ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

যে নারীর কারণে আজ সারা বিশ্বে মা দিবস পালিত হয়

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:৪৪, ১০ মে ২০২৫

যে নারীর কারণে আজ সারা বিশ্বে মা দিবস পালিত হয়

ছবি: সংগৃহীত

মা দিবস হলো মাতৃ-সম্মানার্থে উদযাপিত একটি ছুটির দিন, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালন করা হয়। আধুনিক রূপে এই দিবসটির সূচনা হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এটি প্রবর্তন করেছিলেন আনা জারভিস, যিনি নিজ মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই দিনটি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।

প্রথম মা দিবস উপলক্ষে গির্জার সেবামূলক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় ১৯০৮ সালে। ছয় বছর পর এই দিনটি জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার এই দিবসটি পালন করা হয়।

মা দিবসে মানুষ সাধারণত কার্ড, ফুল এবং পারিবারিক ভোজের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করে। বিশ্বের অনেক দেশেই একই তারিখে মা দিবস পালিত হয়, যদিও কিছু দেশে বছরের অন্যান্য সময়ে দিবসটি পালন করা হয়। মধ্যযুগে একটি রীতির প্রচলন ছিল, যেখানে যারা বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল তারা চতুর্থ লেন্ট সানডে বা ‘লেটারে সানডে’তে নিজেদের গির্জা ও মায়ের কাছে ফিরে আসত।

ব্রিটেনে এটি "মাদারিং সানডে" নামে পরিচিতি পায় এবং আধুনিক যুগ পর্যন্ত চালু ছিল, যদিও বর্তমানে সেটি প্রায় পুরোপুরি মা দিবস দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে।

আনা জারভিসের মা অ্যান জারভিসের অনুপ্রেরণায় মা দিবসের ধারণা জন্ম নেয়। অ্যান জারভিস নারীদের নিয়ে বন্ধুত্ব ও স্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। ১৮৬৮ সালে, মার্কিন গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার তিন বছর পর, অ্যান জারভিস "মাদার্স ফ্রেন্ডশিপ ডে" আয়োজন করেন যাতে ইউনিয়ন ও কনফেডারেট সৈনিক এবং তাদের পরিবারদের মধ্যে পুনর্মিলন ঘটানো যায়।

১৮৭৬ সালে, যখন আনা জারভিসের বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর, তখন তিনি তাঁর মায়ের একটি প্রার্থনা শুনেছিলেন রবিবারের স্কুলের শেষে:
“আমি আশা করি ও প্রার্থনা করি, কোনো একদিন কেউ একজন এমন একটি মা দিবস প্রতিষ্ঠা করবে, যেটি মায়েদের মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের অতুলনীয় সেবার জন্য স্মরণ করবে,” বলেছিলেন তাঁর মা। “মায়েরা এই সম্মানের যথার্থ দাবিদার।”

আনা জারভিস এই প্রার্থনা কোনোদিন ভুলে যাননি। ১৯০৫ সালে অ্যান জারভিস মারা যাওয়ার পর, আনা একটি চিঠি-লিখন ও জনসভাভিত্তিক প্রচারণা শুরু করেন স্থানীয়, প্রাদেশিক ও জাতীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে। তিনি এবং তাঁর সমর্থকেরা মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস পালন করার দাবি তোলেন, কারণ ওই দিনটিতেই অ্যান জারভিসের মৃত্যু হয়েছিল।

১৯০৮ সালের ১২ মে, পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রাফটনে আনা জারভিসের মায়ের গির্জায় প্রথম মা দিবস পালন করা হয়। পাঁচ বছরের মধ্যেই প্রায় সব অঙ্গরাজ্য এই দিনটি উদযাপন করতে শুরু করে এবং ১৯১৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এটিকে জাতীয় ছুটির দিন ঘোষণা করেন।

যদিও জারভিস তাঁর মায়ের প্রিয় ফুল সাদা কার্নেশনের প্রচলন ঘটাতে চেয়েছিলেন, পরবর্তীতে জীবিত মা-দের জন্য লাল বা গোলাপি কার্নেশন এবং মৃত মা-দের জন্য সাদা কার্নেশন পরার রীতি চালু হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মা দিবসের পরিধি বেড়ে দাদি, ফুফু বা খালা—যাঁরা মাতৃত্বের ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করা শুরু হয়।

আনা জারভিস মা দিবসকে একটি "ব্যক্তিগত দিবস" হিসেবে কল্পনা করেছিলেন। এই কারণেই "Mothers" শব্দটি একবচন (Mother’s) আকারে লেখা হয়। শুরুতে পারিবারিক ভোজ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছিল দিবসটির মূল বৈশিষ্ট্য, যা আজও প্রচলিত আছে। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই এটি কার্ড পাঠানো ও উপহার দেওয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ১০ কোটি’র বেশি মা দিবসের কার্ড কেনা হয়। উপহারের মধ্যে ফুল বিশেষভাবে জনপ্রিয়, এবং কার্নেশন এখনও এই দিবসের আনুষ্ঠানিক ফুল হিসেবে বিবেচিত।

তবে মা দিবসের বাণিজ্যিকীকরণে জারভিস ছিলেন কঠোর বিরোধী। তিনি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে লিখেছিলেন,“আপনি কী করবেন প্রতারক, ডাকাত, জলদস্যু, চাঁদাবাজ, অপহরণকারী এবং সেইসব ঘুণপোকাদের রুখতে যারা তাদের লোভের মাধ্যমে এই মহৎ, মহান এবং অকৃত্রিম আন্দোলন ও উদযাপনকে ধ্বংস করতে চায়?”

জীবনের শেষ সময়ে এসে তিনি নিজেই সেই দিবস বিলুপ্ত করার আন্দোলন শুরু করেন, যেটি তাঁরই হাতে গড়া ছিল।
 

শহীদ

×