
ছবিঃ সংগৃহীত
বর্তমান বিশ্বের প্রতিরক্ষা কৌশলে বিমান বাহিনীর গুরুত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেনা কিংবা নৌবাহিনীর পাশাপাশি, আকাশ প্রতিরক্ষা এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য আধুনিক যুদ্ধবিমান ও কৌশলগত আকাশ শক্তি এখন অত্যাবশ্যক।
২০২৪ সালের তথ্যের ভিত্তিতে World Population Review যে তালিকা প্রকাশ করেছে, সেখানে ২০২৫ সালের বিশ্বের বৃহত্তম বিমান বাহিনীগুলোর অবস্থান নির্ধারিত হয়েছে মোট সামরিক বিমান সংখ্যার উপর ভিত্তি করে।
নিচে তালিকাটি উপস্থাপন করা হলো—
১. যুক্তরাষ্ট্র – মোট সামরিক বিমান: ১৪,৪৮৬
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী এখনও বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও প্রযুক্তিগতভাবে অগ্রসর। এদের বহরে রয়েছে অত্যাধুনিক F-22 Raptor, F-35 Lightning II, বোমারু বিমান B-2 Spirit, B-52 Stratofortress, এবং বিভিন্ন ধরনের ড্রোন ও পরিবহন বিমান। মার্কিন বিমান শক্তি চারটি বাহিনী—Air Force, Navy, Marines ও Army—থেকে গঠিত।
২. রাশিয়া – মোট সামরিক বিমান: ৪,২৯২
রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই শক্তিশালী বিমান বাহিনীর অধিকারী। তাদের বহরে রয়েছে Tu-160 এবং Tu-22M বোমারু বিমান, Su-35 এবং Su-57-এর মতো উন্নত যুদ্ধবিমান। কঠিন পরিবেশে টিকে থাকার মতো সক্ষমতা এই বাহিনীর বড় বৈশিষ্ট্য।
৩. চীন – মোট সামরিক বিমান: ৩,৩০৪
চীনের বিমান বাহিনী (PLAAF) দ্রুত আধুনিক হয়েছে। দেশটি এখন নিজের তৈরি J-20 স্টিলথ জেট এবং J-16 মাল্টিরোল ফাইটার-এর মতো বিমান ব্যবহার করছে। সামরিক ও প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে চীন ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে।
৪. ভারত – মোট সামরিক বিমান: ২,২৯৬
ভারতের বিমান বাহিনী এখন বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম। এটি মূলত ভারতীয় বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনীর সম্মিলিত সম্পদের মাধ্যমে গঠিত। ভারতীয় বাহিনীতে রয়েছে Su-30MKI, Rafale, Mirage-2000, এবং দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি Tejas যুদ্ধবিমান।
‘Make in India’ নীতির আওতায় ভারত বিমান নির্মাণে নিজস্ব সক্ষমতা গড়ে তুলছে।
৫. জাপান – মোট সামরিক বিমান: ১,৪৫৯
জাপান তার আত্মরক্ষামূলক বিমান বাহিনীকে অত্যাধুনিক করে তুলেছে। F-35 ও উন্নত F-15J যুদ্ধবিমানসহ তাদের বহর আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৬. পাকিস্তান – মোট সামরিক বিমান: ১,৪৩৪
পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় বিমান বাহিনী পরিচালনা করে। এদের বহরে রয়েছে মার্কিন F-16, চীনা JF-17 Thunder এবং ফরাসি Mirage যুদ্ধবিমান। চীনের সঙ্গে যৌথভাবে বিমান তৈরির মাধ্যমে তারা দ্রুত প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সাধন করছে।
৭. দক্ষিণ কোরিয়া – মোট সামরিক বিমান: ১,১৭১
উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবেলায় দক্ষিণ কোরিয়া তার বিমান বাহিনীকে ক্রমাগত আধুনিক করছে। তাদের বহরে রয়েছে F-35A, KF-16 এবং নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি KF-21 Boramae।
৮. মিশর – মোট সামরিক বিমান: ১,০৯৩
মিশর একটি বৈচিত্র্যময় বিমান বহর পরিচালনা করে, যাতে রয়েছে মার্কিন F-16, ফরাসি Rafale, এবং রাশিয়ান যুদ্ধবিমান। আফ্রিকা-মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানে মিশরের এই বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৯. তুরস্ক – মোট সামরিক বিমান: ১,০৬৯
তুরস্কের বিমান বাহিনী আধুনিক যুদ্ধবিমান ও ড্রোন প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ। তাদের Bayraktar ড্রোন ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। NATO সদস্য হিসেবে তুরস্কের বিমান বাহিনী পশ্চিমা মানদণ্ড অনুযায়ী তৈরি ও পরিচালিত।
১০. ফ্রান্স – মোট সামরিক বিমান: ৯৭২
ফ্রান্সের বিমান বাহিনী ছোট হলেও অত্যন্ত কার্যকর। তাদের Rafale যুদ্ধবিমান, পরিবহন ও নজরদারি বিমানের মাধ্যমে ফ্রান্স ইউরোপ, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ভূমিকা পালন করে।
এই তালিকা প্রমাণ করে যে আধুনিক বিশ্বে কেবল সেনা বা নৌবাহিনীর মাধ্যমে নয়, আকাশে শক্তির প্রক্ষেপণও একটি দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার মূলে রয়েছে।
ভারতের ৪ নম্বর অবস্থান একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন, যা দেশটির আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সামরিক অবস্থানের প্রমাণ। পাকিস্তানও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই—তারা প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্বের মাধ্যমে উন্নয়ন অব্যাহত রেখেছে।
আজকের বিশ্বে যেখানে আকাশপথেই অনেক সংকট নেমে আসে, সেখানে একটি শক্তিশালী বিমান বাহিনী যেন দেশের আকাশ নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় গ্যারান্টি।
মারিয়া