ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কেট-শপিংমলে ভিড়

সবার নজর পহেলা বৈশাখ, ঈদের পোশাকে

এম শাহজাহান

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ৩০ মার্চ ২০২৩

সবার নজর পহেলা বৈশাখ, ঈদের পোশাকে

খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন মার্কেটে ঘুরে ঘুরে পোশাকসামগ্রী কিনছিলেন

খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন মার্কেটে ঘুরে ঘুরে পোশাকসামগ্রী কিনছিলেন বাসাবোর বাসিন্দা নাজনীন নাহার। কেনাকাটা শেষে খুশি মনে হাতভর্তি শপিংব্যাগ নিয়ে ফিরছিলেন আপন ঠিকানায়। পহেলা বৈশাখ ও ঈদ সামনে রেখে তার এই কেনাকাটা। ঢাকার মার্কেট, শপিংমল ও ফ্যাশন হাউসগুলোতে এখন পহেলা বৈশাখ ও ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়ে গেছে। যারা ইতোমধ্যে মার্চ মাসের বেতন পেয়ে গেছেন, তারা আগে-ভাগে 
ছুটে আসছেন মার্কেটে। করছেন কেনাকাটা। ভিড় বাড়তে শুরু করছে মার্কেটগুলোতে। আর যারা আগামী সপ্তায় বেতন ও পহেলা বৈশাখের উৎসবভাতা পাবেন তারা কেনাকাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে এবার নতুন কি পোশাক-আশাক এসেছে মার্কেটগুলোতে সে বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন নগরবাসী। এ মুহূর্তে সবার নজর পহেলা বৈশাখ ও ঈদের পোশাকের দিকে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনা মহামারির প্রকোপ না থাকায় প্রায় তিনবছর পর এবার প্রাণখুলে মুক্ত বাতাসে পহেলা বৈশাখ ও ঈদ উদ্যাপন করবেন সারাদেশের মানুষ। এ কারণে এবার সাধ্যমতো সবাই কেনাকাটা করবেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে পহেলা বৈশাখ ও ঈদকে ঘিরে। এবার বাহারি সব পোশাক, জুতা ও কসমেটিক্সের কালেকশন বাড়ানো হয়েছে। রমজান মাসজুড়ে বেচাবিক্রির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্যসামগ্রী সংগ্রহ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

ইতোমধ্যে বেচাবিক্রি শুরু হয়ে গেছে। দুপুরের পর থেকে ভিড় বাড়ছে মার্কেটগুলোতে। দিন শেষে সন্ধ্যা গড়িয়ে এলে ক্রেতাদের পদচারণায় মার্কেটগুলো আরও বেশি মুখরিত হয়ে উঠছে। দর্জিপাড়ায় ঢুকলে মেশিনের শব্দে কানে তালা লেগে যাবে-যে কারো! দর্জিরা নতুন নতুন পোশাকের অর্ডার নিচ্ছেন। থান কাপড় কিনে সবাই ছুটছেন নগরীর অভিজাত দর্জি পাড়ায়। তৈরি করছেন পাঞ্জাবি, থ্রিপিস, ব্লাউজ, শার্ট-প্যান্টসহ বাহারি সব পোশাক। 
জানা গেছে, আগামী ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ পালিত হবে সারাদেশে। এর ঠিক সপ্তাহখানেক বাদে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হবে। মূলত এই দুই উৎসব ঘিরে জমে উঠেছে সব ধরনের কেনাকাটা। সূত্রমতে, আগামী রবিবার সরকারি চাকরিজীবীরা মার্চ মাসের বেতন পেয়ে যাবেন। যদিও এরই মধ্যে অনেক বেসররকারি ব্যাংক ও কোম্পানি তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ করেছেন। আর আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে পহেলা বৈশাখের উৎসবভাতা পেয়ে যাবেন সরকারি- বেসরকারি চাররিজীবীরা। ফলে মার্কেটগুলোতে বেচাকেনা বেড়ে গেছে।

এছাড়া প্রবাসীরা তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন। গত এক বছরের মধ্যে মার্চ মাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিটেন্স এসেছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র। ইতোমধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার রেমিটেন্স দেশে এসে পৌঁছেছে। এই টাকারও কেনাকাটা শুরু হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে দেশে নগদ টাকার প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় মার্কেটগুলোতে বেচাবিক্রি বেড়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, আসলে শবে-বরাতের পর থেকে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়ে যায়।

