
ছবি: সংগৃহীত
গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মানবিক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে পুরো অঞ্চলে। শুধু সাধারণ নাগরিক নয়, এই সংকটে জর্জরিত সাংবাদিক, মানবিক সহায়তাকর্মীসহ সবাই।
সম্প্রতি গাজাভিত্তিক ফটোজার্নালিস্ট মোহাম্মদ আবু আউন এক লিংকডইন পোস্টে জানিয়েছেন, তিনি পরিবারকে খাওয়ানোর জন্য নিজের ক্যামেরা ও প্রেস শিল্ড বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
তিনি লেখেন, “আমি গাজার ফটোজার্নালিস্ট মোহাম্মদ আবু আউন। আমি আমার ক্যামেরা ও প্রেস শিল্ড বিক্রি করতে চাই, যাতে পরিবারকে খাওয়াতে পারি।”
মোহাম্মদ আবু আউন নিউ ইয়র্ক টাইমস, স্কাই নিউজ এবং এবিসি নিউজের মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কাজ করেছেন।
জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবিক সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, গাজা এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (WFP) তথ্য অনুযায়ী, গাজার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ টানা কয়েকদিন খাবার ছাড়া কাটাচ্ছে। এজেন্সিটি জানিয়েছে, প্রায় ৪.৭ লক্ষ মানুষ চরম দুর্ভিক্ষর মুখোমুখি।
ইসরায়েল দাবি করেছে, শত শত ট্রাক মানবিক সাহায্য নিয়ে সীমান্তে অপেক্ষা করছে। কিন্তু সংস্থাগুলোর মতে, সেগুলো বিতরণের ক্ষেত্রে প্রবল বাধা রয়েছে। সম্প্রতি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কেরেম শালোম সীমান্তে কিছু সাংবাদিককে নিয়ে যায় এবং সেখানকার স্ট্যাকে থাকা সাহায্যের বাক্স দেখায়।
অপরদিকে, জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এপ্রিল মাসে গাজায় দাতব্য রান্নাঘরগুলো যেখানে প্রতিদিন ১০ লক্ষের বেশি খাবার সরবরাহ করত, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১.৬ লক্ষে।
এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন করে আহ্বান জানানো হয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ ‘এক্স’-এ লিখেছেন, “গাজায় যুদ্ধ থামানোর সময় এসেছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি সব পক্ষকে যুদ্ধ অবসানের জন্য তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে আহ্বান জানাচ্ছি।”
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাম বলেন, “মেক্সিকো এখন শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কথা ও কাজে একসঙ্গে কাজ করছে।”
অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামাসকে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের জন্য দায়ী করে ইসরায়েলের চলমান হামলার পক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, “আমার মনে হয় তারা মরতে চায়। আপনাকে কাজটা শেষ করতেই হবে।”
এদিকে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঘোষণা দেন, ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে এবং তিনি যুদ্ধ থামিয়ে বেসামরিক মানুষের জীবন বাঁচানোর আহ্বান জানান। জর্ডান ইতিমধ্যেই গাজায় খাদ্য ও শিশু খাদ্য প্যারাড্রপ করার অনুমতি চেয়ে ইসরায়েলের কাছে অনুরোধ করেছে, যা এখন সমন্বয়ের মধ্যে রয়েছে।
অবরোধ, যুদ্ধ ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নেওয়া কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। সাংবাদিক মোহাম্মদ আবু আউনের মতো অনেকেই এখন জীবনের জন্য সাংবাদিকতা ত্যাগ করে খাবারের খোঁজে নেমে পড়েছেন।
মুমু ২