ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৩ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাবার কাছে ৪১ হাজার ডলার ঋণ চেয়েছিলেন, উত্তরে ওয়ারেন বাফেট বলেছিলেন "ব্যাংকে যাও"

প্রকাশিত: ১৭:৩৬, ১ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৭:৩৭, ১ জুন ২০২৫

বাবার কাছে ৪১ হাজার ডলার ঋণ চেয়েছিলেন, উত্তরে ওয়ারেন বাফেট বলেছিলেন

ছবিঃ সংগৃহীত

বিশ্ববিখ্যাত ধনকুবের ও বিনিয়োগ গুরু ওয়ারেন বাফেটের কন্যা সুসান বাফেট একবার বাবার কাছে ৪১ হাজার ডলার ঋণ চেয়েছিলেন, রান্নাঘরটা একটু বড় করার জন্য। জবাবে বাবা খুব সহজভাবে বলেছিলেন, “ব্যাংকে যাও।”

সুসান তখন স্বামী-সন্তান নিয়ে ওয়াশিংটন ডিসির ছোট্ট এক বাড়িতে থাকতেন। রান্নাঘরটা এতটাই ছোট ছিল যে, একটা খাবার টেবিল রাখার জায়গা ছিল না। ছেলেটা জন্মানোর পর তারা ভাবলেন—একটু জায়গা বাড়ালে ভাল হয়, হয়তো বাগানের দিকে একটা দরজা খুলে দেবে।

তাই সুসান সাহস করে বাবার কাছে গেলেন একটা ঋণ চাইতে—not a gift, just a loan. কিন্তু বাফেট শুনে বললেন, “তুমি তো শুধু আমার মেয়ে বলেই কিছু পাবে না। ঠিক যেমন নেব্রাস্কার কোনো কোয়ার্টারব্যাক নিজের বাবার পরিচয়ে দলে খেলতে পারে না।”

এই কথাটা শুনে সুসানের কষ্ট লেগেছিল। পরে এক ডকুমেন্টারিতে (HBO-এর Becoming Warren Buffett) তিনি বলেন, “আমি তো শুধু চাইছিলাম একটু সাহায্য। আমি ভেবেছিলাম, বাবা অন্তত এটা করবেন।”

তবে তিনি এটাও স্বীকার করেন, “বাবা আমাদের ছোটবেলা থেকেই শিখিয়েছেন—নিজে কষ্ট করে কিছু অর্জনের গুরুত্ব কত বড়। আমি সেই শিক্ষা পেয়েছি, সেটা বুঝি। তবে মাঝেমধ্যে মনে হয়, ‘বাবা, এবার শেখানো থামালেও তো পারো!’”

বাফেটের এই নীতি নতুন কিছু নয়। দুনিয়াজোড়া স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আর দরিদ্রতা দূরীকরণে তিনি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দান করেছেন। কিন্তু সন্তানদের জন্য তিনি রাখেন কঠোর নিয়ম—“নিজে কিছু করো, বাবার পরিচয়ে নয়।”

বয়স এখন ৯৪। বাফেট আগেই জানিয়েছেন, নিজের প্রায় সব সম্পদ (৯৯.৫%) তিনি দান করে যাবেন। তার মৃত্যুর পর, এই টাকা দেখভাল করবে তার তিন সন্তানদের পরিচালিত একটি ট্রাস্ট।

এক চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, “আমি কখনোই এমন কোনো পারিবারিক রাজত্ব গড়তে চাইনি, যা আমার মৃত্যুর পর প্রজন্মের পর প্রজন্ম চালিয়ে যাবে।”

তবুও সুসান মনে করেন, মানুষ অনেক সময় তার বাবাকে ভুলভাবে বোঝে। ২০১৭ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “অনেকেই ভাবে বাবা আমাদের কিছু দেন না। কিন্তু সেটা ঠিক না। তিনি আমাদের যথেষ্ট দিয়েছেন—ভাল শিক্ষা, মূল্যবোধ, সুযোগ। কিন্তু হ্যাঁ, তিনি আমাদের কারো কাছেই ৫০ বিলিয়ন ডলার রেখে যাবেন না, আর সেটাই স্বাভাবিক।”

সুসান এখন সমাজসেবার কাজে নিজেকে পুরোপুরি নিয়োজিত রেখেছেন। তিনি Sherwood Foundation-এর প্রধান, যা নেব্রাসকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক ন্যায়ের জন্য ইতিমধ্যেই এক বিলিয়নের বেশি অনুদান দিয়েছে। একই সঙ্গে তিনি Susan Thompson Buffett Foundation-এর চেয়ারপারসন, যা উচ্চশিক্ষা এবং নারীদের প্রজনন অধিকার নিয়ে কাজ করে।

এই ছোট্ট ঘটনা শুধু একজন পিতার নীতি নয়, বরং এটি একজন মেয়ের বেড়ে ওঠার, শেখার, এবং শেষ পর্যন্ত নিজের জায়গা নিজে তৈরি করার গল্প—যেখানে ভালোবাসা আছে, মূল্যবোধ আছে, আর আছে জীবনের এক সত্য: সবকিছু বাবা-মায়ের কাছ থেকে পাওয়া যায় না, কিছু নিজেকে করে নিতে হয়।

মারিয়া

×