ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঈদের ভোজ

প্রকাশিত: ২০:৫৭, ৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৭:২৯, ৪ জুন ২০২৫

ঈদের ভোজ

আবু রুবেল

এসেছে ইদুল আজহা। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এই ঈদ। পাশাপাশি রয়েছে উৎসবের আনন্দ। যার প্রায় পুরোটা জুড়ে খাওয়ার আয়োজন। ঈদে গতানুগতিক মাংস ও বিরিয়ানির বাইরে ভিন্ন স্বাদের রেসিপি দিয়েছেন সুইডেন প্রবাসী- আবু রুবেল

কলিজা-জিহ্বা-মাংস মিক্সড ভুনা 

যা লাগবে: গরুর মাংস- ১ কেজি, কলিজা- ১ কেজি, জিহ্বা- ১টি, পেঁয়াজ কুচি- ২ কাপ, রসুন কুচি- ২ টেবিল চামচ, আদা বাটা- আধা কাপ, জিরা গুঁড়া- ১ টেবিল চামচ, ধনিয়া গুঁড়া- ১ টেবিল চামচ, লবণ- পরিমাণ মতো, শুকনো মরিচ- ৭/৮টি (গুঁড়া করা), গরম মসলার গুঁড়া- (১০টি এলাচ, ১টি দারুচিনি ৩ ইঞ্চি ও ৪টি লবঙ্গ- টেলে গুঁড়া করা), তেল- ১ কাপ, হলুদ- ২ টেবিল চামচ, তেজপাতা- ২টি, ভাজা জিরা গুঁড়া- ১ চা চামচ।


যেভাবে করবেন: মাংস, কলিজা আর জিহ্বা পরিস্কার করে সমান টুকরো করে নিতে হবে। পাত্রে তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজ দিয়ে নাড়তে থাকুন। পেঁয়াজ বাদামি হলে তাতে রসুন ও আদা দিন। ৩ মিনিট পর এর মধ্যে বাকি সব মসলা দিয়ে ১ মিনিট ধরে নাড়ুন। এরপর মাংস, জিহ্বা ও কলিজা দিন। মাংসের পানি ছাড়া পর্যন্ত নাড়তে থাকুন। এবার ঢাকনা দিয়ে কষিয়ে নিন। মাঝে মাঝে নাড়তে হবে। কষানো হলে মাংস সেদ্ধ হবার মতো গরম পানি দিন (২ কাপ দিলেই হবে)। ঢাকনা দিয়ে রান্না করুন। পানি শুকিয়ে মাংসের তেল উপরে উঠে আসলে ঢাকনা সরিয়ে ভালো করে ভুনা করুন। ভুনা হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে উপরে ভাজা জিরা ছিটিয়ে দিয়ে ৫ মিনিট ঢাকনা দিয়ে রাখুন। এরপর গরম গরম পরিবেশন করুন।

কড়াই মাংস 

যা লাগবে: খাসির মাংস- ৩ কেজি, টমেটো- ৬০০ গ্রাম, আদা কুচি- আধা কাপ, দেশী রসুন- ২টি (খোসা ছাড়ানো। চায়না হলে- ১টি), কাঁচা মরিচ- ১০/১২টি, টক দই- ১ কাপ (চামচ দিয়ে নাড়িয়ে নিন, যেন কোনো দানা দানা না থাকে), খাসির চর্বি (কুচি করা)- ৩০০ গ্রাম (বাটার বা তেলও ব্যবহার করতে পারেন), গরম মসলার গুঁড়া- ১ টেবিল চামচ (দারুচিনি- ১টি ২ ইঞ্চি, লবঙ্গ- ৪টি, ছোট এলাচ- ৫টি= সব একসাথে ভেজে গুঁড়া করা), গোল মরিচের গুঁড়া- ২ টেবিল চামচ, মৌরি গুঁড়া- ১ টেবিল চামচ এর বেশি, লবণ- ১ টেবিল চামচ (প্রয়োজন বা স্বাদমতো)।


যেভাবে করবেন: ভালো ঢাকনা আছে এমন একটা কড়াই নিন। কড়াই চুলায় দিয়ে গরম করুন। ননস্টিক কড়াই হলে গরম হলেই চর্বি দিন। ননস্টিক না হলে অনেক বেশি গরম করে তাতে কয়েক ফোঁটা যে কোনো তেল দিয়ে, একটা শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে। এরপর চর্বি দিন। চর্বি অর্ধেক গলে গেলে মাংস দিয়ে নাড়তে থাকুন। মাংস থেকে পানি বের হলে ঢাকনা দিয়ে রাখুন পানি শুকনো পর্যন্ত। মাঝে মাঝে নেড়ে দিতে হবে, নিচে যেন মাংস আটকিয়ে না যায়। পানি শুকিয়ে গেলে একটু ভাজা ভাজা করে নিন। এই সময় ৭-৯ টা কাঁচা মরিচ, অর্ধেক আদা কুচি ও রসুন দিয়ে সাথে টমেটোগুলো দিন। টমেটো আস্ত অথবা মাঝ থেকে ২ টুকরো করে দিতে পারেন। টমেটোগুলো না গলা পর্যন্ত নাড়তে থাকুন। খোসা ছাড়িয়ে যাবে। ওই খোসাগুলো তুলে ফেলে দিয়ে লবণ ও গরম মসলার গুঁড়া দিন। ঢাকনা দিয়ে রান্না করুন। মাংসে তেল ছাড়া শুরু হলে টক দই, মৌরি ও গোল মরিচের গুঁড়া দিয়ে দিন। এখন জ্বাল মাঝারি আঁচে রাখতে হবে। ঢাকনা তুলে দিয়ে নাড়তে থাকুন। নিচে যেন কোনোভাবে না লাগে। মাংসে আবার তেল ছাড়া শুরু করলে জ্বাল একেবারে কমিয়ে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে রাখুন ৫ মিনিট। এরপর ২/৩ টা কাঁচা মরিচ মাঝ থেকে ২ ফালি করে ও আদা জুলিয়ান কাট (চিকন লম্বা লম্বা করে কাটা) করে উপরে ছিটিয়ে দিয়ে পরিবেশ করুন। পরাটা, রুটি অথবা পোলাও এর সাথে খেতে ভালো লাগবে।

