ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

মা-মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থী

অপরাজিতা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:১৮, ১১ নভেম্বর ২০২২

মা-মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থী

মা-মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থী

নীলফামারির ডিমলা উপজেলার শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব সরকারি মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহী সিদ্দিকা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছেন। সে বিষয়ে আসলে কিছু বলার নেই। তবে চমক সৃষ্টি করছে অন্য আর একটি বিস্ময়কর ব্যাপার। মা মারুফা আকতারও উচ্চ মাধ্যমিকে অংশ নিচ্ছেন মেয়ের সঙ্গেই। একই কলেজের শিক্ষার্থী স্নেহময়ী জননী ও স্নেহধন্যা কন্যা।

শুধু কি তাই? কন্যা শাহী সিদ্দিকার সঙ্গে মাধ্যমিক বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মা মারুফা আকতারের সফল হওয়াও অনন্য মানসিক মনোবল। শুধু তাই নয়, শিক্ষার প্রতি পরম আকাক্সক্ষায় এত বছর পর নতুন উদ্যোমে উৎসাহ-উদ্দীপনায় বোর্ড পরীক্ষায় অংশীদারিত্ব সত্যিই এক অভাবনীয় জ্ঞানচর্চার অনন্য বোধ।
বিভিন্ন তথ্য উপাত্তে জানা যায় ২০০৩ সালে মা মারুফা আকতার দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। বাল্যবিয়ের কবলে পড়ে মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শুধু কি বাল্য বিয়ে? অকাল মাতৃত্বেও জীবনটা ভিন্নখাতে বইতে থাকে। স্বামী, সংসার, সন্তান এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে জীবনের কত সুবর্ণ সময় বয়ে যায় নিজেই তার হিসাব মেলাননি কোনদিন।

মাছ ব্যবসায়ী স্বামী সাইদুল ইসলামের ঘরণি হয়ে ৪ সন্তানের জননী হওয়াও এক অন্যমাত্রার পালাক্রম। বাকি ১৫ বছরই কেটে যায় সংসার সামলানো আর সন্তান মানুষ করার ব্যতিব্যস্ত সময় নিয়ে। কিন্তু ভেতরের বোধে জেগেছিল পড়াশোনার প্রতি অদম্য স্পৃহা। সময়ে তা প্রমাণও করে দিলেন-নির্বিঘ্নে, নির্দ্বিধায়। বড় সন্তান শাহী সিদ্দিকার সঙ্গে মিলিতভাবে পড়াশোনার মাধ্যমিকের প্রস্তুতিও নিতে থাকেন। দুঃসাহসিক আর অকুতোভয় মনোসংযোগে মাধ্যমিকের মতো বোর্ড পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়া কম কৃতিত্বের বিষয় ছিল না।
তবে স্বামী সাইদুল ইসলামের সহযোগিতা ও উৎসাহে নতুন করে পড়াশোনা শুরু করা এক আনন্দের বিষয়। নবম শ্রেণি থেকে পাঠদানে সংযুক্ত হয়ে নতুন আগ্রহ আর আকাক্সক্ষায় কন্যার সঙ্গেই পরীক্ষায় বসার তীব্র মনোযোগই মারুফাকে সফলতার দ্বারে পৌঁছে দেয়।
৪ সন্তানই মায়ের লেখাপড়ার ব্যাপারে ভীষণ উৎসাহী ছিল। তা না হলে মা কখনো পরীক্ষাই বসতে পারতেন না।

২০২০ সালে মেয়ের সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আশানুরূপ ফলাফল অর্জনও জীবনের পরম পাওয়া। সবাইকে চমক আর আনন্দের স্রোতে ভাসিয়ে জিপিএ এলো ৪.৬০। অপ্রত্যাশিত এবং আকাক্সিক্ষত ফলাফল। দৃঢ়তার সঙ্গে নিজেকে তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, আমি একজন শিক্ষিত নারীই শুধু নয় শিক্ষিত মা হওয়ার গৌরবও অর্জন করতে চাই। তেমন অনুপ্রেরণায় মা মারুফা আকতার নিজের শিক্ষাজীবনকে সফলভাবে এগিয়ে নিতে আর কোন বাধা বিঘœকে আমলেই নিতে চাননি।

এমন অসাধারণ লড়াকু মাকে অভিনন্দন আর প্রশংসার ডালি অর্পণ। ব্যতিক্রমী এমন শিক্ষার্থীর আকাক্সক্ষা আরও বহুদূর। উচ্চ মাধ্যমিকেও ভালো ফল করে বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনায় অনুপ্রবেশ। তাও যেন পরম সার্থকতায় জীবনকে পূর্ণ করে দেয় তেমন প্রত্যাশায় অগণিত শুভাকাক্সক্ষী। একই সুরে কথা বললেন স্বামীও। তার মতে স্ত্রীর পড়াশোনার আগ্রহে তিনি কোন ধরনের আপত্তি তোলেনইনি।

বরং খুশি মনে স্ত্রীকে সবধরনের সহযোগিতা করে যান। সামনে আরও বৃহত্তর পরিবেশে জ্ঞানার্জনের সুযোগ দিতে তিনি বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করবেন না বলেও দৃঢ়তার সঙ্গে অভিমত ব্যক্ত করেন। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরাও বলছেন মা মারুফার পড়াশোনা শুরু করা সমাজের জন্য বিশেষ নজির হয়ে থাকবে। যা অনেক বিবাহিত নারীকে পড়াশোনায় উদ্বুদ্ধ করবে।
অপরাজিতা প্রতিবেদক

×