
ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ কোরিয়া সীমান্তবর্তী এলাকায় উত্তর কোরিয়ার উদ্দেশে প্রচার চালানো লাউডস্পিকার কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। সদ্য দায়িত্ব নেওয়া প্রেসিডেন্ট লি জে-মিউং-এর নেতৃত্বে এ সিদ্ধান্তকে আন্তঃকোরীয় আস্থা ও শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য হলো "উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস গড়ে তোলা এবং উপদ্বীপে স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।"
প্রেসিডেন্ট লি, যিনি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই এই উদ্যোগ গ্রহণ করলেন। তাঁর পূর্বসূরি ইউন সোক ইওল-এর সময় দুই কোরিয়ার সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য অবনতি ঘটে। ইউন এক পর্যায়ে দেশজুড়ে সামরিক আইন জারির মাধ্যমে দেশ পরিচালনার চেষ্টা করলে অভিশংসিত হয়ে পদচ্যুত হন।
লাউড স্পিকার: এক দশকের পুরোনো কৌশল
উল্লেখ্য, সীমান্তবর্তী এই স্পিকারগুলোর মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া দীর্ঘদিন ধরে উত্তর কোরিয়ার অভ্যন্তরে খবর, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও দক্ষিণের জীবনযাত্রা সম্পর্কে বার্তা প্রচার করে আসছিল। পিয়ংইয়ং বরাবরই এই প্রচারকে 'যুদ্ধ ঘোষণা' হিসেবে বিবেচনা করে আসছে এবং একাধিকবার তা ধ্বংসের হুমকিও দিয়েছে।
২০১৮ সালে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরির অংশ হিসেবে এই প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত বছর জুনে উত্তর কোরিয়ার পাঠানো আবর্জনাভর্তি বেলুনের জবাবে আবার চালু করা হয়। এখন, পরিস্থিতির উন্নতির প্রেক্ষিতে সেগুলো আবার স্থগিত করা হলো।
তবে এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়েছে উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো। সিউলভিত্তিক 'ডেটাবেইস সেন্টার ফর নর্থ কোরিয়ান হিউম্যান রাইটস'-এর নির্বাহী পরিচালক হানা সং বলেন, "এই লাউডস্পিকারগুলো ছিল উত্তর কোরিয়ার সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার একমাত্র উপায়। এগুলো বন্ধ করে দিয়ে আমরা কিম জং উনের একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জাল আরও মজবুত করে দিচ্ছি।"
তিনি আরও বলেন, "নতুন সরকারের প্রথম পদক্ষেপগুলোর মধ্যে এটি থাকা একটি নেতিবাচক বার্তা বহন করে।"
অন্যদিকে সীমান্তবর্তী গ্যাংহওয়া কাউন্টির বাসিন্দারা এই সিদ্ধান্তে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। দিনের পর দিন দুই কোরিয়ার দিক থেকেই উচ্চস্বরে প্রচার শুনে তারা বিরক্ত ছিলেন। কাউন্টি প্রশাসনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, "আমরা আশা করি এই পদক্ষেপের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার শব্দ যুদ্ধও বন্ধ হবে এবং আমাদের মানুষজন তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে।"
দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়োনহাপ সংবাদ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সামরিক বাহিনী এই প্রচার কার্যক্রম স্থগিত করলেও একে সম্পূর্ণ বাতিল করেনি। এর ফলে ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে তা আবার চালুর সুযোগ রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, দিনের বেলায় এই স্পিকারগুলোর আওয়াজ প্রায় ১০ কিলোমিটার এবং রাতে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত পৌঁছায়।
উল্লেখ্য, ১৯৫৩ সালে কোরিয়ান যুদ্ধ স্থগিত হলেও উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে এখনো কোনো শান্তিচুক্তি হয়নি। ফলে উভয় দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার শাসনব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণের সঙ্গে পুনর্মিলনের আদর্শ স্থান পেয়েছিল। তবে গত বছর নেতা কিম জং উন আনুষ্ঠানিকভাবে সেই নীতিকে ত্যাগ করেন।
নতুন প্রেসিডেন্টের এই শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরিতার পর কিছুটা ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করতে পারবে কি না—তা এখন সময়ই বলে দেবে।
Mily