ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

গরমে স্বাচ্ছন্দ্যময় পোশাক

জলি রহমান

প্রকাশিত: ২২:১১, ১৯ মার্চ ২০২৩; আপডেট: ২২:২৭, ১৯ মার্চ ২০২৩

গরমে স্বাচ্ছন্দ্যময় পোশাক

.

চৈত্রের শুরুতেই আবহাওয়ায় হচ্ছে নানান রূপবদল। কখনো তাপপ্রবাহে অস্বস্তিকর গরম, কখনো বৈশাখের আগমনী বার্তার হিমেল বাতাস। আবহাওয়া পরিবর্তনের এ সময়ে পোশাক ব্যবহারে আসে ভিন্নতা। গরমের কথা মাথায় রেখে তরুণ-তরুণীরা চান আরামদায়ক ও ফ্যাশনেবল পোশাক পরতে। আরামদায়ক পোশাকের জন্য কেউ কেউ ঢুঁ মারছেন ফ্যাশন হাউসগুলোতে, কেউ আবার টেইলার্সের দোকান থেকে তৈরি করে নিচ্ছেন সুতি কাপড়ের পোশাক। কেমন হওয়া উচিত গরমের পোশাক? সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে, এই গরমে অবশ্যই কৃত্রিম তন্তুর পোশাক এড়িয়ে চলতে হবে। পাতলা সুতি কাপড়ের পোশাক পরলে একদিকে যেমন গরম কম লাগবে, অন্যদিকে আরামও লাগবে। ফলে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করা যাবে। পাতলা তাঁত ও খাদি কাপড়ের পোশাকও এ সময় পরা যায়। তবে গরম এলেই সুতি কাপড়ের প্রাধান্য বাড়ে।

এ সময় রং নির্বাচনেও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। গরমের পোশাকের ক্ষেত্রে সাদা, হাল্কা গোলাপি, হাল্কা বেগুনি, হাল্কা নীল, বাদামি, আকাশী, হাল্কা হলুদ, ধূসরসহ হাল্কা রঙের পোশাকগুলো প্রাধান্য পাবে। গরমে সাদা ও অন্যান্য হালকা রঙের পোশাক শুধু তাপ শোষণই করে না, সেই সঙ্গে চোখকেও দেয় প্রশান্তি। তবে গরমকালে সাদা রঙের পোশাকের জয়জয়কার সব সময়ই।

আবার পোশাকে খুব বেশি টাইট ফিটিংস হলেও সেটা খুব একটা স্বস্তিদায়ক হবে না। একটু ঢিলেঢালা হলেই বরং ভালো হয়। যারা হাইনেক পরেন তারা এ গরমে একটু কলার ছাড়া বড় গলা পরে দেখতে পারেন। আরাম পাবেন। গরমে ফুল স্লিভ কিংবা থ্রি কোয়ার্টার আরামদায়ক নয়। তাই স্লিভলেস অথবা শর্ট স্লিভের টপস ও কুর্তি হবে আরামদায়ক। সঙ্গে পরুন জেগিংস অথবা লেগিংস। যা আপনাকে দেবে ফ্যাশনেবল লুক।

সুতি কাপড়ের সঙ্গে লিনেন, দুপিয়ান, ভয়েল, মসলিন, চিকেন ও তাতের কাপড় গরমের জন্য বেশ উপযোগী। উৎসবে পরতে পারেন কৃত্রিম মসলিন বা পাতলা চোষা কাতান। আমাদের দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো বেশিরভাগই সুতি কাপড় দিয়ে তাদের পোশাক তৈরি করে থাকে। কাজেই আপনার পছন্দসই পোশাক কিনে নিতে পারেন যে কোনো ফ্যাশন হাউস থেকে। আবার চাইলে আপনি নিজেই হতে পারেন আপনার পোশাকের ডিজাইনার। বাজারে এরই মধ্যে এসে গেছে গরমের উপযোগী রং ও ডিজাইনের থান কাপড়। সেখান থেকেও পছন্দের কাপড়টি কিনে ইচ্ছামতো ডিজাইন করে টেইলার থেকে বানিয়ে নিতে পারেন পোশাক। ডিজাইনে বৈচিত্র্য আনার জন্য লাগিয়ে নিতে পারেন লেস কিংবা পাইপিন, বর্ডার। এতে আপনি শুধু স্বস্তিদায়ক পোশাক যে পাবেন তাই-ই নয়, নিজের পোশাক নিজে ডিজাইন করার জন্য এক ধরনের আত্মতৃপ্তিও। সময়োপযোগী কাপড় বুটিক হাউসগুলো ঘুরেও কিনতে পারবেন। দর-দামের রকমফের গজ কাপড় পাওয়া যাচ্ছে নিউ মার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনীচক, ইসলামপুর, মৌচাক, ইস্টার্ন প্লাজা, বসুন্ধরা সিটি, পিংক সিটি, মাসকট প্লাজা, নর্থটাওয়ার, রাইফেলস স্কয়ারেও। গজ কাপড় কেনার ক্ষেত্রে বহরটা জেনে নিতে হবে। দুই থেকে সাড়ে তিন হাত পর্যন্ত বহর হয় এ কাপড়ের। ছেলেরা শার্টের জন্য পিস হিসেবে কাপড় কিনতে পারেন। দেখে নিন গরমে পরার উপযোগী কিনা। দাম নির্ভর করবে কাপড়ের মানের ওপর।

