ছবি: সংগৃহীত
শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অনেক দ্রুত নতুন বিষয় শিখে ফেলে— এটি এখন বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত। এর পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে তাদের মস্তিষ্কে অধিক নিউরোনীয় প্লাস্টিসিটি বা নমনীয়তা থাকে। এই প্লাস্টিসিটি শিশুদের তথ্য দ্রুত শোষণ করতে সাহায্য করে, বিশেষ করে ভাষা শেখা, মোটর স্কিল ও সামাজিক দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে।
শিশুরা বড়দের মতো দায়িত্ব ও চাপের মধ্যে থাকে না, ফলে তারা খেলাধুলা, অনুসন্ধান এবং পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে শেখার সুযোগ বেশি পায়। একারণেই শেখার গতি তাদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি।
অন্যদিকে, প্রাপ্তবয়স্কদের ওয়ার্কিং মেমোরি বেশি বিকশিত হলেও সেটার একটা সীমাবদ্ধতা হলো "ফাংশনাল ফিক্সডনেস" বা কার্যগত জড়তা। এর ফলে তারা অনেক সময় জিনিসকে যেভাবে দেখে, সেভাবেই ব্যাখ্যা করে— ফলে নতুনভাবে ভাবার নমনীয়তা কমে যায়। শিশুদের মস্তিষ্ক যদিও ক্রমাগত বিকাশমান, তাই তারা বেশি সৃজনশীল ও নমনীয় চিন্তা করতে সক্ষম।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শিশু ও কলেজ পড়ুয়াদের মধ্যে স্মৃতিশক্তির তুলনায় শিশুরা অনেক ভালো করেছে। পূর্বে দেখানো পশুর ছবিগুলো শনাক্ত করতে শিশুরা যেখানে ৩১% নির্ভুলতা দেখিয়েছে, সেখানে প্রাপ্তবয়স্করা কেবল ৭% সফল হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, শিশুরা যেখানে চেনার জন্য চিত্রের মিল বা সাদৃশ্যের ওপর নির্ভর করে, সেখানে প্রাপ্তবয়স্করা ছবিকে একবার শ্রেণিবদ্ধ করলেই সেটির ওপর কম মনোযোগ দেয়।
ভাষা শেখার ক্ষেত্রেও শিশুরা এগিয়ে। কারণ, তাদের মস্তিষ্কে শব্দ শোনার সময় আরও বেশি স্নায়বিক সংযোগ তৈরি হয়। তাছাড়া, তারা তুলনামূলকভাবে কম জটিল তথ্য নিয়ে কাজ করে, যা শেখার ক্ষেত্রে সহায়ক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের বিভিন্ন কার্যকলাপে যুক্ত করা উচিত, যেন তাদের সৃজনশীলতা বিকশিত হয় এবং প্রতিভার বিকাশ শুরু থেকেই গড়ে ওঠে। যদিও প্রাপ্তবয়স্কদের শেখার গতি তুলনামূলক কম, তারা তথ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বেশি দক্ষ হয়।
এই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, শেখার সেরা সময় শুরু হয় শৈশবে—আর সেটিকে যতটা সম্ভব কাজে লাগানো জরুরি।
সূত্র: নেচার সায়েন্স
এম.কে.
