
জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ আবহওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলায় ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। অন্যদিকে করোনার ক্রান্তিকালে উৎসবের আমেজে ধান কাটছেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের কৃষকরা। এদিকে বুধবার উৎসবমুখর পরিবেশে কিশোরগঞ্জের হাওড়াঞ্চলে ধান কাটার উদ্বোধন করেছেন কৃষক লীগের নেতারা। এছাড়া সুনামগঞ্জে এ বছর হাওড়ে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল। কিন্তু আবহাওয়ার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যশোরের চৌগাছায় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় প্রণোদনার কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার দিয়ে ধান কাটা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের।
মাগুরা ॥ আবহওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে মাগুরায় ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক। ফলে এক মুহূর্ত বসার সময় নেই কৃষকের হাতে। জানা গেছে, মাগুরা জেলার সর্বত্র এ বছর ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। মাঠের পর মাঠ পাকা ধান দেখে কৃষকের প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। কৃষকরা জানান, সকাল থেকে বিকেলঅবধি চলছে পাকা ধান কাটার কাজ। এরপর রৌদ্রে শুকিয়ে ধানের আঁটি বাড়িতে এনে মাড়াই করতে হবে। ফলে এক মুহূর্ত বসার সময় নেই। ভাল ফলন হওয়াতে কৃষকের মধ্যে খুশির ভাব দেখা যাচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ ॥ করোনার ক্রান্তিকালেও খোশ মেজাজে ধান কাটতে শুরু করেছেন শাহজাদপুরের কৃষকেরা। চলতি বোরো মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে না আসায় শাহজাদপুরে বোরো ধানের ফলন অতীতের তুলনায় বেশ ভাল হয়েছে। ইতোমধ্যেই নদী তীরবর্তী নিচু স্থানে ও বিভিন্ন নিচু নালায় রোপিত স্থানীয় বোরো জাতের ধান (আগুর ধান) পেকে যাওয়ায় কৃষকেরা করোনার ক্রান্তিকালের মধ্যেও হাসি-খুশি মনে ধান কাটতে শুরু করেছেন। এবার ধানের ফলনও বেশ ভাল হয়েছে বলে কৃষকেরা জানিয়েছেন। শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর শাহজাদপুর পৌর এলাকাসহ ১৩টি ইউনিয়নে মোট ২২ হাজার ৮শ’ ৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছে কৃষকেরা। ইতোমধ্যেই বোরো স্থানীয় জাতের ধান পেকে যাওয়ায় তা কাটা শুরু হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে উফশী জাতের ধানও পেকে যাবে এবং এক সপ্তাহ পর কৃষকেরা পুরোদমে ধান কাটার কাজে লেগে যাবেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। ধান রোপণ থেকে কৃষকের ঘরে তোলা পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে কৃষকদের উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ দেয়াসহ নানা ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ ॥ উৎসবমুখর পরিবেশে কিশোরগঞ্জের হাওড়াঞ্চলে ধান কাটার উদ্বোধন করেছেন কৃষক লীগের নেতারা। বুধবার দুপুরে জেলার করিমগঞ্জের সুতারপাড়া গেরাজুরের হাওড়ে কৃষক জালাল মিয়ার জমির ধান কাটার মাধ্যমে এ কর্মসূচীর উদ্বোধন ঘোষণা করেছে কৃষক লীগ। কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপির নেতৃত্বে জেলা ও উপজেলার শতাধিক নেতাকর্মী ধান কাটায় অংশ নেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কৃষক লীগের নেতারা হাওড়ে ধান কাটার মাধ্যমে সারাদেশের ধান কাটা উদ্বোধন ঘোষণা করেন। করোনাকালীন সময়ে যেখানেই ধান কাটার শ্রমিকের সঙ্কট পড়বে, সেখানেই ধান কেটে মাড়াই ঝাড়াই করে কৃষকের গোলায় ধান তুলে দিয়ে কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন কৃষক লীগের নেতারা। জমির ধান কেটে দেয়ায় কৃষক জালাল মিয়া অনেকটা আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলেন, করোনার এই সময়ে আমরা যখন শ্রমিকের অভাবে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারব কিনা সেই দুঃশ্চিন্তায় ভুগছিলাম, তখন কৃষক লীগ ধান কেটে দিয়ে আমাদেরকে ঋণী করে দিয়েছে। তিনি কৃষক লীগের নেতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, শেখ হাসিনার সরকার যে সত্যিকার অর্থেই কৃষকবান্ধব সেটা আজ প্রমাণিত হলো।
