নিজস্ব সংবাদদাতা, মোহনগঞ্জ ॥ ১০ শয্যা বিশিষ্ট তেঁতুলিয়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ৪ বছরেও হয়নি কোন প্রসূতির ডেলিভারি।
প্রায় দিনই হাসপাতালটি তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকায় এলাকার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। চিকিৎসা নিতে এসে ঘুরে যেতে হয় এলাকার রোগীদের। সোমবার সকালে চিকিৎসা নিতে আসেন তেঁতুলিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের স্ত্রী হতদরিদ্র জমিদারেরমা (৭০)। এসে হাসপাতালটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পান। কোন ডাক্তার, নার্স বা কর্মচারীও নেই হাসপাতালে। পরক্ষণেই আসেন একই গ্রামের মাসুদা আক্তার (৪০)। তিনি গাইনী সমস্যা নিয়ে আসেন। কিন্তু হাসপাতালে তালা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তেঁতুলিয়া গ্রামে ঝুটন মিয়া জানান, সপ্তাহে ১ দিন, কোন সপ্তাহে ২ দিন আসেন ডাক্তার পল্লব শাহা। তবে থাকে না কোন ওষুধ। এ সময় এলাকার রোগীরা বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিতে ভিড় করেন। হাওড়াঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটি করা হলেও তা এখন হাওড় পাড়ের মা ও শিশুদের কোন কাজে আসছে না। সোমবার সকালে সরেজমিনে গেলে, হাসপাতালটি বন্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। খোঁজ করে শিল্পি ¤্র্রং নামে এক সহকারী নার্সের দেখা মেলে। তিনি জানান, এখানে নার্স সঙ্কটে কোন প্রসূতি মায়ের চিকিৎসা হয় না, হাসপাতাল খোলা থাকলে রোগী আসে, তবে সপ্তাহে তিন-চারদিন হাসপাতাল বন্ধ থাকে। হাসপাতালটির ডেলিভারি রুম ও বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহৃত না হওয়ায় অধিকাংশ যন্ত্রাংশে জং ধরে নষ্ট হয়ে পড়ছে।
নার্স কামরুন্নাহারকে ফোন দিলে তিনি জানান, গত চার বছরেও কোন প্রসূতি মায়ের এ হাসপাতালে ডেলিভারি হয়নি। তবে প্রায় দেড় বছর আগে তেঁতুলিয়া গ্রামের একজন প্রসূতি ডেলিভারি করতে আসেন। তাকে ডেলিভারি করার সময় তার সন্তান মারা যায়। এরপর আর কোনও মা এখানে আসেননি। দায়িত্বে থাকা মেডিক্যাল অফিসার পল্লব সাহা জানান, তেঁতুলিয়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে জনবল সঙ্কটে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। মেডিক্যাল অফিসার, মেডিক্যাল টেকনোলজি নার্সসহ ১০ পদের মধ্যে ১ জন মেডিক্যাল অফিসার আর একজন নার্স রয়েছেন। ৮টি পদ খালি থাকায় হাসপাতালে ডেলিভারি রুমসহ সব ধরনের সুবিধা থাকলেও ডেলিভারি করা সম্ভব হচ্ছে না। জরুরী ডেলিভারি রোগীদের মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অথবা ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। এতে অনেক প্রসূতির ময়মনসিংহ নেয়ার পথে গাড়িতেই ডেলিভারি হয়। এতে রোগী ও সন্তান দুজনেই থাকে মৃত্যু ঝুঁকিতে। তেঁতুলিয়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটিতে চিকিৎসক ও নার্স থাকলে হাওড়াঞ্চলের মা ও শিশুরা চিকিৎসা সেবা পাবে।