
ছবি: সংগৃহীত
গাজা শহরের এক ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের পাদদেশে, দুর্গন্ধময় ময়লার স্তূপে মাছির গুঞ্জনের মাঝে মাথা গুঁজে খাদ্য খুঁজছেন এক নারী ও তার কন্যা। ভাঙা ভাঙা প্যাকেট, পোড়া চালে মিশে থাকা ধুলা, শুকিয়ে যাওয়া রুটির টুকরো কিংবা দুধের দাগ লেগে থাকা একফোঁটা চিজ — এই তাদের প্রতিদিনের আহারের সম্ভাব্য উৎস।
তাদের একজন, ইসলাম আবু তায়েমা, একটি ভেজা রুটির অংশ চেপে শুকনো দিকটি আলাদা করেন। সেটিই তার “আনাজ” — যেটি তিনি একটি স্কুলে নিয়ে যাবেন, যেখানে তিনি ও আরও শত শত পরিবার এখন আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানেই এই সংগ্রহ করা খাবার তিনি সেদ্ধ করে নিজের পাঁচ সন্তানের মুখে তুলে দেবেন।
“আমরা না খেয়ে মরছি। খেতে না পারলে তো মরেই যাব,” বলেন আবু তায়েমা, চোখে জলচাপা যন্ত্রণার গ্লানি।
তার ভাষায়, বাজারে যা কিছু অল্পস্বল্প খাবার পাওয়া যাচ্ছে, তার দাম আকাশছোঁয়া। তাদের পক্ষে তা কেনা অসম্ভব। বহুবার চ্যারিটি কিচেনে গিয়ে তিনি খালি হাতে ফিরেছেন — খাবার ফুরিয়ে যায়, অনেক আগেই।
“মানুষ নিজেরাই বাঁচতে পারছে না। কেউ কারো দিকে তাকানোর অবস্থায় নেই। তাই আবর্জনা ঘেঁটে খুঁজে নেওয়াই এখন বেশি বাস্তবসম্মত,” বলেন তিনি, গলায় কোনও অভিযোগ নেই—আছে কেবল এক নিঃশেষ বাস্তবতা।
গাজার ২৩ লাখ মানুষের ওপর তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি অবরোধ এভাবেই একে একে প্রতিটি পরিবারকে ঠেলে দিচ্ছে দুর্ভিক্ষের মুখে। একসময় যে শহরে জীবন ছিল, এখন সেখানে বেঁচে থাকাটাই সংগ্রাম—প্রতিটি খাবারের কণা যেন হয়ে উঠেছে বাঁচার শেষ আশ্রয়।
এই দৃশ্য শুধু একটি পরিবারের নয়, এটি গোটা গাজার প্রতিচ্ছবি। যেখানে শিশুদের জন্য খাবার বলতে আবর্জনার স্তূপে লুকিয়ে থাকা একমুঠো ভাত কিংবা শুকনো রুটির ধুলামাখা টুকরো।
এ যেন সভ্যতার সবচেয়ে গভীর ব্যর্থতার দলিল।
এসএফ