সুনামগঞ্জ ॥ এ বছর হাওড়ে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল। কিন্তু ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা আর আবহাওয়ার আগাম পূর্বাবাস ভাবিয়ে তুলছে কৃষকদের। তার ওপর শীষ কাঁঠাল নামক পোকার উপদ্রবে ফসলি জমি নষ্ট হয়ে গেছে পাশাপাশি শিলাবৃষ্টি আর কালবৈশাখী ঝড় থেকে আসা গরম হওয়া নতুনভাবে চিন্তায় ফেলেছে। এসব উপেক্ষা করেও শ্রমিক সঙ্কট ও লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যেও হাওড়ে ধান কাটতে নেমেছেন হাওড়াঞ্চলের কৃষকেরা। জেলার শাল্লা উপজেলার ভেড়াডহর ও ছায়ার হাওড় ঘুরে সরেজমিন দেখা যায়, কৃষকরা দুুঃখভরা বেদনা নিয়ে ধান কাটা শুরু করেছেন। তবে কৃষকদের ধান কাটা নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও জরুরী মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার বেলা ১টায় উপজেলা কনফারেন্স হলরুমে শিক্ষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি নিয়ে পরামর্শ সভা করেছেন ইউএন আল মোক্তাদির হোসেন। পরামর্শ সভায় বিভিন্ন দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য উঠে আসে। সভায় বক্তারা বলেন, কৃষকরা যেন সুন্দরভাবে হাওড়ের ধান ঘরে তুলতে পারেন সেই লক্ষ্যে সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
যশোর ॥ যশোরের চৌগাছায় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় প্রণোদনার কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার দিয়ে ধান কাটা কার্যক্রমের উদ্ভোধন করা হয়েছে। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের চাঁদপাড়া গ্রামের জিসিবি কলেজের পাশর্^বর্তী মাঠের ২৫ কাঠা একটি খেতের ধান কাটার মধ্য দিয়ে এই ধান কাটা উদ্বোধন করা হয়। এ সময় মাত্র ৩৫ মিনিটে কৃষক শুকুর আলীর ২৫ কাঠা জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়। এ উপলক্ষে জিসিবি আদর্শ কলেজ মাঠে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। উপজেলা কৃষি অফিসার রইচ উদ্দিন জানান, এই হার্ভেস্টারে প্রতি ঘণ্টায় দেড় একর জমির ধান কেটে মাড়াই করে দেয়া যাবে। এই মেশিনে শুষ্ক খেত বিঘাপ্রতি (৩৩ শতাংশ) ১৮শ’ টাকা এবং কর্দমাক্ত খেত বিঘাপ্রতি ২ হাজার থেকে ২২শ’ টাকায় কেটে মাড়াই করে দেয়া যাবে।
বরগুনা ॥ পায়রা নদীর পানি লবণাক্ততায় ভরে গেছে। এতে উপকূলীয় অঞ্চলের মানবদেহ, প্রাণিকুল ও কৃষিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। আগামী আউশ চাষ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকরা। দ্রুত নদ-নদীর লবণাক্ততা দূর না হলে উপকূলীয় অঞ্চলের জমি চাষাবাদ অনুযোগী হয়ে পড়বে বলে ধারণা করছেন সচেতন নাগরিকরা। বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আলম বলেন, ফারাক্কা বাঁধ কর্তৃপক্ষ পানি না দেয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে উজানের পানির চাপ নেই। বিধায় সাগরের লবণাক্ত পানি নদ-নদীর শাখা-প্রশাখার প্রবেশ করছে। তিনি আরও বলেন, গত ২৫ বছরে শাখা নদীগুলোতে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। জানা গেছে, গত বছর চৈত্র মাসের শুরুতে অমাবস্যার জোতে সাগরের লবণাক্ত পানি পায়রা নদী ও শাখা নদীতে প্রবেশ করে। এরপর থেকে গত এক মাস ধরে লবণাক্ত পানিতে উপকূলীয় অঞ্চল ছড়িয়ে পড়েছে। লবণাক্ত পানি উপকূলীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ায় মানবদেহ, প্রাণিকুল ও কৃষিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। মানবদেহে লবণের সহনীয় মাত্রা ১৩৮ মিলি মোল/ লিটার। কিন্তু নদ-নদীতে লবণের মাত্রা অনেক বেশি। এতে উপকূলীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া। কৃষি জমিতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। লবণাক্ত পানিতে নিম্নাঞ্চলের রবি ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। শঙ্কা দেখা দিয়েছে আগামী আউশ চাষে। লবণ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মাটিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততার সৃষ্টি হয়েছে। এতে কৃষক আউশ ধানের বীজতলা তৈরি করতে পারছে না। আগামী মৌসুমে আউশ ধানের আবাদ নিয়ে দুশ্চিতায় পড়েছে কৃষকরা। এদিকে লবণাক্ত পানি উপকূলীয় অঞ্চল আমতলী-তালতলী সংলগ্ন পায়রা নদী ও শাখা নদীতে প্রবেশ করায় মানবদেহে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। গত ১৬ মার্চ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক হাজার ২৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন এ তথ্য উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। সরকারী হিসাবে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা এক হাজার হলেও বেসরকারী মতে, উপজেলায় ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচগুণ ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।