
ছবি: সংগৃহীত।
ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্র লক্ষ্য করে সামরিক অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। পারমাণবিক বোমা তৈরির অভিযোগ তুলে ইরানকে কখনো পরমাণু অস্ত্রধারী হতে না দেওয়ার হুমকিও দিয়েছে দুই দেশ।
কিন্তু এই প্রথম নয়—এর আগেও বিশ্বের আরেক মুসলিম দেশ পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে থামিয়ে দিতে সক্রিয় হয়েছিল ইসরায়েল ও তার আঞ্চলিক মিত্র ভারত। এমনকি পাকিস্তানের কিংবদন্তি পরমাণুবিজ্ঞানী ড. আব্দুল কাদির খানসহ সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের গুপ্তহত্যার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছিল।
তবে সেইসব পরিকল্পনা সফল হয়নি। ১৯৭০ ও ৮০’র দশকে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থার তীব্র নজরদারির মধ্যেই পাকিস্তান গোপনে পারমাণু কর্মসূচি এগিয়ে নেয়। নেতৃত্বে ছিলেন ড. আব্দুল কাদির খান। শেষ পর্যন্ত ১৯৯৮ সালে পাকিস্তান সফলভাবে পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে বিশ্বের সপ্তম ও প্রথম মুসলিম পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
সিআইএ’র তৎকালীন পরিচালক জর্জ ট্যানেট ড. খানকে বিশ্বের জন্য এক “বিপজ্জনক চ্যালেঞ্জ” হিসেবে দেখতেন। অন্যদিকে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান সাপ্তাহি সাবি পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ড. খানকে হত্যার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সে সিদ্ধান্ত না নেওয়াকে তিনি তার জীবনের অন্যতম বড় আফসোস মনে করেন।
পাকিস্তানে ড. খান আজও জাতীয় বীর হিসেবে স্বীকৃত। তিনি শুধু নিজ দেশেই নয়—ইরান, লিবিয়া ও উত্তর কোরিয়াকেও তাদের পরমাণু কর্মসূচিতে সহায়তা করেছেন বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক তদন্তে উঠে এসেছে। তার নেতৃত্বাধীন একটি গোপন আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ছিল, যার মাধ্যমে এসব রাষ্ট্রকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হয়। এর মধ্যেই উত্তর কোরিয়া এখন একটি কার্যকর পারমাণবিক শক্তি হিসেবে পরিচিত।
১৯৭৪ সালে ভারতের পরমাণু পরীক্ষা পাকিস্তানকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, "ঘাস খাবো, ক্ষুধার্ত থাকবো, কিন্তু পরমাণু বোমা বানাবোই।" তিনি যুক্তি দেন, খ্রিস্টানদের, ইহুদিদের ও হিন্দুদের যদি পরমাণু অস্ত্র থাকতে পারে, তাহলে মুসলমানদের কেন থাকবে না?
এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে শুরু হয় পাকিস্তানের গোপন পারমাণু কর্মসূচি। বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগে পড়ে ভারত ও ইসরায়েল। আব্দুল কাদির খানকে হত্যা এবং পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ১৯৮০-এর দশকে ইসরায়েল ভারতের সহায়তায় পাকিস্তানের পরমাণু কেন্দ্র লক্ষ্য করে বিমান হামলার প্রস্তুতি নেয়, কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভারত সরকার সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে।
ড. খান বরাবরই বিশ্বাস করতেন, তার তৈরি পারমাণু বোমাই পাকিস্তানকে বিদেশি আগ্রাসন ও পারমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী ভারতের হুমকি থেকে রক্ষা করেছে। আজও পাকিস্তানের বহু নাগরিক তার এই ভূমিকাকে দেশের নিরাপত্তার জন্য মাইলফলক বলে মনে করেন।
মিরাজ খান