ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গাজায় রক্ত, পশ্চিম তীরে কূটনৈতিক রুদ্ধদ্বার — কতটা নিচে নামবে ইসরায়েল?

প্রকাশিত: ১৫:১৭, ৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৫:১৯, ৩ জুন ২০২৫

গাজায় রক্ত, পশ্চিম তীরে কূটনৈতিক রুদ্ধদ্বার — কতটা নিচে নামবে ইসরায়েল?

ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি এক উচ্চপর্যায়ের আরব প্রতিনিধিদলকে পশ্চিম তীরে প্রবেশে বাধা দিয়ে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মহলের কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে। সৌদি আরব, মিসর, জর্ডান, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে রামাল্লায় সাক্ষাতের পরিকল্পনা করলেও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ শুক্রবার ঘোষণা দেয়, জর্ডান থেকে পশ্চিম তীরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান এ সিদ্ধান্তকে "চরমপন্থা ও শান্তির প্রতি অবজ্ঞা" হিসেবে অভিহিত করেন।

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও স্পষ্ট হলো, ফিলিস্তিনি ভূমির ওপর ইসরায়েলের দখলদারিত্ব কতটা নির্মম ও নৈতিকতাবিবর্জিত। বিশেষ করে গাজায় চলমান গণহত্যার প্রেক্ষাপটে এমন পদক্ষেপ আরও নিন্দনীয়।

গত মার্চে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি একতরফাভাবে ভেঙে গাজায় হামলা পুনরায় শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় জাবালিয়ার আল-আওয়াদা হাসপাতালকে ইসরায়েলি বাহিনী খালি করতে বাধ্য করে, যার ফলে উত্তর গাজায় কোনো কার্যকর হাসপাতাল আর অবশিষ্ট নেই। গত মাসে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে ইউরোপীয় কূটনৈতিক প্রতিনিধিদলের দিকে "হুঁশিয়ারি গুলি" ছোঁড়ার ঘটনাও বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হয়েছে।

এমন এক সময়, যখন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার চরমপন্থী জোট সঙ্গীরা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিকভাবে আরও বিচ্ছিন্ন করে ফেলছেন, তখনই সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে “যুদ্ধাপরাধ” বলে উল্লেখ করেন। তিনি হারেৎজ পত্রিকায় লিখেছেন, “এই যুদ্ধের কোনো লক্ষ্য, পরিকল্পনা বা সাফল্যের সম্ভাবনা নেই।”

সম্প্রতি জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জও বলেছেন, “নাগরিকদের ওপর যেভাবে হামলা বাড়ছে, তা আর হামাসবিরোধী সন্ত্রাসবাদ দমনের অজুহাতে বৈধতা দেওয়া যায় না।” একইসঙ্গে, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার কট্টর মন্তব্যগুলোকে “চরমপন্থী, ভয়ংকর ও অমানবিক” বলে উল্লেখ করেছেন।

বিশেষত, যখন ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ গাজা “পরিষ্কার” করে দেওয়ার কথা বলেন এবং ফিলিস্তিনিদের “তৃতীয় দেশে স্থানান্তর”-এর প্রস্তাব দেন, তখন তাঁদের যুদ্ধাপরাধী ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় না।

আরও বিস্ময়কর হলো, যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত কতজন হামাস সদস্য নিহত হয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারলেও, কত শিশু মারা গেছে (ইউনিসেফের মতে, ১৫ হাজারেরও বেশি) তা ১৭ বার প্রশ্ন করা সত্ত্বেও স্বীকার করেননি।

তবে শুধু মিডিয়া বা পডকাস্টেই এই লড়াই থেমে থাকবে না। ১৭–২০ জুন নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে সৌদি আরব ও ফ্রান্সের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিতব্য দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনই হতে যাচ্ছে বিশ্বের জন্য এক কঠিন নৈতিক পরীক্ষার মুহূর্ত। এখনই সময় ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার এবং একটি টেকসই সমাধানের পক্ষে দাঁড়ানোর।

সমালোচকদের উদ্দেশ্যে বলা যায়—দেরিতে হলেও শুরুটা জরুরি, বাস্তবায়ন কঠিন হলেও এটা হওয়া প্রয়োজন।

 

সূত্র: আরব নিউজ

আবির

×