
সুন্দর হওয়ার লড়াইয়ে আপনি কি ধীরে ধীরে অসুস্থ হচ্ছেন? মেকআপের সাধারণ উপাদানেই লুকিয়ে থাকতে পারে ক্যানসারের ভয়ংকর ছায়া সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সৌন্দর্যের পেছনে ছুটতে গিয়ে যদি স্বাস্থ্যটাই হারিয়ে যায়, তাহলে সেই সৌন্দর্য আর কতটা মূল্যবান? দিনে দিনে মেকআপ আর কসমেটিক্সের ব্যবহার যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে উদ্বেগ এসব পণ্যে থাকা কিছু উপাদান আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর কি না, বিশেষ করে ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী রোগের কারণ হয়ে উঠছে কি না।
কোন উপাদানগুলোতে ঝুঁকি বেশি?
ডা. সন্দীপ মুজুমদার, অ্যাপোলো ক্যানসার সেন্টারের রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট, বলেন—
“মেকআপে প্রচলিত সংরক্ষণ উপাদান প্যারাবেনস নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। এটি শরীরের হরমোন ‘ইস্ট্রোজেন’-এর মতো কাজ করে, যা স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে বলে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে। যদিও এখনও পরিষ্কারভাবে প্রমাণ মেলেনি, তবুও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে কী প্রভাব পড়ে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।”
ট্যাল্ক নিয়েও রয়েছে উদ্বেগ। এটি সাধারণত পাউডারজাত কসমেটিকসে ব্যবহৃত হয়। মূল সমস্যা হলো—এই ট্যাল্কে অ্যাসবেস্টস নামক ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান মিশে থাকতে পারে। যদিও কসমেটিকস ব্যবহারের জন্য ট্যাল্ককে অ্যাসবেস্টস-মুক্ত রাখার কথা, তবুও নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকেই যায়।
রূপের মোহে গোপনে ক্ষতি
কেবল প্যারাবেন বা ট্যাল্ক নয়, আরও কিছু উপাদান যেমন—সিনথেটিক রঙ, কৃত্রিম ঘ্রাণ, ও ফরমালডিহাইড নির্গমণকারী কেমিক্যালস নিয়েও গবেষণা চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিনের ব্যবহারে এসব উপাদানের ক্ষুদ্র মাত্রায় বারবার শরীরে প্রবেশ করাই ভবিষ্যতে বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।
ডা. মুজুমদার আরও বলেন, “আজকের দিনে সরাসরি কসমেটিকসকে ক্যানসারের কারণ বলা কঠিন হলেও, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, ল্যাব টেস্টিং আর স্বচ্ছ লেবেলিংয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। মানুষ এখন সচেতন হচ্ছে, আর তাই কোম্পানিগুলোও ধীরে ধীরে ‘ক্লিন বিউটি’ পণ্যের দিকে ঝুঁকছে।”
ডা. সাচিন আলমেল, পিডি হিন্দুজা হাসপাতালের মেডিকেল অনকোলজির প্রধান, বলেন, “রূপচর্চা আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় ঠিকই, কিন্তু এর পেছনে লুকানো স্বাস্থ্যঝুঁকিও রয়েছে। কসমেটিকসের জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যানসারসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকির কথাও উঠে আসছে।”
তিনি বলেন, “বেশিরভাগ মানুষ জানেন না, অনেক সময় কসমেটিকসের নিয়ন্ত্রণ বা মান যাচাই যথেষ্ট কঠোর নয়। এর ফাঁকে ক্ষতিকর উপাদান ঢুকে যাচ্ছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে। তাই সচেতন থাকতে হবে—প্রাকৃতিক বা অর্গানিক বিকল্প বেছে নেওয়া উচিত এবং সরকারের উচিত কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা।”
রূপচর্চা আমাদের অধিকারের জায়গা, তবে তা যেন আমাদের শরীরের ভেতরের সৌন্দর্যকে ধ্বংস না করে। প্রোডাক্ট কেনার আগে উপাদান যাচাই করুন, সন্দেহজনক উপাদান এড়িয়ে চলুন, এবং যতটা সম্ভব নিরাপদ ও প্রাকৃতিক বিকল্প বেছে নিন।
মিমিয়া