গরমে মেয়েদের সাজসজ্জার ক্ষেত্রে কানে মুক্তার ছোট দুল এবং গলায় সরু চেনের সঙ্গে মুক্তার লকেট পরতে পারেন। তা ছাড়া পাথরের টপ বা ছোট ঝুমকা পরতে পারেন। বড় দুল একদম এড়িয়ে চলুন। হাতে হাল্কা একটা ব্রেসলেট থাকতে পারে। পায়ে আংটি বা পায়েল। চুল উঁচু করে পনিটেলও করতে পারেন বা পাঞ্চক্লিপ দিয়েও আটকে রাখতে পারেন চুলটা।

গরমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পোশাক বাছাই করতে গিয়ে হিমশিম খান তরুণরা। দেখা যায় পুরুষের পোশাক একটু ভারিই হয়ে থাকে। কিন্তু গরমে এমন পোশাক বেছে নিতে হবে যেন দ্রুত ঘামে ভিজে না যায়। কারণ ঘাম শরীরে বসে সর্দি-কাশি, ঘামাচি, চুলকানি বা অন্যান্য রোগের আবির্ভাব ঘটায়। তাই পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই পাতলা ও আরামের বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। আর সেই সঙ্গে পোশাকটি যাতে ফ্যাশনেবল হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে। ফ্যাশন সচেতন অনেকেই নিজেকে ট্রেন্ডি ভাবতে অভ্যস্ত। তারা স্বস্তির পাশাপাশি সৌন্দর্যকেও সমান প্রাধান্য দেন। গরমে ছেলেদের জন্য সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক পোশাক হচ্ছে টি-শার্ট। বিশেষ করে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলেদের কাছে এই পোশাকের বিকল্প নেই। জিন্স, গ্যাবাডিন কিংবা অন্য প্যান্টের সঙ্গে টি-শার্ট বেশ মানিয়ে যায়। সব বয়সের পুরুষ তাদের স্বাচ্ছন্দ্যময় পোশাকের তালিকায় টি-শার্ট রাখতে পারেন।

গোল-গলা, ভি-গলা ও কলারসহ নানা রকম টি-শার্ট বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। টি-শার্ট কেনার আগে কাপড় সম্পূর্ণ সুতি কিনা তা যাচাই করে নেওয়া জরুরি। টি-শার্টের হাফ হাতার নিচের দিকে ও কলারে ভিন্ন রঙের ব্যবহার চলছে। এসব ছাড়াও ফতুয়া কাটের গলাও বেশ চলছে। কাঁধে বা হাতায় একাধিক মোটা সেলাই দেখা যাচ্ছে। নিচের দিকে সম্পূর্ণ গোল বা হাল্কা কাটা। কিছু টি-শার্টের সামনের পার্ট পেছনের পার্টের চেয়ে সামান্য খাটো থাকে। এ ছাড়া টি-শার্টের বুকেও নানা ডিজাইনের সংমিশ্রণ ঘটেছে। কালো রং অতিরিক্ত তাপ শোষণ করে। তাই গরমে বেছে নিতে পারেন সাদা, নীল, ছাই, ঘন নীল, সবুজ, মেরুন, চাপা সাদা, হলুদ, হাল্কা ফিরোজা, গোলাপি, লালচে ইত্যাদি রঙের পলো-শার্ট বা টি-শার্ট।

কোথায় পাওয়া যাবে এবং দরদাম : চাঁদনী চক, নিউ মার্কেট, আজিজ সুপার মার্কেট, মতিঝিল, গুলিস্তান, ইসলামপুর, মৌচাক মার্কেটে রয়েছে টি-শার্টের বিপুল সমাহার। দাম হবে ১৫০ থেকে ৫০০ এর মধ্যে। এছাড়া দেশীয় ফ্যাশন হাউস লা-রিভ, টুয়েলভ, রঙ বাংলাদেশসহ বিভিন্ন বুটিকস শপে মিলবে সুতি কাপড়ের বিভিন্ন নান্দনিক পোশাক। দামও রয়েছে নাগালের মধ্যে। 

×