ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যায় ১৪ জেলায় প্রাণহানি ৭৫ ॥ ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ২৯ জুলাই ২০১৯

 বন্যায় ১৪ জেলায়  প্রাণহানি ৭৫ ॥ ত্রাণ  প্রতিমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেছেন, বন্যায় দেশের ১৪ জেলায় এ পর্যন্ত ৭৫ ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটেছে। রবিবার সচিবালয়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতি ও ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান। গত ৬ থেকে ৭ জুলাই সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কয়েকটি নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১০ জুলাই উজান থেকে নেমে আসা পানি ও দেশের ভেতরে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ক্রমান্বয়ে ২৮ জেলার বিভিন্ন এলাকা বন্যাকবলিত হয়। বন্যা দেখা দেয়া জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, শেরপুর, টাঙ্গাইল, জামালপুর, বগুড়া, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুর। এর মধ্যে বন্যায় সুনামগঞ্জে ২, গাইবান্ধায় ৪, শেরপুরে ১১, বান্দরবানে এক, নেত্রকোনায় এক, লালমনিরহাটে এক, কুড়িগ্রামে ১৪, চট্টগ্রামে ৫, সিরাজগঞ্জে ৪, জামালপুরে ২২, টাঙ্গাইলে ৩, ফরিদপুরে একজন, মাদারীপুরে এক ও মানিকগঞ্জে একব্যক্তি মারা গেছেন। এনামুর রহমান বলেন, এদের মধ্যে পানিতে ডুবে ৬৭, নৌকা ডুবে ৪ ব্যক্তি মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে শিশু ৫৬ জন, পুরুষ ১৩ জন ও মহিলা ছয়জন। বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বন্যা দীর্ঘমেয়াদী হলেও ত্রাণের কোন সমস্যা হবে না। তবে বন্যা দীর্ঘায়িত হবে না। পানি দু-এক দিনের মধ্যে কমে যাবে। বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরে দুর্যোগ-ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২৭ জুলাই পর্যন্ত জিআর (গ্র্যান্ট রিলিফ) চাল মোট বরাদ্দ ২৭ হাজার ৩৫০ টন। জিআর ক্যাশ (নগদ) বরাদ্দ চার কোটি ৬১ লাখ টাকা। এছাড়া জামালপুরে নৌকা কেনার জন্য আরও ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা ক্যাশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বন্যাদুর্গতদের জন্য তিন হাজার ৯০০ বান্ডিল ঢেউটিন, ঘর নির্মাণের জন্য এক কোটি ১৭ লাখ টাকা, এক লাখ ১৩ হাজার কার্টন শুকনো খাবারের প্যাকেট, শিশুখাদ্য কেনার জন্য ১৮ লাখ টাকা, গরুর খাবার কেনার জন্য ২৪ লাখ টাকা এবং আট হাজার ৫০০ সেট তাঁবু বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা বন্যা মোকাবেলায় সব সময় সতর্ক আছি। আমরা প্রতি মুহূর্তে বন্যার্তদের খোঁজ-খবর রাখছি। এবার সমন্বিত কাজের ফলে বন্যার ক্ষতি অনেকাংশে কাটিয়ে উঠতে পেরেছি এবং সফলভাবে বন্যা মোকাবেলা করতে পেরেছি। এবার বন্যায় মানুষ দাবি করেছে আমরা ত্রাণ চাই না, আমরা বাঁধ চাই। আমরা বারবার বন্যাকবলিত হতে চাই না। আমরা দুর্যোগসহনীয় বাংলাদেশ চাই। সেই ভিত্তিতে আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছি, আমরা জনগণের দাবি পৌঁছে দিয়েছি। সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। এনামুর রহমান বলেন, আগামীতে সেভাবে কাজ করতে পারলে মানুষ আর বন্যায় কষ্ট পাবে না। গত ২১ জুলাই আমরা জাপানের জাইকার সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা জাইকাকে প্রস্তাব দিয়েছি- আমাদের বড় নদীগুলোকে দু’পাড়ে বাঁধ দিয়ে বন্যাসহনীয় করার জন্য। জাপান আমাদের কথা দিয়েছে, এই সপ্তাহে জাপানের সঙ্গে তৃতীয় দফা মিটিং হবে। তৃতীয় দফা মিটিংয়ে আমরা সেই কাজগুলো করার জন্য একটা চুক্তি করতে পারব। সরকারের দেয়া ত্রাণ পর্যাপ্ত কিনা, অভিযোগ আসছে, অনেকে ত্রাণ পাচ্ছে না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল বলেন, বন্যা আসলে সবাই আক্রান্ত হবে, কিন্তু আমরা সবাই কি ত্রাণ চাই? দেশের ২২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। ওই ২২ শতাংশ ত্রাণ পেতে পারে। সেই হিসেবে দেখুন আমাদের দেয়া ত্রাণ পর্যাপ্ত কিনা। কোথায় ত্রাণ পাচ্ছে না- তা সুনির্দিষ্টভাবে বললে আমরা সেখানে ব্যবস্থা নেব। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬০ লাখ ৭৪ হাজার মানুষ। সংবাদ সম্মেলনে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির চিত্রও তুলে ধরেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব। তার তথ্য অনুযায়ী সর্বশেষ রবিবারের তথ্য অনুযায়ী বন্যায় ২৮ জেলার ৬০ লাখ ৭৪ হাজার ৪১৫ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ২৮ জেলার ১৬৩ উপজেলা, ৪৯ পৌরসভা, ৯৬১ ইউনিয়ন এবং ৬ হাজার ৫৩ গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৪৭৮ ঘরবাড়ি, এক লাখ ৫৩ হাজার ৭৩৩ একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪৫ গবাদিপশু, ২২ হাজার ৩৩৯ হাঁস-মুরগি মারা গেছে বন্যায়। এছাড়া ৪ হাজার ৯৩৯ শিক্ষা বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ৭ হাজার ২৭ কিলোমিটার সড়ক, ২৯৭ ব্রিজ বা কালভার্ট, ৪৫৯ কিলোমিটারে বাঁধ, ৬০ হাজার ২৮৯ টিউবওয়েল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
×