পাক্কি বিরিয়ানি

যা লাগবে: খাসির মাংস- ৩ কেজি (তেল/চর্বি ছাড়া), চিনিগুঁড়া/বাসমতি চাল- ১ কেজি (৩০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রেখে সম্পূর্ণ পানি ঝরিয়ে নিতে হবে)। আদা বাটা- ২ টেবিল চামচ, রসুন বাটা- ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি- ৩ কাপ (দেড়  কাপ তেল দিয়ে বেরেস্তা করতে হবে। ১ কাপের মতো দমের সময় দেবার জন্য আলাদা রেখে বাকিটুকু বেরেস্তা তেলসহ মাংস রান্নার সময়ে দিতে হবে), লবণ- দেড় টেবিল চামচ, টক দই- ১ কাপ (ভালো করে ফেটিয়ে নেওয়া), চিনি- ১ চা চামচ, আলু বোখারা- ৮/১০টি, কাঁচা মরিচ আস্ত- ১২টি, পোস্ত বাটা- ১ টেবিল চামচ, কাজু বাদাম বাটা- ২ টেবিল চামচ।


বিরিয়ানি মসলা: জিরা- ১ টেবিল চামচ, ধনিয়া- ১ টেবিল চামচ, দারুচিনি- ২টি (২ ইঞ্চি), লবঙ্গ- ৯টি, এলাচ- ৯টি, গোল মরিচ- ১ টেবিল চামচ, জায়ফল- ১টার অর্ধেক, বড় এলাচ- ৩টি, স্টার আনিস- ১টি, জয়ত্রী- সামান্য, শুকনো মরিচ- ৩টি (সবকিছু একসাথে শুকনো তাওয়াতে হালকা তাপে টেলে নিতে হবে), গরম পানি- ১ কাপ।
চাল ও দম এর জন্য উপকরণ: লবণ- ১ টেবিল চামচ, জয়ত্রী- ১টা (আস্ত), শাহী জিরা- আধা চা চামচ, কাবাব চিনি- ১ চা চামচ, চিনি- ১ টেবিল চামচ, লেবুর রস- ১ টেবিল চামচ, জাফরান- ১০টা (কেশর আধা কাপ দুধের মধ্যে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখা), পেঁয়াজ বেরেস্তা- ১ কাপ, মাওয়া- ১ কাপ (না থাকলে ১ কাপ গুঁড়া দুধ ১ টেবিল চামচ ঘি এর সাথে মিশিয়ে নিন), কেওড়া জল- ১ টেবিল চামচ, গোলাপ জল- ১ টেবিল চামচ, ঘিয়ে ভাজা কাজু বাদাম- একমুঠো, কাঠ বাদাম কুচি- অল্প, কিশমিশ- ১ মুঠো, ঘি- ২ টেবিল চামচ, তেল- আধা কাপ।
চালের জন্য পানি: ১টা পেঁয়াজ, একটা রসুন মাঝ থেকে কেটে নেওয়া ও ১ টুকরো আদা ছেঁচে নিয়ে ৩ লিটার পানি সহ ১০ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। তারপর ছেঁকে নিয়ে ওই পানি পোলাওতে ব্যবহার করতে হবে।
যেভাবে করবেন: বেরেস্তা ভাজা তেল ও অল্প বেরেস্তা, আদা-রসুন বাটা, বিরিয়ানি মসলা, লবণ ও এক কাপ গরম পানিসহ মাংসের সঙ্গে দিয়ে চুলায় দিন। ঢাকনা দিয়ে রান্না করুন। মাঝে মাঝে নেড়েচেড়ে দিবেন। পানি শুকিয়ে মাংস ৮০-৯০ % সেদ্ধ হলে এর মধ্যে টক দই, বাদাম বাটা ও পোস্ত বাটা দিবেন। এ অবস্থায় আর ঢাকনা না দিয়ে ঘন ঘন নাড়তে থাকুন যেন নিচে না লাগে। উপরে তেল দেখা গেলে চিনি ও আলু বোখারা দিন। আরো ৪-৫ মিনিট পর কাঁচা মরিচগুলো ছিটিয়ে দিয়ে চুলা থেকে পাতিলটি নামিয়ে ঢাকনা দিয়ে রাখুন। অন্য একটা পাতিলে আধা কাপ তেল দিয়ে গরম করুন, হালকা গরম হলে চাল দিন। জ্বাল মাঝারি আঁচে রেখে নাড়তে থাকুন। সাথে লবণ, শাহী জিরা, জয়ত্রী ও কাবাব চিনি দিন। চাল চকচকে ভাব হলে বুঝতে হবে ভাজা হয়ে গেছে। এখন ঐ পোলাও এ পুরানো ও নতুন চাল অনুযায়ী পরিমান মতো পানি দিতে হবে। চাল ৯০% সেদ্ধ হলে চুলা থেকে পাতিলটি নামিয়ে নিন।
এখন ভালো ঢাকনা আছে এমন একটা বড় পাত্র নিবেন। পাতিলে তিন ভাগের এক ভাগ সেদ্ধ চাল দিন, তার উপরে অর্ধেক মাংস, মাওয়া, কিশমিশ, বাদাম ও বেরেস্তা দিন। আবার চাল, তারপর মাংস এবং শেষে আবার চাল দিন। এখন বাকি সব কিছু উপরে ছিটিয়ে দিন। পাতিলের ঢাকনা ভালো করে সিল করে দিন। ময়দার ডো অথবা মোটা ভেজা কাপড় দিয়ে সিল করলে ভালো হবে। এক ঘণ্টা দমে রাখতে হবে এখন। পাতিলের ওপর ও নিচে কয়লার আগুন দিয়ে দিতে পারলে ভালো। অথবা চুলার ওপর লোহার তাওয়া রেখে তার ওপরে পাতিলটি রেখে দম দিতে পারেন। ১ ঘণ্টা পর চুলা থেকে নামিয়ে, ওপর নিচে একটু মিশিয়ে নিন। এবার পরিবেশন করুন মজাদার পাক্কি বিরিয়ানি।

