
বয়স বাড়ার সাথে সাথে পেটের মেদ কমানো যেন এক অসম্ভব কাজ বলে মনে হয়। ধীরগতির মেটাবলিজম আর ব্যস্ত জীবনযাত্রার কারণে অনেকেই ধরে নেন যে ছিপছিপে থাকা শুধু তরুণদের জন্য, বা শুধুমাত্র তাদের জন্য যারা প্রতিদিন জিমে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করে।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, কিছু মানুষ বয়স বাড়ার পরও স্বাভাবিকভাবেই পেটের মেদ কমিয়ে ফেলেন, এবং এর জন্য তারা কঠোর ডায়েট বা ব্যায়ামের ওপর নির্ভর করেন না। বরং, তারা কিছু সাধারণ দৈনন্দিন অভ্যাস অনুসরণ করেন, যা হয়তো তারা নিজেরাও বুঝতে পারেন না।
এই অভ্যাসগুলো খুব কঠিন কিছু নয় এবং এগুলোর জন্য জিমে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং, এগুলো এমন ছোট ছোট লাইফস্টাইল পরিবর্তন যা যে কেউ সহজেই করতে পারেন। যদি কখনও মনে হয়ে থাকে, "কেন কিছু মানুষ এত সহজেই ছিপছিপে থাকেন?", তাহলে এই আটটি অভ্যাসের মধ্যেই হয়তো সেই উত্তর লুকিয়ে আছে।
১) তারা কঠোর ডায়েটের পেছনে ছুটে না
ফ্যাড ডায়েট আসে আর যায়, আর সেগুলো দ্রুত ফলাফল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু যারা বয়স বাড়ার পরও স্বাভাবিকভাবে মেদ ঝরিয়ে ফেলেন, তারা এসব প্রতারণায় পা দেন না।
তারা প্রতিটি ক্যালোরি গুনে খাওয়া বা কোনো নির্দিষ্ট খাবার সম্পূর্ণ বাদ দেওয়ার চিন্তা করেন না। বরং, তারা ভারসাম্য বজায় রাখেন,ক্ষুধা লাগলে খান, পেট ভরলে থেমে যান, আর মাঝে মাঝে ইচ্ছেমতো খাওয়াটাকে বড় কোনো অপরাধ মনে করেন না।
এই স্বাভাবিক পদ্ধতিতে তারা চরম ডায়েটিং এবং পরে আবার ওজন বেড়ে যাওয়ার চক্র থেকে মুক্ত থাকেন। শুধু নিজের শরীরের সংকেতগুলো শোনা এবং সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে তারা দীর্ঘমেয়াদে ছিপছিপে থাকেন, তাও কোনো কঠিন নিয়ম ছাড়াই।
২) তারা সারাদিন স্বাভাবিকভাবেই সক্রিয় থাকেন
অনেকে মনে করেন, মেদ কমাতে হলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জিমে কাটানো ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু যারা সহজেই ছিপছিপে থাকেন, তারা প্রায়শই এমন কোনো নির্দিষ্ট ব্যায়াম রুটিন অনুসরণ করেন না বরং তারা সারাদিন ছোট ছোট উপায়ে সক্রিয় থাকেন।
৩) তারা পর্যাপ্ত ঘুমকে গুরুত্ব দেন
ঘুম যে ওজনের উপর এতটা প্রভাব ফেলে, সেটা অনেকেই বোঝেন না। কিন্তু যারা বয়স বাড়ার পরও সহজেই মেদ কমিয়ে ফেলেন, তারা পর্যাপ্ত বিশ্রামকে গুরুত্ব দেন।
যারা কম ঘুমান, তাদের শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা বিশেষ করে পেটে চর্বি জমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, কম ঘুম খিদে নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, ফলে বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
কিন্তু যারা প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুমান, তারা প্রাকৃতিকভাবেই তাদের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, মানসিক চাপ কমান, এবং শরীরকে ঠিকভাবে কাজ করার জন্য সময় দেন,এতে কোনো কঠোর ডায়েট বা ব্যায়ামের প্রয়োজন পড়ে না।
৪) তারা মনোযোগ দিয়ে খায়
খাবার খেতে গিয়ে আমরা প্রায়ই ভুল করে বসি,ফোন স্ক্রল করতে করতে খাওয়া, টিভির সামনে বসে খাওয়া, বা ব্যস্ততার মধ্যে দ্রুত খাবার গিলে ফেলা। এসব কারণে আমরা কখন খিদে মিটে গেছে, সেটা বুঝতে পারি না, আর অপ্রয়োজনীয় ক্যালোরি খেয়ে ফেলি।
