
ছবি: সংগৃহীত
১৯৮৬ সালে চেরনোবিলের পারমাণবিক বিস্ফোরণের পর প্রায় চার দশক পেরিয়ে গেলেও এখনো আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সেই দুর্যোগের ভয়ঙ্করতম স্মারক—“এলিফ্যান্টস ফুট”। এটি শুধু একটি বস্তু নয়, বরং মানবজাতির প্রযুক্তিগত ব্যর্থতার এক জীবন্ত নিদর্শন।
কী এই এলিফ্যান্টস ফুট?
চেরনোবিলের ৪ নম্বর রিয়্যাক্টরে বিস্ফোরণের সময় অতিমাত্রার তাপে পারমাণবিক জ্বালানির সঙ্গে গলতে থাকে কংক্রিট, স্টিলসহ আশপাশের বিভিন্ন উপাদান। এই গলে যাওয়া পদার্থগুলো একত্রিত হয়ে রেডিওঅ্যাকটিভ লাভার মতো একটি কঠিন ও কদাকার বস্তু তৈরি করে—যার গঠন একটি হাতির পায়ের মতো। সেখান থেকেই নাম হয় "এলিফ্যান্টস ফুট"।
এই পদার্থের নাম কোরিয়াম, যা কেবলমাত্র পারমাণবিক দুর্ঘটনার সময়ই সৃষ্টি হয়। এটি কোনো প্রাকৃতিক পদার্থ নয়। অতিরিক্ত তাপ, চাপ ও তেজস্ক্রিয়তার ফলেই এর সৃষ্টি।
যখন এই এলিফ্যান্টস ফুট প্রথম আবিষ্কৃত হয়, তখন এটি প্রতি ঘণ্টায় ১০,০০০ রেন্টজেন তেজস্ক্রিয়তা ছড়াচ্ছিল—যা মানুষকে কয়েক মিনিটেই মেরে ফেলতে সক্ষম। রেডিওঅ্যাকটিভ তরঙ্গের কারণে ক্যামেরাও ঠিকমতো কাজ করত না। ছবি বা ভিডিও ফুটেজে সাদা দাগ দেখা যেত, যা ছিল বিকিরণের প্রভাব।
তেজস্ক্রিয়তার ভয়ে সবাই যখন দূরে, তখন কয়েকজন বিজ্ঞানী জীবন বিপন্ন জেনেও এর কাছাকাছি গিয়ে গবেষণা চালান। কুখ্যাত কোরিয়ামের প্রথম ছবি তুলেছিলেন কাজাখ বিজ্ঞানী আরতুর করনেয়েভ, যিনি কালাশনিকভ রাইফেল দিয়ে বস্তুটি থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন।
তিনি কৌতুক করে বলেছিলেন, “সোভিয়েত রেডিয়েশনই পৃথিবীর সেরা রেডিয়েশন!” তিনি ২০২২ সালে ৭৩ বছর বয়সে মারা যান।
বর্তমানে এলিফ্যান্টস ফুট আর আগের মতো ভয়ঙ্কর নয়। তবে এটি একেবারেই নিরাপদ হয়ে যায়নি। এখন এর গঠন অনেকটা বালির মতো নরম হয়ে গেছে বলে জানাচ্ছেন ইউক্রেনের পারমাণবিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ ম্যাক্সিম সাভেলিয়েভ।
যদিও রেডিয়েশন অনেকটা কমে এসেছে, তবুও এটি ধ্বসে পড়লে বা বাতাসে তেজস্ক্রিয় ধুলো ছড়িয়ে পড়লে নতুন বিপদ সৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আবারও চেরনোবিল অঞ্চল বিশ্বজুড়ে আলোচনায় উঠে আসে। রুশ সেনারা যখন চেরনোবিল দখল করে নেয়, তখন শঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে—তারা তেজস্ক্রিয় এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি করে নিজেরাই রেডিয়েশনের শিকার হতে পারে।
ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ দাবি করে, রুশ সেনারা তেজস্ক্রিয় এলাকায় পরিখা খুঁড়ে নিজেরাই ‘মৃত্যুর ফাঁদে’ পড়েছে। আর বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হলে চুল্লির স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়তে পারত।
চেরনোবিল দুর্ঘটনার কারণে ৪ লাখেরও বেশি মানুষকে স্থানান্তর করা হয়। প্রায় ৫ লাখ কর্মী দুর্ঘটনার পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় অংশ নেন। দুর্ঘটনার তাত্ক্ষণিক মৃত্যু ৩১ জন হলেও দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগে মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার থেকে ৬০ হাজার পর্যন্ত বলে অনুমান করা হয়।
বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে থাইরয়েড ক্যানসারের হার ব্যাপক হারে বেড়ে যায়
মুমু ২