ভাজা মাংস

যা লাগবে: খাসির মাংস- দেড় কেজি, লবণ- ১ চা চামচ (প্রয়োজন মতো), কাঁচা মরিচ- ১টি, আদা- ১ টুকরো (ছোট- দুই ভাগ করে দেওয়া), হলুদ- আধা চা চামচ, মাংসের চর্বি- ২ টুকরো, ভাজা গরম মসলার গুঁড়া- আধা চা চামচ, পানি- ১ কাপ (খাসি বুড়ো হলে আরও বেশি দিতে হবে, সেদ্ধ হবে এমন পরিমাণ)।


যেভাবে করবেন: সমস্ত উপকরণ মাংসের সাথে মিশিয়ে নিন। একটা ঢাকনা ওয়ালা পাত্র নিয়ে তাতে মাংস দিয়ে ঢেকে দিন। পানি শুকনো পর্যন্ত মাঝারি আঁচে  জ্বাল দিবেন (প্রেসার কুকার ব্যবহার করতে পারেন)। পানি শুকিয়ে গেলে ঢাকনা সরিয়ে নিয়ে নাড়তে থাকুন। ভাজা ভাজা হলে নামিয়ে পরিবেশন করুন। এই মাংস গরম গরম খেতে হবে, তাতে স্বাদ বেশি।

হাড়ি কাবাব 

যা লাগবে: গরুর মাংস- ৩ কেজি (হাড় ছাড়া), পেঁয়াজ কুচি- ২ কাপ, রসুন- ৩টা (বড়, কোষ ছড়ানো), আদা বাটা- ৩ টেবিল চামচ, গরম মসলার গুঁড়া- আধা চা চামচ, তেল- দেড় কাপ, গোল মরিচের গুঁড়া- ৫ টেবিল চামচ, লবণ- ২ টেবিল চামচ, শুকনো মরিচের গুঁড়া- আধা চা চামচ, জিরা গুঁড়া- ১ চা চামচ, ধনিয়া গুঁড়া- ১ টেবিল চামচ।


যেভাবে করবেন: প্রথমে মাংস পাতলা স্লাইস করে কেটে নিতে হবে। তারপর ওই মাংস একটু ছেঁচে নিতে হবে। পাতিলে তেল গরম করে পেঁয়াজ, রসুন ও আদা দিন। ২ মিনিট নাড়াচাড়া করে মাংস দিন। সাথে ধনিয়া, জিরা, শুকনো মরিচ ও গরম মসলার গুঁড়া দিন। কয়েক মিনিট পর মাংসের পানি ছাড়া শুরু হলে ঢাকনা দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করতে হবে। মাঝে মাঝে নেড়ে দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে দেখতে হবে মাংস সেদ্ধ হয়েছে কিনা। সেদ্ধ না হলে পরিমাণ মতো পানি দিতে হবে। এরপর লবণ ও গোল মরিচের গুঁড়া দিয়ে নাড়তে থাকুন। মাংস একটু ভাজা ভাজা করে নামিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার হাড়ি কাবাব

প্যানেল

×