এবার করোনার প্রকোপ না থাকায় মানুষ সাধ্যমতো কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, পোশাকসামগ্রী উৎপাদন থেকে শুরু করে পাইকারি মার্কেটে বেচাবিক্রি শেষের পথে। এখন খুচরায় বেচাকেনা চলছে। ঈদের চাঁদ রাত পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা বেচাবিক্রি চালিয়ে যাবেন। এর সঙ্গে এবার রোজার মধ্যে পহেলা বৈশাখের উৎসব রয়েছে। সব মিলিয়ে মার্কেটগুলোতে ঈদের উৎসব শুরু হয়েছে। আশা করছি এবার ব্যবসা-বাণিজ্য গত কয়েক বছরের মধ্যে ভাল হবে। 
এদিকে, রাজধানীর প্রধান প্রধান বিপণিবিতান ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্র কেনাকাটার জন্য ভিড় করছেন নগরবাসী। ঢাকার নিউমার্কেট, গাউসিয়া এবং বসুন্ধরা শপিংমলে গিয়ে দেখা যায় প্রায় প্রতিটি দোকানে ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। রাজধানীসহ দেশব্যাপী কেনাকাটায় বইছে অনেকটা বৈশাখী ঝড়। পহেলা বৈশাখ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে জমে উঠেছে শপিংমল, ফ্যাশন হাউস ও বিপণিবিতানগুলো। বাদ পড়ছে না ফুটপাতও। বাংলার আবহে তৈরি ফতুয়া, পাঞ্জাবি, শার্ট, থ্রিপিস ও শাড়ির পসরা সাজিয়ে বসছেন দোকানিরা। আর দুসপ্তাহ পরে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন করবে বাঙালি জাতি।

যে কারণে বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম এ দিনটি উদ্যাপন উপলক্ষে ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি শেষ করে বেচাবিক্রিও শুরু করেছেন। আর ঝামেলা এড়াতে ক্রেতারা ইতোমধ্যে তাদের পছন্দসই পণ্য কিনতে ভিড় করছেন রাজধানীর অভিজাত মার্কেট থেকে শুরু করে ফুটপাতের দোকানগুলোতে। বিক্রেতারা জানান, প্রতিদিন ক্রেতা বাড়ছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের উপস্থিতিতে তারা সন্তুষ্ট। একই অবস্থা মৌচাক মার্কেটেও। এখানে থ্রি-পিস, শাড়ি, গয়না, বোরকা আর শিশুদের কাপড়ের দোকানে ভিড় লক্ষ্যণীয়।

বেইলি রোডের ইয়েলো, আর্টিসান, সাদাকালো, অঞ্জনস ছাড়াও নাভানা মার্কেটের সব দোকানেই ভিড় করছেন ক্রেতারা। তবে এবার দাম নিয়ে তাদের কিছুটা অভিযোগ রয়েছে। শান্তিনগর থেকে মার্কেট করতে আসা শামীমা নাসরীন জানান, এবার পোশাকের দাম একটু বেশি রাখা হচ্ছে। মূল্য বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করে মগবাজার আড়ংয়ের বিক্রয়কর্মী মোর্শেদুল ইসলাম জানান, বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। একদিকে ডলার সংকট অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ফলে অর্থনীতির অন্যান্য খাতের মতো পোশাকের বাজারেও বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। তিনি জানান, তবে এটা ঠিক অন্যান্য দেশের তুলনায় এখনো বাংলাদেশে জিনিসপত্রের দাম কম। পোশাকের দামও সেই তুলনায় কম রাখা হচ্ছে। 
দর্জি পাড়ায় পোশাক বানানোর ধুম ॥ ঈদকে সামনে রেখে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন রাজধানীবাসী। নতুন পোশাক আর হরেক রকমের কেনাকাটায় উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে শহরজুড়ে। আর অনেকেই পছন্দের কাপড় কেনাকাটা শেষে তা বানাতে এখন ভিড় জমাচ্ছেন দর্জির দোকানগুলোতে। রাজধানীতে দর্জির দোকানগুলোতে যন্ত্রের শব্দ যেন জানান দিচ্ছে ঈদ আসতে আর দেরি নেই। শবে-বরাতের পর থেকেই নতুন পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দর্জিপাড়ার কারিগররা।

