
ছবিঃ সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সদ্য প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া "One Big Beautiful Bill"-এ এমন একটি ধারা রয়েছে, যা বৈশ্বিক রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। এতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে ভারতে, কারণ দেশটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেমিট্যান্স গ্রহণকারী।
বিলের মূল বিষয়:
গত ২২ মে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে (২১৫–২১৪) এই বিলটি পাস হয়। এতে প্রস্তাব করা হয়েছে, বিদেশে টাকা পাঠানোর ওপর ৩.৫ শতাংশ হারে কর আরোপ। প্রাথমিকভাবে এই হার ৫ শতাংশ থাকলেও সমালোচনার মুখে তা কমানো হয়।
এই কর প্রবাসী কর্মীদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিদেশে পাঠানো অর্থের ওপর প্রযোজ্য হবে। এতে গ্রিন কার্ডধারী ও অস্থায়ী ভিসায় কর্মরত (যেমন H-1B) ব্যক্তিরাও অন্তর্ভুক্ত।
ইলন মাস্কের কড়া সমালোচনা:
বিলটি নিয়ে টেসলা ও স্পেসএক্স প্রধান ইলন মাস্ক বলেন, "আমি মনে করি, একটি বিল হয় বড় হতে পারে, না হয় সুন্দর। দুটো একসাথে সম্ভব নয়।" প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি স্পষ্ট হয়েছে এই মন্তব্যে।
ভারতের ওপর প্রভাব কতটা?
বিশ্বব্যাংক ও ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকের (RBI) তথ্যমতে, ২০২৪ সালে ভারত মোট \$১২৯ বিলিয়ন রেমিট্যান্স পেয়েছে। যা পাকিস্তান (\$৬৭ বিলিয়ন) ও বাংলাদেশের (\$৬৮ বিলিয়ন) সম্মিলিত বার্ষিক বাজেটের প্রায় সমান। এই টাকার বড় অংশই আসে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ভারতীয়দের কাছ থেকে।
এই নতুন কর বাস্তবায়ন হলে ভারতের কোটি কোটি পরিবারে আসা অর্থের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে।
গত এক দশকে ভারতের রেমিট্যান্স প্রবাহ ৫৭ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দেশটি মোট \$৯৮২ বিলিয়ন রেমিট্যান্স পেয়েছে।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যে রাজ্যগুলো:
* কেরালা
* মহারাষ্ট্র
* উত্তরপ্রদেশ
* বিহার
এই রাজ্যগুলোর গ্রামীণ পরিবার রেমিট্যান্স নির্ভর জীবনযাপন করে।
প্রবাসী ভারতীয়দের অবদান
১৯৯০ সালে যেখানে ভারতের আন্তর্জাতিক অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৬.৬ মিলিয়ন, ২০২৪ সালে তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮.৫ মিলিয়নে।
যদিও বড় অংশ এখনও উপসাগরীয় অঞ্চলে কাজ করে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোতেও এখন উল্লেখযোগ্য ভারতীয় কর্মী বাস করেন। এদের অনেকেই আইটি, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও প্রকৌশল খাতে উচ্চ আয়ের চাকরিতে রয়েছেন।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা রেমিট্যান্স ভারতের মোট রেমিট্যান্সের প্রায় ২৮ শতাংশ ছিল। ২০২০-২১ সালে এই হার ছিল ২৩.৪ শতাংশ।
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (GTRI) বলছে, "বিদেশি নাগরিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর মার্কিন কর ভারতের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ। এটি বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহে বড় ধাক্কা দিতে পারে।"
বিলটির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট:
এই কর ছাড়াও বিলটিতে আরও কিছু উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব রয়েছে, যার মাধ্যমে ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণ করতে চান:
* বার্ষিক আয় $১,৬০,০০০-এর নিচে হলে টিপ ও ওভারটাইম আয়ের ওপর ফেডারেল কর থাকবে না
* নবজাতকদের জন্য 'ট্রাম্প সেভিংস অ্যাকাউন্ট'—প্রথমে $১,০০০ জমা এবং বছরে $৫,০০০ পর্যন্ত জমার সুযোগ
* গান সাইলেন্সার ও ইনডোর ট্যানিংয়ের ওপর থাকা কর প্রত্যাহার
* স্বল্প আয়ের দম্পতিদের জন্য SALT ট্যাক্স ছাড় ৪ গুণ বাড়ানো ($১০,০০০ থেকে $৪০,০০০ পর্যন্ত)
* ইলেকট্রিক যান ও সৌর প্যানেলের মতো সবুজ শক্তি খাতে ট্যাক্স ছাড় বাতিল
* স্টুডেন্ট লোন প্রোগ্রামে ব্যাপক কাটছাঁট
এই বিলটি এখনও সিনেটে পাশ হয়নি, তবে তা ভারতের মতো দেশগুলোর জন্য অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে।
মুমু