
ছবিঃ সংগৃহীত
চিপ রপ্তানিতে মার্কিন নিয়ন্ত্রণ নীতিকে “বৈষম্যমূলক নিষেধাজ্ঞা” আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীন। দেশটির অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে একতরফাভাবে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের অপব্যবহার করছে, যা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সদ্য সম্পাদিত বাণিজ্য চুক্তির পরিপন্থী।
যুক্তরাষ্ট্রে চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেংইউ এনবিসি নিউজকে জানান, “সম্প্রতি চীন বারবার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সেমিকন্ডাক্টর খাতে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অপব্যবহার ও সংশ্লিষ্ট অনুচিত পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।”
এই মন্তব্য এসেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের পর, যেখানে তিনি অভিযোগ করেন যে, চীন দুই দেশের মধ্যে হওয়া বাণিজ্য চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ জেমিসন গ্রিয়ার CNBC-কে বলেন, “চীনারা চুক্তির বাস্তবায়ন ধীরে করছে।”
চলতি বছরের ১২ মে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ৯০ দিনের জন্য পারস্পরিক অধিকাংশ শুল্ক স্থগিত করতে সম্মত হয়। জেনেভায় অনুষ্ঠিত এক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
চীনা দূতাবাসের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আবারও আহ্বান জানাচ্ছি যেন তারা তাদের ভুল পদক্ষেপ অবিলম্বে সংশোধন করে, চীনের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে এবং জেনেভায় উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অর্জিত ঐকমত্যকে সম্মান করে।”
যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি চীনের বিরুদ্ধে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তার বিস্তারিত বিবৃতিতে উল্লেখ না থাকলেও, এর আগেই চীন অভিযোগ করেছিল— যুক্তরাষ্ট্র ‘রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের অপব্যবহার’ করছে। বিশেষ করে হুয়াওয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চিপ আমদানি ও ব্যবহারে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর এই অভিযোগ ওঠে।
২০১৯ সালে ট্রাম্প প্রশাসন হুয়াওয়ের ওপর প্রযুক্তি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যার ফলে কোম্পানিটি কয়েক বছর স্মার্টফোন ব্যবসা থেকে কার্যত ছিটকে পড়ে। এরপর হুয়াওয়ে নিজেদের প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনায় মার্কিন সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ছাড়াই চিপ তৈরি শুরু করে।
২০২২ সালে বাইডেন প্রশাসন NVIDIA ও AMD-এর তৈরি উন্নত AI চিপগুলোর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে প্রথম পদক্ষেপ নেয়। সম্প্রতি এই নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়েছে।
চলতি সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তর চিপ ডিজাইন সফটওয়্যার নির্মাতা Synopsys ও Cadence Design Systems-কে চীনকে পণ্য বিক্রি বন্ধের নির্দেশনা দেয়। একইসাথে NVIDIA-কে জানানো হয়, তারা যেন চীনে তাদের বিশেষভাবে নকশাকৃত H20 চিপ বিক্রি না করে। এই সিদ্ধান্তের ফলে NVIDIA জানিয়েছে, চলতি প্রান্তিকে তাদের ৮ বিলিয়ন ডলারের বিক্রি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ৪.৫ বিলিয়ন ডলারের চিপ স্টক পড়ে থাকবে যা পুনঃব্যবহারযোগ্য নয়।
NVIDIA-র সিইও জেনসেন হুয়াং বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগুলো এই ধারণার উপর ভিত্তি করে গঠিত যে চীন AI চিপ তৈরি করতে পারবে না। এই ধারণা বরাবরই সন্দেহজনক ছিল, আর এখন তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।”
ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি “AI diffusion rule” নামক বাইডেন প্রশাসনের একটি বিস্তৃত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা নীতি প্রত্যাহার করেছে, যার অধীনে অধিকাংশ দেশেই চিপ রপ্তানির ওপর কড়াকড়ি আসছিল। আগামী কয়েক মাসে একটি সহজতর নীতি প্রণয়ন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
ইমরান