ছবি: সংগৃহীত
বিজ্ঞানীরা মঙ্গোলিয়ার একটি জাদুঘরের সংগ্রহে থাকা জীবাশ্ম পরীক্ষা করে একটি নতুন প্রজাতির ডাইনোসর আবিষ্কার করেছেন, যা তারা বলছেন টাইরানোসরের বিবর্তনের ইতিহাস নতুন করে লেখার দরজা খুলে দিয়েছে।
গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন, প্রায় ৮৬ মিলিয়ন বছর পুরনো দুটি কঙ্কাল আসলে একটি নতুন প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত, যা এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত টাইরানোসরদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ পূর্বপুরুষ।
গবেষক দল এই নতুন প্রজাতির নাম দিয়েছেন Khankhuuluu mongoliensis (উচ্চারণ: খান-কু-লু মঙ্গোলিয়েনসিস), যার অর্থ "মঙ্গোলিয়ার ড্রাগন প্রিন্স"।
নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত এই আবিষ্কারটি দেখায়, কীভাবে টাইরানোসররা ধীরে ধীরে শক্তিশালী শিকারিতে পরিণত হয়েছিল যারা উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ায় রাজত্ব করত ডাইনোসরের যুগের শেষ পর্যন্ত।
ক্যালগেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিওন্টোলজিস্ট অধ্যাপক ডারলা জেলেনিটস্কি বলেন, “‘প্রিন্স’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে কারণ এটি একটি প্রাচীন, অপেক্ষাকৃত ছোট টাইরানোসরয়েড।” টাইরানোসরয়েডরা ছিল দ্বিপদী মাংসাশী ডাইনোসরের একটি সুপারফ্যামিলি।
গবেষণার প্রধান, পিএইচডি ছাত্র জ্যারেড ভোরিস বলেন, “এই প্রাচীন টাইরানোসরয়েডরা ছিল ছোট, দ্রুতগতির শিকারি, যারা অন্যান্য শীর্ষ শিকারি ডাইনোসরের ছায়ায় বাস করত।”
Khankhuuluu একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবর্তনমূলক পর্যায় নির্দেশ করে — জুরাসিক যুগের ছোট শিকারি থেকে শুরু করে পরবর্তী দানবাকৃতি টাইরানোসরের (যেমন: টি. রেক্স) দিকে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
এই নতুন প্রজাতির ওজন ছিল আনুমানিক ৭৫০ কেজি, যেখানে প্রাপ্তবয়স্ক টি. রেক্সের ওজন তার আটগুণ পর্যন্ত হতে পারত। অধ্যাপক জেলেনিটস্কি বলেন, “এটি একটি রূপান্তরকালীন জীবাশ্ম — প্রাচীন পূর্বপুরুষ ও বিশাল টাইরানোসরের মধ্যবর্তী ধাপ।”
তিনি আরও বলেন, “এটি আমাদের টাইরানোসরের পারিবারিক বৃক্ষ নতুনভাবে সাজাতে সাহায্য করেছে এবং টাইরানোসরের বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে বদলে দিয়েছে।”
এই নতুন প্রজাতির খুলি ও চোয়ালের গঠনেও রয়েছে ভবিষ্যৎ টাইরানোসরের শক্তিশালী কামড়ের পূর্বাভাস। জ্যারেড ভোরিস বলেন, “এর নাসারন্ধ্র হাড়ে আমরা এমন কিছু বৈশিষ্ট্য দেখতে পাই, যা টাইরানোসরের শক্তিশালী কামড়ের জন্য দায়ী।”
এই শক্তিশালী চোয়ালের বিবর্তনই টি. রেক্সকে বড় শিকার ধরতে এবং হাড় পর্যন্ত চিবিয়ে ফেলতে সাহায্য করেছিল।
উল্লেখ্য, যে দুটি অর্ধেক কঙ্কালের উপর ভিত্তি করে এই গবেষণা হয়েছে, সেগুলি প্রথম মঙ্গোলিয়ায় খুঁজে পাওয়া যায় ১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে। শুরুতে এগুলিকে Alectrosaurus নামে পরিচিত এক প্রজাতির বলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু জ্যারেড ভোরিস যখন এগুলি পরীক্ষা করেন, তখন তিনি টাইরানোসরের অনন্য বৈশিষ্ট্য দেখতে পান।
অধ্যাপক জেলেনিটস্কি স্মরণ করে বলেন, “আমি এখনো মনে করতে পারি, সে আমাকে একটা টেক্সট পাঠিয়েছিল — সে মনে করেছিল এটা একটা নতুন প্রজাতি।”
ফারুক
