৃথক চারটি প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপন সূত্রে জানা যায়, চাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও কর মিলিয়ে ৪৭ দশমিক ২৫ শতাংশ কমানো হয়েছে।

বিদ্যমান শুল্ক ও কর ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূরক শুল্ক কমানো হয়েছে ২০ শতাংশ। যা সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। তবে রেয়াতি হারে চাল আমদানির পূর্বে প্রত্যেক চালানের জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম যুগ্মসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা থেকে লিখিত অনুমোদন নিতে হবে। এই সুবিধা আগামী ১৫ মে পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। 
এছাড়া পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলের ওপর প্রযোজ্য কর (ভ্যাট) ১৫ শতাংশ  থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। যা আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। চিনির ক্ষেত্রে প্রতি মেট্রিক টনে শুল্ক ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ১ হাজার টাকা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এই সুবিধা ৩১ মার্চ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। খেজুর আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও কর ৫৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৩ শতাংশ করা হয়েছে।

যার মধ্যে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে। এটি আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এনবিআর জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে। আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত খেজুরের, ১৫ এপ্রিল ভোজ্যতেলে, ৩১ মার্চ পর্যন্ত চিনিতে ও ১৫ মে পর্যন্ত চালে এই সুবিধা বলবৎ থাকবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে রমজান উপলক্ষে ভোজ্যতেল, চিনি, খেজুর ও চালের ওপর শুল্ক কমানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে গত ২২ জানুয়ারি চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুরের ওপর শুল্ক ও করে ছাড় দিতে এনবিআরে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এদিকে, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের জানান, শুল্ক কমায় আগামী সপ্তাহের মধ্যে চিনি ও ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হবে।

তেল-চিনির মূল্য নির্ধারণ নিয়ে আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, তেল ও চিনির মূল্য  বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) নির্ধারণ করে দেয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমদানিকারক এবং উৎপাদনকারীদের সঙ্গে বসে যৌক্তিক পর্যায়ে নতুন শুল্কের প্রভাব অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।  তিনি বলেন, রমজান উপলক্ষে সেই দামে বিক্রি হবে। এছাড়া এ বিষয়ে এনবিআরের সঙ্গেও বৈঠক করা হবে। উৎপাদক যারা আছে তারা কবে পণ্য আনছে সে হিসাব করে আগামী সপ্তাহের মধ্যে বসে নতুন শুল্কের হিসাব অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করবে সরকার।

উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যেসব মাল ট্রানজিটে আছে তা দ্রুত খালাস করে বাজারজাত করতে হবে। যাতে করে শুল্ক সুবিধা সাধারণ  ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছায়। এছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পণ্য সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে জরুরি আইনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে  হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।  

সরকার দাম বেঁধে দিলেও বাজারে প্রতফলিত হয় না, এ বিষয়ে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের একাধিক আইন আছে বাজার মনিটরিং করার। প্রথমে ভোক্তা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজার মনিটরিং করবে। দাম বেশি নেওয়ার কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। 
তিনি বলেন, এছাড়া দেশে কৃষি বিপণন আইন আছে সেটিও প্রয়োগ করা হবে। দেশে ১৯৫৬-এর অত্যাবশকীয় পণ্য আইন আছে সে আইনেও অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রয়োজনে জরুরি আইনে যারা নির্দেশনা অমান্য করে পণ্য সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, পুলিশিং করে বাজার ব্যবস্থাপনা করা যায় না। আমরা আজকে যেটা করলাম (শুল্ক কমানো) সেটা বাজার ব্যবস্থাপনার একটা অংশ।

যাতে উৎপাদক এবং আমদানিকারকরা তাদের দামটা যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারে। আমরা পুলিশিং করতে চাই না। আমি আশা করব, রমজান মাস ধর্মীয় অনুভূতির ব্যাপার। তাই উৎপাদক থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা রমজানের ভাবগাম্ভীর্যকে মাথায় রেখে মূল দামের চেয়ে ছাড় দিয়ে ব্যবসা করবে। তিনি বলেন, অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এম হাসান

×