ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

জানা-অজানা

চকলেট এলো কেমন করে

আয়েশা মেহজাবিন

প্রকাশিত: ২০:৫২, ২৯ নভেম্বর ২০২৪

চকলেট এলো কেমন করে

চকলেট

তোমাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় মিষ্টান্ন কী, যদি জানতে চাওয়া হয়- তবে বেশির ভাগেরই উত্তর হবে চকলেট। শুধু শিশু-কিশোর নয়, কিছু ক্ষেত্রে অনেক বড়দেরও পছন্দের খাবার চকলেট। এমন মজার একটি খাবার কেউ পছন্দ না করে পারে! চলো, বন্ধুরা আজ তোমাদের এই খাবার সম্পর্কে কিছু মজার তথ্য জেনে নেই।
তোমাদের মনে প্রথমেই যে চিন্তা আসতে পারে তা হলো চকলেট খেতে এত মজা লাগে কেন? অনেকেই বলবে হয়ত এমনিতেই মজা লাগে। কিন্তু আসল কারণটা চকোলেট বানানোর মধ্যেই নিহিত। চকলেট বানাতে বেশ কিছু উপাদান মেশানো হয় যা চকলেটকে স্বাদে, গন্ধে মজাদার করে আর একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছা করে।
চকলেট সাধারণত চিনি, থিওব্রোমিন, ট্রিপটোফেন, ফিনেথাইলামিন ও ক্যাফেইন বিভিন্ন পরিমাণে মেশানো থাকে। তাই চকলেট এত মজার। সারা বিশে^ চকলেট কোম্পানিগুলো নানান স্বাদের চকলেট বানায়। তার মধ্যে মিল্ক চকলেটই সবার বেশি প্রিয়। এছাড়া ডার্ক চকলেট, হোয়াইট চকলেট অনেকে পছন্দ করে। মিল্ক চকলেটে দুধ থাকে বুঝতেই পারছ। আমেরিকায় চকলেটে শতকরা ১০ ভাগ লিকার থাকতে হয়। আর ইংল্যান্ডে মিল্ক চকলেটে কমপক্ষে শতকরা ২৫ ভাগ সলিড কাকাউ থাকতে হবে। অন্য দিকে ডার্ক চকলেটের লিকার এবং ইংল্যান্ডে ৩৫ ভাগ সলিড কাকাউ থাকতে হবে।
আবার চকলেটের স্বাদ আরও আকর্ষণীয় করার জন্য চকলেট মিন্ট, কমলা বা স্ট্রবেরির স্বাদ যোগ করা হয়। এ ছাড়া মাঝে মাঝে বাদাম, ফল, ক্যারামেল এমনকি মচমচে দানাশস্যও ব্যবহার করা হয়। চকলেট মূলত তৈরি হয় কাকাউ নামক গাছের বীজ থেকে। ৯০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে দক্ষিণ আমেরিকার প্রাচীন আজটেকস জাতি কাকাউ গাছকে গভীরভাবে ভক্তি করতো এবং বীজ মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করতো। তারা এ গাছকে ক্ষমতা ও সম্পদের উৎস বলে মনে করত।
এরপর আজটেক জাতি আবিষ্কার করল যে কাকাউ বীজ গুঁড়া করে তার সঙ্গে মসলা মিশিয়ে চমৎকার সতেজকারী ও সুস্বাদু পানীয় বানানো যায়। তবে এ পানীয় বর্তমান সময়ের চকলেটের তুলনায় অনেক বেশি তিতা স্বাদের ছিল। ১৬ শ’ শতাব্দীতে ইউরোপিয়ান পর্যটকরা দেশ ভ্রমণ শেষে ফেরার সময় এ পানীয় সঙ্গে নিয়ে আসেন এবং এর সঙ্গে মিষ্টি সুগন্ধ মিশিয়ে পান করতে থাকেন। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, পৃথিবীতে প্রথম চকলেটের প্রচলন শুরু হয় আজ থেকে প্রায় ৩ হাজার ১০০ বছর আগে। তখন থেকেই কাকাউ পানীয় ব্যয়বহুল বিলাসী খাবারের মর্যাদা পায়।
১৮০০ সালের দিকে ছাঁচ পদ্ধতিতে বানানো কঠিন চকলেট খুব বেশি জনপ্রিয়তা পায়। সে সময় চূর্ণন যন্ত্রের সাহায্যে কাকাউ বীজ গুঁড়া করে তাপে গলানো হতো। তারপর তা ঢালা হতো বিভিন্ন প্রকার ছাঁচে। তরল কাকাউ ঠা-া হয়ে শক্ত হলে তা পেতো ছাঁচের আকার। খেয়াল করে দেখবেন অনেক চকলেট বেশ চকচকে। কেমন যেন একটা মসৃণ ভাব। ১৮৮০ সালের দিকে সুইজারল্যান্ডের রুডলফ লিন্ড চকলেটকে নরম ও চকচকে করার জন্য একটু বেশি মাত্রায় চকলেট মাখন মেশানো শুরু করে। সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে এবং চকলেট তাই চকচকে ও নরম।
সে সময় থেকেই চকলেট মাখনকে ৯৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় গলানো হয়। যা আমাদের শরীরেরই তাপমাত্রার সমান। তাইতো আমাদের মুখের মধ্যে সহজেই চকলেট গলে যায়। রুডলকের আবিষ্কৃত চকলেটই ছিল প্রথম মজাদার চকলেট।
এত মজার চকলেট একটু নিয়ম মেনে না খেলে আমাদের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। চকলেট বেশি বেশি খেলে দাঁত পরিষ্কার না করলে নানা রকম জীবাণু আমাদের মুখে ও দাঁতে বাসা বাঁধে। এই জীবাণু আমাদের দাঁতকে নানাভাবে ক্ষতি করে। তাই চকলেট খেয়ে দাঁত অবশ্যই ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

×