বিভাষ বাড়ৈ ॥ পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন ফাঁস করে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেয়ার কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে গেছে রাজধানীর ডেমরার গোলাম মোস্তফা মডেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। টানা তিন বছর ধরে পাবলিক পরীক্ষায় একই অপকর্ম করে প্রতিষ্ঠানের পাসের হার ও জিপিএ ৫ প্রাপ্তি প্রায় শতভাগ নিয়ে আসলেও শেষ পর্যন্ত প্রমাণসহ ধরা খেল গবর্নিং বডির সভাপতি, সদস্য, অধ্যক্ষসহ পুরো চক্র। কেবল তাই নয়, এবারের এইচএসসিতেও নির্দিষ্ট সময়ের তিন ঘণ্টা আগেই এখানে পরীক্ষা নেয়ার প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরীক্ষার দিন ভল্ট থেকে প্রশ্ন বের করে সকাল সাতটা থেকে আটটা পর্যন্ত পরীক্ষার্থীদের হলরুমে একত্র করে প্রশ্নের সমাধান করা হয়েছে। প্রমাণ মিলেছে গত বছরও নির্ধারিত সময়ের আগে পরীক্ষা নিয়ে ৬০ জনের মধ্যে ৫৯ জন অর্থাৎ ৯৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থীই জিপিএ-৫ পেয়েছিল।
তদন্তে প্রমাণ পাওয়ায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে কৌশলে পরীক্ষা নিয়ে প্রায় শতভাগ ‘সাফল্য’ পেয়ে আলোচনায় প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা শনিবার জানিয়েছেন, ইতোমধ্যেই ঘটনার জন্য দায়ী গবর্নিং বডির সদস্য, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কেলেঙ্কারির জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর এ্যাকশন নিতে নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। জানা গেছে, এর আগে গত ১৬ জুলাই রাতে ডেমরা থেকে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত ৬ জনকে আটক করেছিল গোয়েন্দ পুলিশ। প্রশ্ন ফাঁস চক্রের ওই ৬ জনের জবানবন্দী ও এর সূত্র ধরে তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে গোলাম মোস্তফা মডেল কলেজে কয়েক বছর ধরে পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার ভয়াবহ কেলেঙ্কারি। প্রতিষ্ঠানটি গত বছর অন্তত তিন ঘণ্টা আগেই প্রশ্ন বিতরণ করে পরীক্ষাও নিয়ে নেয় গোপনে। ডেমরায় গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ডেমরার গোলাম মোস্তফা মডেল কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও পরিচালনা বোর্ডের সহকারী পরিচালক আবদুল মজিদও ছিলেন। অপর পাঁচজন হলেন রায়হান চৌধুরী ওরফে ড্যান ব্রাউন, রাহুল মিয়া, রায়হান মিয়া, আরেফিন রাব্বি ও অভি আবদুল্লাহ। তাদের মধ্যে রায়হান চৌধুরী প্রশ্ন ফাঁস চক্রের হোতা বলে দাবি ডিবির। তিনি ফেসবুকে ড্যান ব্রাউন ছদ্মনামে এ্যাকাউন্ট খুলে ইনবক্সে বার্তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন।
ডিবির যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রতারণার শিকার ১৫ জন শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে এই চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। রায়হান চৌধুরী প্রশ্ন ফাঁসের কথা বলে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১০-২০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। তদন্তে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মনিরুল ইসলাম বলেন, এই চক্রটি চলতি বছর ও এর আগের বছরগুলোয় প্রশ্ন ফাঁস করেছে।