ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

সংস্কৃতি সংবাদ

নাটক, সিনেমা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মুখর শিল্পকলা

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১১ অক্টোবর ২০১৭

নাটক, সিনেমা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মুখর শিল্পকলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চারপাশজুড়ে যেন ছড়াচ্ছে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের আবহ। তাই বিকেল হওয়ার আগেই ভিড় জমাচ্ছেন সংস্কৃতিপ্রেমীরা। উপভোগ করছেন নাটক, সিনেমা থেকে শুরু করে বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার সিড়িসংলগ্ন মুক্তমুঞ্চে পরিবেশিত হচ্ছে নাচ, গান, কবিতা ও পথনাটক। দর্শনার্থীদের অনেকেই আবার সরাসরি হাজির হচ্ছেন একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে। সেলুলয়েডের পর্দায় চোখ রেখে কাটিয়ে দিচ্ছেন আনন্দঘন সময়। অবলোকন করছেন মুক্তিযুদ্ধসহ সমকালীন ধারার নানা প্রেক্ষাপটের চলচ্চিত্র। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই দর্শকে জমজমাট হয়ে উঠছে নাট্যশালার তিনটি মিলনায়তন। এই থিয়েটার হলগুলোয় চলছে গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবের অন্তর্ভুক্ত নাটকের প্রদর্শনী। এভাবেই নাটক, সিনেমা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় এখন উৎসবমুখর শিল্পকলার আঙিনা। শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে রাজধানীসহ দেশের ৬৪টি জেলায় চলছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ও দর্শক সমাদৃত ৪৪টি চলচ্চিত্রে সজ্জিত হয়েছে দর্শনার্থীদের উন্মুক্ত এ উৎসব। পক্ষকালব্যাপী উৎসবের পঞ্চম দিন ছিল মঙ্গলবার। এদিন চিত্রশালা মিলনায়তনে পৃথক তিনটি সময়সূচীতে দর্শনার্থীরা তিনটি সিনেমা দেখার সুযোগ পেয়েছি। বেলা ৩টায় দেখানো হয় জহির রায়হান নির্মিত আলোচিত চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’। বিকেল ৫টায় প্রদর্শিত হয় খান আতাউর রহমানের ছবি ‘আবার তোরা মানুষ হ’। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দেখানো হয় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত চলচ্চিত্র ‘টেলিভিশন। গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবটি ইতোমধ্যে নজর কেড়েছে সংস্কৃতি অনুরাগী নগরবাসীর। মঙ্গলবার ছিল এ উৎসবের পঞ্চম দিন। অন্য দিনের মতো এদিন বিকেলেও নাট্যশালার সিঁড়িতে বসে দর্শনার্থীরা উপভোগ করেছে মুক্তমঞ্চের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। নাট্যদল নাট্যযোদ্ধা পরিবেশন করে পথনাটক ‘বুদ্ধি’। প্রযোজনাটি রচনার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন ফয়সাল আহমেদ। কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে দু’টি আবৃত্তি প্রযোজনা উপস্থাপন করে চারুকণ্ঠ ও প্রকাশ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের বাচিকশিল্পীরা। চারুকণ্ঠ পরিবেশন করে ‘আমাদের ছোট গাঁও’ শীর্ষক প্রযোজনা। প্রকাশ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন পরিবেশিত প্রযোজনার শিরোনাম ছিল ‘ইশ ইশ ইশ’। সুরের আশ্রয়ে আসর জমিয়ে তোলে মরমী লোকগীতি শিল্পীগোষ্ঠী ও পঞ্চভাস্কর। মরমী শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘মোরা মাদক নেশার কবল থেকে