ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

নেতানিয়াহুর ইরান যুদ্ধ জয়ের দাবি বিশ্বাস করছে না খোদ ইসরায়েলিরাই!

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২৯ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৬:২২, ২৯ জুন ২০২৫

নেতানিয়াহুর ইরান যুদ্ধ জয়ের দাবি বিশ্বাস করছে না খোদ ইসরায়েলিরাই!

ছ‌বি: সংগৃহীত

ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে জয় দাবি করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। কিন্তু ইসরায়েলিরা তার এই দাবিকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, অনেকেই তাকে আর বিশ্বাস করেন না।

গত মার্চে গাজায় একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তি হচ্ছিল। এই চুক্তির মাধ্যমে অনেক ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি পেয়েছিল এবং কিছু ফিলিস্তিনি বন্দিও ছাড়া হয়েছিল। এরপর ধাপে ধাপে আরও জিম্মি মুক্তি ও সেনা প্রত্যাহারের কথা ছিল।

কিন্তু নেতানিয়াহু হঠাৎ সেই প্রক্রিয়া বন্ধ করে আবার হামলার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, হামাস সম্পূর্ণ ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে। এতে জিম্মি পরিবারসহ অনেক মানুষ ক্ষুব্ধ হন। তারা বলেন, নেতানিয়াহু নিজের ক্ষমতা বাঁচাতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এরপর নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা কমে যায়। তার সরকারে ভাঙন ধরার আশঙ্কাও দেখা দেয়। কট্টর ডানপন্থী দলগুলোর ওপর এখন তিনি বেশি নির্ভরশীল।

তিন মাস পর, ইরানের বিরুদ্ধে ১২ দিনের যুদ্ধের পর তিনি আবার জনগণের সামনে আসেন। তিনি বলেন, এখনো অনেক "গুরুত্বপূর্ণ কাজ" বাকি আছে। তাই জনগণ চাইলে তিনি আবার নির্বাচন করে প্রধানমন্ত্রী হতে চান।

তবে জরিপ বলছে, ইরান যুদ্ধ থেকে নেতানিয়াহু খুব একটা লাভবান হননি। তার দল লিকুদ সংসদে এককভাবে জেতার মতো অবস্থানে নেই। ডানপন্থী ছোট দলগুলোর সমর্থন পাওয়াও কঠিন হয়ে উঠেছে।

মারিভ পত্রিকার এক জরিপে বলা হয়েছে, ৫৯ শতাংশ মানুষ এখনই গাজার যুদ্ধ বন্ধ করে জিম্মিদের মুক্তির পক্ষে। ৪৯ শতাংশ মনে করেন, নেতানিয়াহু রাজনৈতিক কারণে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।

ইসরায়েলি গবেষক প্রফেসর তামার হারম্যান বলেন, নেতানিয়াহু খুব দক্ষ রাজনীতিবিদ হলেও এখন তার ওপর মানুষের আস্থা কমে গেছে। নতুন জরিপে দেখা গেছে, ৫০ শতাংশের কম মানুষই তাকে বিশ্বাস করেন।

এদিকে, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চলছে। আগামী সপ্তাহে তাকে আদালতে সাক্ষ্য দিতে হবে। তিনি আবার মামলার তারিখ পিছিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আদালত তা মেনে নেয়নি।

নেতানিয়াহু দাবি করছেন, এসব মামলা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। অন্যদিকে, বিরোধীরা বলছেন, তাকে অবশ্যই বিচারমুখে পড়তে হবে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে “বীর” বলেই বিচার বন্ধের দাবি তোলেন। তবে ইসরায়েলের বিরোধী নেতা ইয়াইর লাপিদ বলেন, এটি একটি স্বাধীন দেশের বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ।

গাজার যুদ্ধ নিয়ে দেশের ভিতরে এবং বাইরেও নেতানিয়াহুর সমালোচনা হচ্ছে। অনেক সামরিক কর্মকর্তা বলছেন, গাজায় যা সম্ভব ছিল, সবই করা হয়ে গেছে।

নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী গালান্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। গাজায় ৫৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু নিয়েও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

এই অবস্থায় ইসরায়েলে এখনই নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা কম। যুদ্ধ চলছে, জিম্মিরাও মুক্ত হয়নি। তবে নেতানিয়াহু অতীতেও অনেকবার প্রত্যাখ্যাত হয়েও ফিরে এসেছেন। তাই তার পরবর্তী পদক্ষেপ কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।

সূত্র: বিবিসি

এম.কে.

×