কিন্তু যারা বয়সের সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবে ওজন কমায়, তারা একটু ভিন্নভাবে খায়। তারা ধীরে ধীরে চিবিয়ে খায়, প্রতিটি কামড় উপভোগ করে, আর শরীর যখন বলে "আমি যথেষ্ট খেয়েছি," তখন থেমে যায়।এভাবে মনোযোগ দিয়ে খাওয়ার ফলে তারা না খেয়েই বেশি খেয়ে ফেলার ঝুঁকি এড়াতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে ওজনও সহজেই নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৫) তারা স্ট্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানে
অনেকেই মনে করেন, মানসিক চাপ শুধু আমাদের মনকে প্রভাবিত করে, শরীরের ওপর এর তেমন কোনো প্রভাব নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দীর্ঘদিনের মানসিক চাপ শরীরে কর্টিসলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা পেটে চর্বি জমার অন্যতম প্রধান কারণ।
কিন্তু যারা ছিপছিপে থাকেন, তারা স্ট্রেস দূর করার জন্য ভালো উপায় খুঁজে নেন। কেউ হাঁটতে যান, কেউ ধ্যান করেন, কেউ প্রিয় কাজের মধ্যে ডুবে যান।একবার কেউ মানসিক চাপ ঠিকমতো সামলাতে শিখলে, তার শরীরও ধীরে ধীরে সেই পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে।
৬) তারা কার্বোহাইড্রেটকে শত্রু ভাবে না
অনেকেই মনে করেন, পেটের মেদ কমাতে হলে কার্বোহাইড্রেট একেবারে বাদ দিতে হবে। কিন্তু যারা দীর্ঘমেয়াদে ছিপছিপে থাকেন, তারা কখনোই এত চরমপন্থা অবলম্বন করেন না।তারা সঠিক ধরণের কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার দিকে মনোযোগ দেন—যেমন শস্যজাতীয় খাবার, ফলমূল, ওটস বা বাদামি চাল। এভাবে খেলে শরীরে দীর্ঘক্ষণ শক্তি থাকে, ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে থাকে, এবং হঠাৎ বেশি খেয়ে ফেলার প্রবণতা কমে যায়।
৭) তারা যথেষ্ট পানি পান করে
যথেষ্ট পানি পান করা খুব সাধারণ শোনাতে পারে, কিন্তু যারা বয়স বাড়ার পরও ছিপছিপে থাকেন, তারা কখনোই নিজেদের পানিশূন্য হতে দেন না।
শরীরে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়, শরীর অপ্রয়োজনীয় জল ধরে রাখে, আর ক্ষুধার অনুভূতিও বিভ্রান্ত হয়ে যায়,ফলে আমরা খাবার খেতে চাই, যখন আসলে আমাদের কেবল পানি দরকার।
যারা ছিপছিপে থাকেন, তারা সারাদিন একটু একটু করে পানি পান করেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই এক গ্লাস পানি খান, এবং শরীর হাইড্রেটেড রাখার অভ্যাস গড়ে তোলেন।
৮) তারা ধারাবাহিকতা বজায় রাখে
সাম্প্রতিক ক্র্যাশ ডায়েট বা কঠোর ব্যায়াম কর্মসূচির উপর নির্ভর না করে, তারা ছোট ছোট অভ্যাস গড়ে তোলে যা তারা বছরের পর বছর ধরে চালিয়ে যেতে পারে।
একদিন ব্যায়াম মিস করলে বা একটু বেশি খেলে, তারা হাল ছেড়ে দেয় না,কারণ তারা জানে, বড় পরিবর্তন আসে ছোট অভ্যাসের ধারাবাহিকতা থেকে।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে মেদ কমানোর জন্য কঠোর নিয়ম বা কঠিন ব্যায়াম দরকার নেই। বরং, ছোট ছোট প্রতিদিনের অভ্যাসই বড় পরিবর্তন আনে।
এই অভ্যাসগুলো শুধু পেটের মেদ কমায় না, বরং জীবনযাত্রাকে আরও সুস্থ ও সুখী করে তোলে,তাও জিমে একবারও পা না রেখেই!
সূত্র: https://tinyurl.com/4n4ntmea
আফরোজা