দেশ বাঁচাই’ ও ‘পিরিত রতন পিরিত যতন পিরিত গলার হার’সহ কয়েকটি গান। মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সম্মিলনে নাচ করেছে নৃত্যালোকের শিল্পীরা। এ উৎসবের চতুর্থ দিন মঙ্গলবার খেয়ালী নাট্যগোষ্ঠী পরিবেশিত ‘ফকির আলির গায়েবি জানাযা’ শীর্ষক পথনাটকটি বিশেষভাবে মনোযোগ কেড়েছে দর্শকদের। প্রযোজনাটি রচনার পাশাপাশি নির্দেশনায় দিয়েছেন একেএ কবির। সন্ধ্যা ৭টায় একযোগে একাডেমির তিন মঞ্চে মঞ্চস্থ হয় তিনটি নাটক। নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় বুনন থিয়েটারের নাটক ‘সিক্রেট অব হিস্ট্রি।’ এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে দর্শকরা দেখেছে ঢাকা পদাতিকের নাটক ‘পাইচো চোরের কিচ্ছা’। স্টুডিও থিয়েটার হলে ম্যাড থেটার পরিবেশন করবে ‘নদ্দিউ নতিম’। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক আনন জামান রচিত এবং শুদ্ধমান চৈতন নির্দেশিত ‘সিক্রেট অব হিস্ট্রি’ নাটকে উঠে এসেছে জেলখানায় জাতীয় চার নেতার হত্যাকা-ের বিয়োগান্তক ঘটনা। জেলের ভেতর জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা পরবর্তী ক্যান্টনমেন্ট ও রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র নিয়ে রচিত হয়েছে নাটকটি। অভিনয় করেছেন আনন জামান, তুষার কান্তি দে, আশরাফুল আলম, উচ্ছল হাসান, আবু ফাহিম, শাত-ইল রাস, আবিদ হাসান, অমিত চৌধুরী, তুষার সোহাগ প্রমুখ। এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয় ঢাকা পদাতিকের প্রযোজনা ‘পাইচো চোরের কিচ্ছা’। খুলনা জেলার আঞ্চলিক ভাষার হাস্যরসাত্মক নাটকটির নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন কাজী চপল। নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়, পাইচো নামের এক চোর তার বাবার রেখে যাওয়া বই পড়ে নানারকম চুরির কৌশল আবিষ্কার করে। সে মহেশ্বরী রাজাকে চিঠি লিখে জানায়, কবে সে রাজকন্যাকে চুরি করবে। রাজ্যজুড়ে শুরু হয় অস্থিরতা। রাজা বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেও রাজকন্যাকে পাইচো চোরের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন না। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সালাউদ্দিন রাহাত, রিয়াজ, মাসুদ আহমেদ, কিরণ, মুমু, লিজা, সাগর, স¤্রাট, কবির, আকাশ প্রমুখ। স্টুডিও থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয় ম্যাড থেটার প্রযোজনা ‘নদ্দিউ নতিম’। নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘কে কথা কয়’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত নাটকটির রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন আসাদুল ইসলাম। নাটকের কাহিনীতে মতিন উদ্দিন মনে মনে নিজেকে একজন উজবেক কবি হিসেবে কল্পনা করে নেয়। এই মতিনের মধ্যে বাস করে অন্য এক মতিন। দিনে দিনে মতিন উদ্দিন হয়ে ওঠে নদ্দিউ নতিম। মতিনের হৃদয়ের সবটুকু দখল করে থাকে সহপাঠিনী নিশু। ভাবের ভেলায় ভেসে বেড়ালেও ভাবাবেগে মতিন ডুবে যায় না, সে বুঝতে পারে নিশুর মতো স্কলার মেয়ের যোগ্য সে নয়। মানুষের অবচেতনে এক ধরনের সূক্ষ্ম পাগলামি কাজ করে। এই পাগলামি ব্যবহার করে কেউ কেউ প্রথাগত যুক্তি, বুদ্ধি ও দেয়াল ভেঙ্গে দর্শকের সামনে দাঁড় করায় নতুন সমীকরণ। তিন চরিত্রে এ নাটকে অভিনয় করেছেন সোনিয়া হাসান, আর্য মেঘদূত ও আসাদুল ইসলাম।
×