ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অজ পাড়াগাঁয়ের জেসমিনের স্বপ্নপূরণ

ফাহমিদা ইয়াসমিন

প্রকাশিত: ০১:৩৮, ১৯ জানুয়ারি ২০২৪

অজ পাড়াগাঁয়ের জেসমিনের স্বপ্নপূরণ

জেসমিন

তুখোড় মেধাবী হয়ে ওঠে জেসমিন। দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সকল শ্রেণিতে প্রথম হওয়াটা ছিল সবসময়ই জেসমিনের দখলে। শুধুই কি তাই! প্রতিবার স্কুলে ফার্স্ট হওয়াটাও যেন ছিল তার নেশা। অষ্টম শ্রেণিতে মেধা বৃত্তিতেও উপজেলায় প্রথম স্থান দখল করে জেসমিন। উপজেলাভিত্তিক যে কোনো প্রতিযোগিতায় জেসমিন থাকে অনায়াসেই। উপজেলা বিতর্ক প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞান কুইজ, কিশোর-কিশোরী কুইজ সবকিছুতেই প্রথম জেসমিন আক্তার আছেই। ২০১৯ সালের জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহেও নির্বাচিত হয় বর্ষসেরা মেধাবী হিসেবে

বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের শোলারতাইড় গ্রামের লাল মাহমুদ খানের মেয়ে জেসমিন। জেসমিনের জন্মের আগেই তার বাবা যমুনা নদীর কড়াল গ্রাসের কারণে ভিটেমাটি হারিয়ে আশ্রয় নেয় অন্যের বাড়িতে। দুঃখ-কষ্টের সংসার হলেও জেসমিনের বাবা সবসময়ই স্বপ্ন দেখতেন ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার। কিন্তু বিধি বাম। সাংসারিক টানাপোড়েন ও শারীরিক অসুস্থতা তার সেই স্বপ্নকে দমিয়ে রাখে। কিন্তু জেসমিন তার স্বপ্নকে দমাতে দেয়নি।

ব্রাক প্রাক-প্রাথমিকের মাধ্যমে তার স্কুল জীবন শুরু হয়। এক বছরের ব্রাক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ভর্তি হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার মা-বাবার লালিত স্বপ্ন বাসা বাঁধে তার মনে। স্বপ্নেরাও যেন ডানা মেলতে শুরু করে। তুখোড় মেধাবী হয়ে ওঠে জেসমিন। দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সকল শ্রেণিতে প্রথম হওয়াটা ছিল সবসময়ই জেসমিনের দখলে। শুধুই কি তাই! প্রতিবার স্কুলে ফার্স্ট হওয়াটাও যেন ছিল তার নেশা। অষ্টম শ্রেণিতে মেধা বৃত্তিতেও উপজেলায় প্রথম স্থান দখল করে জেসমিন।

উপজেলাভিত্তিক যে কোনো প্রতিযোগিতায় জেসমিন থাকে অনায়াসেই। উপজেলা বিতর্ক প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞান কুইজ, কিশোর-কিশোরী কুইজ সবকিছুতেই প্রথম জেসমিন আক্তার আছেই। ২০১৯ সালের জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহেও নির্বাচিত হয় বর্ষসেরা মেধাবী হিসেবে। পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচিতেও হয় প্রথম। সবকিছু ছাপিয়ে ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ (সকল বিষয়ে) পেয়ে উত্তীর্ণ এবং রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের মেধা তালিকায় সারিয়াকান্দি উপজেলার মধ্যে প্রথম স্থান দখল করে। ভর্তি হয় রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে। নতুন করে শুরু হলো তার অর্জনের মাত্রা।

কলেজ কর্তৃক বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতা আর প্রথম হওয়াটা ছিল বরাবরই তার দখলে। এমনকি লিখেছে কলামও। মাতৃভাষা বিষয়ক তার লেখাটি প্রকাশিত হয় কয়েকটি দৈনিকে। এরপর উচ্চ মাধ্যমিক চূড়ান্ত পরীক্ষা। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও জিপিএ-৫ (সকল বিষয়ে) পেয়ে উত্তীর্ণ হয় সে। এরপরই আসে তার স্বপ্ন পূরণের মোক্ষম সময়। ২০২২-২৩ সালের মেডিক্যাল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় স্থান করে নেয় মেধা তালিকায়। বর্তমানে পড়ছে দিনাজপুরের এম আব্দুর রহীম মেডিক্যাল কলেজ।

স্বপ্নজয়ের অনুভূতি প্রকাশ করে জেসমিন বলেন, আমি নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে এ পর্যন্ত এসেছি। এরজন্য সর্বপ্রথম মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। এরপর আমার মা-বাবা, পরিবার ও শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি আমার শিক্ষাজীবনে যারা নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের স্মরণ করছি। সর্বোপরি আমি সকলের কাছে দোয়া কামনা করছি। আমি একজন আদর্শ চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই। পাশাপাশি দেশকে এগিয়ে নিতে চাই।

×