যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলার আগে মানুষ যদি একটু ভাবে, তাহলে হয়ত তারা এমন করবে না। কারণ, আমাদের পরিবেশের এতে ক্ষতি হচ্ছে। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের একটা অস্থায়ী আবর্জনার ভাগাড়ের পাশে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিল ১০ বছরের মেয়ে জাইমাল উমর। পাকিস্তানে অনেকের কাছে যে দেশের সবচেয়ে কম বয়সী সামাজিক উদ্যোক্তা। জাইমালের কাছে কি এই সমস্যার কোন সমাধান রয়েছে? চোখ যতদূর যায় বিভিন্ন রঙের প্লাস্টিক ব্যাগ, ধাতব আর সাধারণ বর্জ্যে চারদিক ভরে রয়েছে। আবর্জনার একাংশে আগুন ধরানোয় বিষাক্ত ধোঁয়ার গন্ধ নাকে ভেসে আসছিল। জাইমালের সামনে যা দেখলাম তা পাকিস্তানের আবর্জনা সমস্যার কণামাত্র। দেশটির পরিবেশ রক্ষা বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, পাকিস্তানে প্রতিবছর প্রায় ২ কোটি টনের মতো কঠিন বর্জ্য তৈরি হয়। জাইমাল বলে, এমন ছবি গোটা পাকিস্তানে খুঁজে পাবেন। এই প্লাস্টিক ব্যাগগুলো মাটিতে মেশে না। আর মানুষজনও দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে যেখানে সেখানে এগুলো ফেলে যায়। পুনর্ব্যবহার নিয়ে কোন চিন্তাভাবনা নেই এদের।
পাকিস্তানে কখনও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ হয়নি। দেশের সরকারই আবর্জনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করে। কিন্তু আবর্জনা ফেলার স্থানের সংখ্যা ক্রমশই কমে আসছে। আঁস্তাকুড়ে আবর্জনা ফেলে তা পুড়িয়ে দেয়াই দেশটিতে জঞ্জাল থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার একমাত্র উপায়। পাকিস্তানে যত্রতত্র পড়ে থাকা জঞ্জাল থেকে রোগ ছড়ানোর ঘটনা প্রায়াই ঘটে।
দূষণ রুখতে ও পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে পাকিস্তানে জাইমালের তৈরি জি-ব্যাগ ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। খবরের কাগজের টুকরো দিয়ে রংবেরঙের ব্যাগ তৈরি করে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের কাছে বিক্রির মধ্য দিয়ে কাজ শুরু করে জাইমাল। এটা থেকে আসা অর্থ বিভিন্ন সামাজিক কাজে ব্যয় করা হতো। এভাবে ছোট পরিসরে শুরু করলেও গত তিন বছরে প্রায় চার-পাঁচ হাজার ডলারের মতো ব্যাগ বিক্রি করেছে ছোট্ট মেয়েটি। এ বিষয়ে জাইমাল বলে, আমি ইউটিউব দেখে প্রথমে এই ব্যাগ তৈরি শিখি। স্কুলের হোমওয়ার্ক সেরে জি-ব্যাগ তৈরির জন্য সময় বের করা কঠিন ছিল। তাই সপ্তাহের শেষে বা অন্য ছুটির দিনগুলোতে ভাইদের সঙ্গে এ কাজ করতাম। বাবা ও দাদু আমার কাজের জন্য কাঁচামাল কিনে দিতেন। না হলে এ কাজ এগিয়ে নিতে পারতাম না। জাইমালের উদ্ভাবনী ও সামাজিক কাজের প্রশংসা করেছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম। ওর তৈরি জি-ব্যাগ ইতোমধ্যেই পাকিস্তান, সৌদি আরব ও আমেরিকায় একাধিক পুরস্কার জিতে নিয়েছে। -বিবিসি অবলম্বনে