ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন

প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ৩০ নবেম্বর ঢাকা আসছেন পোপ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৮ নভেম্বর ২০১৭

প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ৩০ নবেম্বর ঢাকা আসছেন পোপ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পোপ ফ্রান্সিসের আগমনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। বাংলাদেশে বসবাসরত ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে পোপের আগমনের মূল উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর আন্তরিক আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েই পোপ আসছেন। পোপের অবস্থানকালে বাংলাদেশে সরকারী উদ্যোগে কঠোর নিরাপত্তাসহ প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আর খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। পোপের আগমন ঘিরে রাজধানীতে বিশেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সারাদেশ থেকে প্রায় ৮০ হাজার খ্রিস্টভক্তের আগমন ঘটবে। আগামী ৩০ নবেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত পোপ ফ্রান্সিস বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। বাংলাদেশে পোপ ফ্রান্সিসের সফর উপলক্ষে সোমবার রমনার কাকরাইলে বাংলাদেশ ক্যাথলিক বিশপ সম্মিলনী (সিবিসিবি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কার্ডিনাল এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আর্চ বিশপ (চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আর্চ ডায়সিস) মোজেস এম কস্তা, বিশপ জেভার্স রোজারিও, বিশপ সেবাস্টিয়ান টুডু, বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস, বিশপ সুব্রত হাওলাদার, বিশপ রমেন বৈরাগী। সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন ফাদার কমল কোড়াইয়া ও ফাদার বুলবুল আগস্টিন রিবেরু। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খ্রিস্টান এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, কারিতাসের কর্মকর্তা থিউফিল নকরেক, দৈনিক জনকণ্ঠের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার নিখিল মানখিন প্রমুখ। পোপের মহানুভবতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সিবিসিবির সভাপতি কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও বলেন, পোপ ফ্রান্সিস বিশ্বের প্রায় ১৩০ কোটি ক্যাথলিক সম্প্রদায়কে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। শুধু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য নয়, সকল মানুষের জন্যই বাংলাদেশে তার আগমন ঘটবে। তিনি যীশুখ্রীস্টের দৃশ্যমান প্রতিনিধি, কিন্তু তিনি সকলের। আপন ধর্মের মাধ্যমে তিনি সব ধর্মের অন্তর্নিহিত স্থানে প্রবেশ করেন। তিনি সর্বজনীন। বিশ্ব শান্তির প্রতীক হিসেবে তিনি কাজ করছেন। সব মানুষের কথা বলেন তিনি। সব ধর্মের প্রতি তার রয়েছে অগাধ শ্রদ্ধা। কার্ডিনাল আরও বলেন, পোপের আগমনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বিরাট ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। সম্প্রীতি ও শান্তির বাহক হিসেবে আসবেন তিনি এবং ভালবাসা দিয়ে মানুষকে সেবা করার আহ্বান জানাবেন। এই সম্প্রীতি ও শান্তির মুহূর্তটি আমরা উৎসব ও মিলনমেলায় রূপ দিতে চাই। অনুপ্রাণিত করতে চাই সকলকে। তাঁর আগমনে সংলাপ হবে সংস্কৃতির এবং প্রবাহিত হবে বিভিন্ন ধর্মের সংলাপ। বাংলাদেশ ও ভ্যাটিকান সিটির মধ্যে বিরাজমান সুসম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে জানিয়ে কার্ডিনাল বলেন, বাংলাদেশকে যেন বেশি ভালবাসেন পোপ। গত তিন বছরে তার মাত্র তিনটি সফরের তালিকা রয়েছে। তিনটির একটি বাংলাদেশে। স্বাধীন হওয়ার এক বছরের মধ্যে ভ্যাটিকান সিটি ও বাংলাদেশের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা এখনও বিদ্যমান রয়েছে। দুদেশের সম্পর্ক যতটা না বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক, তার চেয়ে মানবতার সম্পর্কই বেশি জোরাল। পোপের আগমনে রোহিঙ্গা ইস্যু প্রাধান্য পাবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও বলেন, পোপ ইতোমধ্যে মিয়ানমারে পৌঁছেছেন। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ওই দেশের সেনাপ্রধানের সঙ্গেও কথা বলবেন। বাংলাদেশে তার আগমন রোহিঙ্গা ইস্যু কেন্দ্র করে নয়। তবে বিষয়টি অবশ্যই উত্থাপিত হবে। অনেক আগে সফরসূচী তৈরি হওয়ায় পোপের পক্ষে কক্সবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সাক্ষাত দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা ঢাকায় এনে পোপের সঙ্গে সাক্ষাত করিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তাছাড়া তিনি ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে কথা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য হৃদয় দুয়ার খুলে দিয়েছেন। তার হস্তক্ষেপের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ইস্যুটি আরও যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে সেই বিষয়টি আমরাও অবশ্যই প্রত্যাশা করব। পোপের আগমনে বিশ্বে বাংলাদেশের ইতিহাস- ঐতিহ্য সম্মানিত হবে জানিয়ে আর্চবিশপ মোজেস এম কস্তা বলেন, বিষয়টি আমাদের দেশের জন্যে গৌরবের, আনন্দের। তিনি আসছেন শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে। তার সঙ্গে থাকছেন ৭৫ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন দেশের আরও তিন শতাধিক সাংবাদিক। তারা আমাদের সোনার বাংলার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস-ঐতিহ্য বিশ্বে তুলে ধরবেন। বাংলাদেশের সকল ধর্মের সকল মানুষের সৌহার্দপূর্ণ সহাবস্থানের বাস্তব চিত্র প্রত্যক্ষ করবেন। বিশ্বের সামনে আমাদের দেশ, দেশের ভাল কাজ এবং বিশ্বে আমাদের অবদান তুলে ধরার একটা উত্তম সুযোগ হবে বলে মনে করেন আর্চ বিশপ মোজেস এম কস্তা। বাংলাদেশে সফরকালে পোপের তিনদিনের কর্মসূচীর বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ বলেন, আগামী ৩০ নবেম্বর ঢাকায় পৌঁছার পর বিকেল চারটায় পোপ ফ্রান্সিস সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শনে যাবেন। বিকেল পৌনে পাঁচটায় তিনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং স্মৃতিগ্রন্থে স্বাক্ষর করবেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত এবং বিকেল ছয়টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ, সুশীল সমাজ ও কূটনৈতিক মহলের সঙ্গে বৈঠক করবেন পোপ। এভাবে তিনি ১ ডিসেম্বর সকাল দশটায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খ্রিস্টধর্মীয় উপাসনা এবং যাজক অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। ভ্যাটিকান দূতাবাসে সোয়া দু’টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। আর বিকেল চারটার দিকে রমনার প্রবীণ যাজক ভবনে বাংলাদেশের বিশপদের সঙ্গে বিশেষ সভায় বক্তব্য রাখবেন পোপ। বিকেল পাঁচটায় আর্চবিশপ হাউসের মাঠে শান্তির জন্য আন্তঃধর্মীয় ও আন্তঃমা-লিক সমাবেশ তিনি বক্তব্য রাখবেন। ২ ডিসেম্বর তেজগাঁও মাদার তেরেসা ভবন, তেজগাঁও কবরস্থান ও পুরাতন গির্জা পরিদর্শন এবং নটরডেম কলেজে যুব সমাবেশে বক্তব্যসহ কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে ২ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটায় রোমের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন পোপ ফ্রান্সিস।
×