ঈদের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত চলবে তাদের এই ব্যস্ততা। রোজার প্রথম দিকে কাজের চাপ কম থাকলেও এখন দিন-রাত দর্জিপাড়ার কারিগরদের চোখে যেন ঘুম নেই। এই কারিগররা তাদের পরিবার-পরিজন ছেড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন নানা নক্সার পোশাক তৈরিতে। সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। কারও সঙ্গে কারও কথা বলারও ফুরসত নেই। কারও গলায় ফিতা, কারও হাতে কাঁচি আবার কেউবা জামা সেলাই করছেন। যেন দম ফেলারও সময় নেই তাদের। গ্রাহকদের মাপ অনুযায়ী সালোয়ার, কামিজ, শার্ট, প্যান্ট ও পাঞ্জাবি তৈরির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।

মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য মজুরির বিনিময়ে তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। ‘দর্জিপাড়া’ খ্যাত রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর রমনা ভবন, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, গাউসিয়া, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও মিরপুরের বিভিন্ন টেইলার্সে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কাপড় তৈরি কারিগরদের এখন দম ফেলার সময় নেই। কাপড় সেলাইয়ের মেশিনের শব্দ একটানা একঘেয়ে, নাকি ছন্দময় তা চিন্তারও সুযোগ নেই তাদের। বাংলাদেশ ড্রেস মেকার অ্যাসোসিয়েশনের সূত্রমতে, রাজধানীসহ সারাদেশে তালিকাভুক্ত লক্ষাধিক টেইলার্স রয়েছে। তবে মান ভালো টেইলার্সের সংখ্যা হবে হাজারের মতো। বাকি ৭৫ হাজার অতি সাধারণ মানের এবং ছোট পরিসরের। পোশাক কারিগররা জানিয়েছেন, সারা বছরে যে কাজ করেন তার চেয়ে দ্বিগুণ কাজ করতে হয় বিভিন্ন উৎসবে।
১০ এপ্রিলের মধ্যে নববর্ষ ভাতা ॥ আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে নববর্ষ ভাতা পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সার্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখের আনন্দ বাড়িয়ে দিতে ২০১৬ সাল থেকে প্রতিবছর এই ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এর আগে বাংলাদেশে দুটি উৎসব ভাতার প্রচলন ছিল। মুসলমান চাকরিজীবীরা ঈদে এবং অন্য ধর্মাবলম্বীরা নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসবের সময় এসব ভাতা সুবিধা পেতেন। এক্ষেত্রে প্রতিটি ভাতার পরিমাণ এক মাসের মূল বেতনের সমান। ধর্ম নির্বিশেষে একসঙ্গে সবাইকে উৎসবের আমেজ দিতে নতুন বেতন কাঠামোতে প্রথমবারের মতো নববর্ষ ভাতা চালু করে সরকার। 
শপিংমলে অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা ॥ ঈদ সামনে রেখে শপিংমলে-অনিয়ম পেলে-মার্কেট-কমিটির-বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, আমরা চাই সবাই আইন মেনে ব্যবসা করুক এবং ভোক্তাগণ যেন ন্যায্যমূল্যে পণ্য পান। শপিংমলগুলোতে অনিয়ম পেলে মার্কেট কমিটিকে দায়ী করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাজধানীর কাওরানবাজারের টিসিবি ভবনে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে বৃহস্পতিবার এক মতবিনিময় সভায় এমন হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তৈরি পোশাক-কাপড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন নিয়ে এ মতবিনিময় সভা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, ডিজিএফআইয়ের প্রতিনিধি, এনএসআইয়ের প্রতিনিধি, টিসিবির প্রতিনিধি, আড়ং, আর্টিসান, অঞ্জনস, টপ টেন, লুবনান, নগরদোলা, রং বাংলাদেশের মতো ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিরা। 
মুরগি ও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি ॥ শুধু মুরগিই নয়, বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে যেসব অসাধু ব্যবসায়ী ফায়দা লুটছেন, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনটির অভিযোগ, মুরগির দাম বাড়িয়ে হাজার কোটি টাকার বেশি লাভ করেছেন ব্যবসায়ীরা। 
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে ক্যাবের নেতারা এসব কথা বলেন। কর্মসূচিতে সংগঠনটির নেতাকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবীর ভূঁইয়া বলেন, ব্যবসায়ীরা কথা দিয়েছিলেন রোজায় কোনো পণ্যের দাম বাড়বে না। কিন্তু দেখা গেল, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগিতেই ১০০ টাকার ওপরে লাভ করেছেন তারা। এভাবে ভোক্তাদের পকেট থেকে হাজার কোটি টাকা লুটে নেওয়া হয়েছে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় তারা আরও অনেকে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে।
ক্যাবের সহসভাপতি নাজের হোসাইন বলেন, কখনো ব্রয়লার মুরগি, আবার কখনো চিনি কিংবা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়। বছরজুড়ে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা চলছেই। 

×